×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, ঝুঁকি মেলা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৩৩ এএম

দেড় বছর পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়েছেন। অবশ্য কয়েক দিন আগেই অনানুষ্ঠানিকভাবে ১২ তারিখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে এমন বক্তব্য শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার ব্যাপারে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেবে বলেও শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবশ্য আগামী মাসের মাঝামাঝিতে খোলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় হয়তো এ মাসের শেষের দিকে হলগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বিবেচনা করতে যাচ্ছে। মোটামুটি ধরে নেয়া যাচ্ছে যে, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শুরু হতে যাচ্ছে। করোনার কারণে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে আছে। এ বছরের শুরুতে করোনা সংক্রমণ কমে আসার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। কিন্তু ডেল্টা ঢেউ সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যায়। দীর্ঘ এই সময় শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন পাঠদান ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। গ্রামাঞ্চলের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। তবে বেশকিছু ধারার মাদ্রাসা, কেজি স্কুল ও কোচিং সেন্টার অনানুষ্ঠানিকভাবে খোলা ছিল। ফলে গত দেড় বছরে অতিমারির ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর সংসদ টিভি, অনলাইন এবং অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার মতো কয়েকটি উপায় উদ্ভাবন করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত রাখার নানা উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু এটি কতটা সফল হয়েছে তা আগামী দিনে হয়তো নিরূপণ করা যাবে। গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পড়ালেখা থেকে বেশি বিচ্ছিন্ন ছিল। শহরাঞ্চলে অবশ্য সচেতন অভিভাবকরা সন্তানদের অনলাইন, কোচিং ও ব্যক্তিগত তদারকিতে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন। সব অভিভাবক হয়তো তা করেননি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সন্তানদের লেখাপড়ার দায়দায়িত্ব নেয়ার আর্থিক সক্ষমতা রাখেনও না। দীর্ঘ এই সময়ে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘরে বসে থাকা, খেলাধুলার সুযোগ না পাওয়া, অনলাইনে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে নানা ধরনের আসক্তি ও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হয়েছে। অভিভাবকদের একটি বড় অংশই এই অবস্থার অবসানের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে সরকারের পক্ষে চার কোটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া মোটেও সম্ভব ছিল না। টিকাকরণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছিল। কিন্তু টিকার প্রাপ্তি ও সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি ছিল, যা কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না। অবশেষে শিক্ষক এবং ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের উদ্যোগ নিয়ে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়টি এখনো পৃথিবীর খুব সামান্য দেশেই সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশেও সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মোতাবেক ১২ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের দেশে এই বয়সের ১ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। সুতরাং তাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা সরকারকে সংগ্রহ করতে হবে। ফাইজার এবং মডার্না ছাড়া অন্য কোনো টিকা এ বয়সের শিশুদের জন্য এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। দুটি টিকাই বেশ দামি। সুতরাং আশা করা যাচ্ছে সরকার এদেরও টিকাদানের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী যেসব সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তা কমবেশি সবাই জানেন। দেশের বেশিরভাগ মানুষই শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন। বিশেষত শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আগ্রহভরে অপেক্ষা করছিলেন কারা আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া শুরু করবেন। এ বছর এবং আগামী বছর যারা এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে তারা সপ্তাহের ছয় দিনই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাবে। একইভাবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন করে যাওয়া শুরু করবে। পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ধীরে ধীরে শ্রেণিপাঠের দিন সপ্তাহে বাড়িয়ে দেয়া হবে। তবে বিষয়টি মোটেও খুব সহজ নয়। গ্রামাঞ্চলেও নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর ওপর সার্বক্ষণিক পরিবীক্ষণ করা বেশ কঠিন ব্যাপার। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ নেই, প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই আবার উপযুক্ত পরিচালনা পর্ষদও নেই। সুতরাং এ ধরনের পিছিয়ে পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, খেলাধুলার সুযোগ দেয়া এবং তাদের প্রতি সংবেদনশীল থেকে পড়াশোনায় সহযোগিতা প্রদান কতটা সম্ভব হবে সেটি গভীরভাবে দেখার বিষয়। এমনিতেই বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী দেড় বছরে নিয়মিত পঠনপাঠন এবং বই-পুস্তকের সঙ্গে থাকার অভ্যাস থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে। এদের আগামী দিনগুলোতে কীভাবে মানসিকভাবে সাহসী করে গড়ে তোলা যাবে, লেখাপড়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি, বুদ্ধির পরামর্শ দিয়ে তৈরি করা সম্ভব হবে- সেটি একটি শিক্ষাবিদ্যার দর্শনগত মৌলিক প্রশ্ন। শিক্ষকরা কীভাবে তাদের সাহসী করে তুলবেন, তাদের আস্থার সংকট দূর করবেন, সেই পরীক্ষা এখন শিক্ষকদের সম্মুখে হাজির হয়েছে। শিক্ষা প্রশাসনেও যারা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দেখভাল করছেন তাদের এখন শিক্ষকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার সময় এসেছে। তারা কি তা করতে প্রস্তুত আছেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ নিয়ে আমরা কতটা আশাবাদী হতে পারব? এ প্রসঙ্গে আর একটি বিষয় প্রাথমিক, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আনা প্রয়োজন মনে করছি। এই দুই স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এত দিন শিক্ষাবহির্ভূত নানা ধরনের দায়িত্ব দিয়ে ব্যস্ত রাখা হতো। ঘুরে ঘুরে শিক্ষকরা তথ্য সংগ্রহ করে উপজেলায় জমা দেয়ার কাজ করতেন। এর বেশিরভাগ কাজই কতটা নির্ভরযোগ্য এবং তথ্য সংগ্রহকারীদের নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের ওপর এটি বাড়তি চাপ এবং দায়িত্ব যা মোটেও এখন আর দেয়া উচিত হবে না। শিক্ষকদের বরং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি অধিকতর মনোনিবেশ করা, সময় দেয়া, প্রয়োজনে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কাজগুলোর দিকেই শিক্ষকদের বেশি মনোযোগী করা শিক্ষা প্রশাসনের উচিত। এখন যেহেতু নতুন একটি পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষাক্রম শুরু করতে যাচ্ছি তখন এটিকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী হয়তো আর শিক্ষাজীবনে ফিরে আসবে না। কিন্তু যারা আসবে কিংবা যাদের ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন তাদের পেছনে শিক্ষকদের বাড়তি দায়িত্ব নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা জানি না কত শতাংশ শিক্ষার্থী উৎসাহ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে আসবে। অভিভাবকদের মধ্যেই কত শতাংশ তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এখনো খুব সুখকর হয়নি। সামান্যতম স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন ঘটলে অনেক বড় ধরনের বিপর্যয় শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, আশপাশেও ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই শিক্ষক, অভিভাবক এবং পরিচালনা পরিষদকে দায়িত্ব নিতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনের যে সময়টি কাটাবে তাতে যেন তারা নিরাপদেই থাকতে পারে সেটির প্রতি তীব্র দৃষ্টি রাখবেন। একই সঙ্গে বাড়িতেও কারো সামান্যতম করোনা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানে না পাঠানোর ব্যাপারে সচেতন থাকা আবশ্যক। অনেক বিষয় সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে, যতœ নিতে হবে এবং ব্যত্যয় না ঘটার জন্য তৎপর থাকতে হবে। মাস্ক পরা নিয়ে নির্দেশনা মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। তবে কোনো শিক্ষার্থীর তাতে সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবেই তাকে সহযোগিতা করতে হবে। কোনোভাবেই রূঢ় আচরণ কারো পক্ষেই করা ঠিক হবে না। এতসব বিষয়কে সযতেœ লালন করে আমরা যদি স্কুল এবং উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখতে পারি, শিক্ষার্থীদের পাঠদান স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা রপ্ত করতে পারি, তাহলে নিশ্চয় আমরা অনেক কিছু উতরে যেতে পারব। কিন্তু এটি সবার আশাবাদ। তবে পদে পদে সতর্কতা অবলম্বনে স্খলন ঘটলে ঝুঁকি সামাল দেয়া কঠিন হবে। সে জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও কার্যক্রম ধরে রাখা নির্ভর করবে সব ধরনের ঝুঁকি সম্পর্কে শিক্ষক, অভিভাবক, পরিষদ এবং পরিবীক্ষণের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের নিষ্ঠার ওপর। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি অচিরেই হয়তো জানা যাবে। ছাত্রাবাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষার্থী চলার মতো সচেতনতা তৈরি হয়েছে কিনা তা হলে ওঠার পরই বোঝা যাবে। তাছাড়া পরীক্ষার শ্রেণিপাঠ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ, আড্ডা দেয়া এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার মতো নানা বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী দ্রুত পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইবে। এছাড়া গত দেড় বছরে শিক্ষা বছরের যে ক্ষতিটি হয়ে গেছে সেটিও পূরণ করে নিতে অনেকে চাইবেন। কিন্তু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-রাজনীতি একটি দীর্ঘদিনের অভ্যাস। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের পরিবেশকে মাঝে মাঝেই কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। জানি না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তাই এখন প্রাধান্য পাওয়া উচিত। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কিছুই কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সে ব্যাপারেও আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App