×

মুক্তচিন্তা

বন্যা মোকাবিলায় দরকার সমন্বিত নদী পরিকল্পনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:০৮ এএম

বর্জ্য অব্যবস্থাপনা, নদীভাঙন ও নদী খননের অভাবে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। যার দরুন অতিবৃষ্টি, ভারিবর্ষণ এবং উজানের দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীন থেকে ঢল আকারে নেমে আসা পানি খুব সহজেই নদীর কূল ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকাকে প্লাবিত করে। অপরদিকে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সমতল হওয়ায় এবং পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে নগরে বন্যা দেখা দেয়। এগুলো হলো বাংলাদেশের বন্যার প্রধান কারণ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯৫, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সালের বন্যা উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ১৯৭৪ সালের বন্যায় এত বেশি ক্ষতি হয়েছিল যে, সেটি বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওই বছর বন্যায় প্রায় ১ হাজার ৯৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে উপর্যুপরি চার দফা বন্যায় দেশের ৩৩টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৫১ জনের। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল অর্থাৎ ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড বন্যাকবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সমগ্র দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। বন্যা শুধু মানুষের জীবনকেই বিপর্যস্ত করে না, এর ফলে দেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বন্যায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাঘাট, মৎস্য ও খেত-খামার ডুবে যায়, জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। নদীপ্রধান অঞ্চলগুলোতে বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীভাঙনের ফলে নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। ফলে অনেক মানুষ গৃহ ও ভূমিহীন হয়ে পড়ে এবং শহরাভিমুখে অভিগমন করে। এই বন্যার ফলে প্রতি বছর নানা রকম ফসল নষ্ট হয়, ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে নানাবিধ রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা দেয়। এ বছর ইতোমধ্যে প্রায় ১৫টি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ৩০ আগস্ট নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলায় মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর আগে ১ জুলাই ও ২৫ আগস্ট ওই একই স্থানে ভাঙনে বন্যার সৃষ্টি হয়। পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শরীয়তপুরের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তিস্তার পানি বেড়ে ভাঙনের ফলে লালমনিরহাটের ২টি বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়। এসব বন্যাকবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, নদীভাঙনের ফলে নদীর পানি এলাকায় ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আবার ভাঙন এলাকায় বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হলেও নদীর পানি আবার বেড়ে গেলে ওসব স্থানে বা তার আশপাশে আবার ভাঙন দেখা দেয় ও বন্যার সৃষ্টি হয়। এভাবে ক্ষণস্থায়ী বাঁধ মেরামত করে কি বন্যা মোকাবিলা করা সম্ভব? শুধু বাঁধ মেরামত করে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। নদী যে হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ। বন্যা মোকাবিলা করতে হলে চাই সমন্বিত নদী পরিকল্পনা। দেশের নদ-নদীগুলোর গভীরতা ক্রমাগত কমছে। কারণ উজানে বিভিন্ন স্থাপনার কারণে প্রবাহের গতি যখন শ্লথ হয়, তখন সিল্ট বা বর্জ্য সমুদ্রে যাওয়ার আগে মাঝপথেই আটকে যায় এবং তলানি পড়ে ঘন ঘন চর পড়ে। এজন্য বর্ষা মৌসুমে একটু ভারি বৃষ্টিপাত হলেই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এক সময় তা তীরে আঘাত করতে থাকে এবং নদীতীর ভেঙে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করে। তাই বন্যা মোকাবিলা করতে হলে নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। এজন্য নিয়মিত চর অপসারণ ও নদী খনন করে নদীপ্রবাহ যাতে মাঝনদী বরাবর থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি ভাঙনপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়া এবং মজবুত করে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আবার যেসব এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, সেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাই বন্যা মোকাবিলায় শুধু বন্যাপ্রবণ অঞ্চল নয়, সমন্বিত নদী পরিকল্পনাই পারে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তি দিতে। মো. আল-মামুন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App