×

ক্রিকেট

বিদেশি নয় স্বদেশী কোচ চান মাশরাফি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:২৫ পিএম

দেশের ক্রিকেটের দিন বদলের নায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার হাত ধরেই ক্রিকেট বিশ্বের বুকে টাইগার বাহিনী জানান দিয়েছিল নতুন শক্তির আবির্ভাবের। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক বহুবার চিকিৎসকের ছুরি-কাচির নিচে পড়েও ইনজুরি জয় করে ফিরেছেন মাঠে। তবে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে দেখা যায়নি সাবেক অধিনায়ক মাশরাফিকে। মাঠের বাইরে থাকলেও জাতীয় দলের আলোচিত সব ইস্যুতে নিজের মতামত তুলে ধরে বোর্ডের দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন প্রশ্ন। এবার টাইগার দলের কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে দেয়া স্ট্যাটাসে বিদেশি কোচদের নিয়োগের বিষয়ে একহাত নিলেন মাশরাফি। যদিও বিদেশি কোচদের নিয়ে কোনো আপত্তি নেই তার। তবে কোচদের বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি এবং খেলোয়াড়দের নিয়ে বুঝতে পারার সক্ষমতা থাকা জরুরি বলে মনে করেন মাশরাফি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার রাসেল ডমিঙ্গো হাইপারফরম্যান্স ইউনিটের কোচ হিসেবে ইন্টারভিউ দিতে এসে হয়ে গেছেন জাতীয় দলের কোচ। মূলত ডমিঙ্গোর পরিকল্পনায় মুগ্ধ হয়েই তাকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় দলের জার্সিতে দীর্ঘসময় ধরে খেলেছেন মাশরাফি। ফলে বিদেশি কোচদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। সেই অভিজ্ঞতা যে ভালো ছিল না, সেটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করার মাধ্যমে জানিয়েছেন ওয়ানডের সফলতম অধিনায়ক। ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে দেয়া স্ট্যাটাসে মাশরাফি লিখেছেন, একটা কোচ যখন নিয়োগ দেয়া হয়, তার প্রসেস আসলে কী থাকে সেটা জানার খুব ইচ্ছা আমার। এ যাবৎকালে প্রায় ৯/১০ জন কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি যতটুকু দেখেছি প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারণ এক এক জনের কাজের ধরন এক এক রকম। কিন্তু সব সময় দেখেছি প্রত্যেকটি কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়, যা পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্য কেউ তাকে আর কিছুই বুঝাতে পারে না বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে আর ওই পছন্দের জন্য সে আবার দুজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে তাদের আর দেখতেই পারে না। একপর্যায়ে এমন জেদ শুরু করে যে প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিব, এমন কথা প্রকাশ্যেও বলতে শুনেছি কোচের মুখে। কোচের পছন্দ নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় হতেই পারে সেটা সব কোচেরই হয়। অন্যান্য দেশেও হয় এটাই স্বাভাবিক। তবে কখনো সেটা প্রকাশ্যে বুঝতে দেয় না, অনুমান করতে হয়। কারণ দলের সেরা ৩/৪ জন খেলোয়াড়ই শুধু ম্যাচ জেতায় না। আর জেতালেও আপনি একজনের জন্য আরেকজনকে ছোট করতে পারেন না। দর্শক বা সাংবাদিক অনেক কিছু লিখতেও পারে বলতেও পারে। যেটা একদম স্বাভাবিক ব্যাপার।

বাংলাদেশে প্রধান কোচের দায়িত্বে যারা আসেন, তাদের প্রোফাইল ভারি করা ছাড়া বাড়তি কিছুই করার থাকে না। কারো প্রতি কঠোর, আবার কারো জন্য নমনীয় এটা এক রকমের বৈষম্যতে রূপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে। একপর্যায়ে তারা আবার নিজেদের দেশে, না হলে আইপিএল বা আরো ভালো কোনো অফার পেয়ে চলে যাবে। কারণ এত দিন সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে। নিজের প্রোফাইলও ভারি করেছে। বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২/১৫ লাখ টাকা। আর আমাদের কোচগুলো না খেয়ে মরে। গালিও কোচরাই হজম করে। আর পরে ওনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে। আবার নতুন কোচ নতুন পরীক্ষা নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া-আসা।

কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে মাশরাফি লিখেছেন, ‘আবার আসি আমার প্রথম লাইনটায়, কোচ নিয়োগের সময় যে নতুন কোচের ইন্টারভিউ নেয়া হয়, সেখানে আসলে তাকে কি প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌও কোনো প্রশ্ন করা হয়? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয় তোমার কী করার ইচ্ছা? হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে। ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করে দারুণ- কোচ কি সুন্দর প্ল্যান, এর মতো কোচই হয় না। তবে আমার মনে হয় হাইপ্রোফাইল নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংস্কৃতি বুঝবে, খেলোয়াড়দের স্টাডি করবে, খেলোয়াড়দের নিবেদনকে সম্মান করবে এমন কোচকেই নিয়োগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন মাশরাফি, ‘আমার তো মনে হয় ভুল ওখানেই হয়ে যায়, কারণ আমরা মানুষকে বোঝাতে সব সময় হাইপ্রোফাইল কোচ খুঁজি, যা পরে আর কোনো কাজে আসে না। আমাদের প্রয়োজন আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিম্যাম খেলোয়াড়দের নিয়ে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নিয়ে আসা। তা না হলে ও তো বুঝবেই না একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কতদিন লেগেছে। বা অতীতে তাদের অবদান কী। একজন মোস্তাফিজ কীভাবে উঠে এসেছে। বারবার বলেছি আবারো বলছি দলের আগে কখনোই কোনো খেলোয়াড় হতে পারে না, ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে। তাই আমার মনে হয়- হাই প্রোফাইল নয়, আমাদের প্রয়োজন আমাদের কোচ, বাংলাদেশের কোচ। একদম নিজস্ব মতামত আপনাকে মানতে হবে তা বলিনি।

মাশরাফি বাংলাদেশের সফলতম পেস বোলারদের একজন। আক্রমণাত্মক এবং গতিময় বোলিং করে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন। যিনি কিনা তখন দলটির অস্থায়ী বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। রবার্টসের পরামর্শে মাশরাফিকে বাংলাদেশ এ-দলে নেয়া হয়। তবে বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেই তিনি জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ২০০১ সালে ২৩ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয়। এখন পর্যন্ত ২২০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ২৭০টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। টেস্টে বল হাতে ৩৬ ম্যাচে ৭৮ ও টি-টোয়েন্টিতে ৫৪ ম্যাচ খেলে ৪২টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন মাশরাফি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App