×

জাতীয়

খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:১৩ পিএম

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনে মতামত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তিনি কী মতামত দিয়েছেন তা জানাননি। মতামতসহ আবেদনপত্রাটি ফের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে জার্মানিতে রয়েছেন। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন। তিনি দেশে আসার পর খালেদা জিয়ার আবেদনের বিষয়টি গতি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকে আইনমন্ত্রী বলেন, মতামত দিয়ে আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।

মতামতে কী লিখেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মতামত আমি কী দিয়েছি, সেটা তো প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাবে। এখন তো আমি বলতে পারব না।

২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিশেষ বিবেচনায় জেল থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে বাড়ি ফেরেন খালেদা জিয়া। সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদা জিয়ার কারাভোগের মেয়াদ ছয় মাস স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষের কয়েক দিন আগে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমোদন ও  মুক্তির মেয়াদ ফের বাড়াতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে আবদেন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার।

পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আগের বারের মতো এবারের চিঠিতেও খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর কথা বলে তার মুক্তি চাওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, সাজা স্থগিতের পর শর্ত সাপেক্ষে মুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে চাইলে জেলে গিয়ে তাঁকে নতুন করে আবার আবেদন করতে হবে। রাজধানীর একটি হোটেলে ল রিপোর্টার্স ফোরাম এবং ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) যৌথভাবে ‘ইন–ডেপথ রিপোর্টিং অন লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেছিলেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা নিয়ে আলোচনায় সেসময় আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা সরকারের ক্ষমতা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা ব্যবহার করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এটা প্রয়োগ করার আগেই রুল অব বিজনেস অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত নিতে হয়। এমন একটা বিষয় নিয়ে তাঁকে মতামত দিতে হয়েছে। উদাহরণ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলার ক্ষেত্রে মতামত দিতে হয়েছে। ওনার আত্মীয়স্বজনের পক্ষ থেকে যখন আবেদন করা হলো, তখন ওনার সাজা স্থগিত করে ওনাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। তার মানে ওনার আত্মীয়দের যে আবেদনটা ছিল, সেটি কিন্তু নিষ্পত্তি হলো। ওনারা বলেছিলেন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেন। আমরা কিন্তু তাঁর অনুমতি দিইনি। বলেছি মুক্ত করতে পারি, দুটি শর্তে। আমরা দুটি শর্ত দিয়ে দিয়েছি, এই শর্ত মেনে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এখন পরের ধাপে তাঁরা বিদেশ যেতে অনুমতি চান। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে নিষ্পত্তি হওয়া আবেদন পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।’

তাহলে ওনাদের কী করতে হবে এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেসময় আরও বলেন, ‘তাঁদের আবার আবেদন করতে হবে। এখন আবার আবেদন করতে হলে আগের আবেদনটি বাতিল করে ওনাকে (খালেদা জিয়া) জেলখানায় গিয়ে পুনরায় আবেদন করতে হবে। কেননা আগের আবেদনটি ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।’

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে খালেদা জিয়ার। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছরের মতো কারাবন্দী ছিলেন তিনি। গত বছর মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সাজা স্থগিত করে তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এদিকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে গত ২৭ এপ্রিল রাতে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন বিএনপি প্রধানের চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। কদিন পরই তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

এ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে সরকারের কাছে আবেদন করে তার পরিবার। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফোনও করেছিলেন।

জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড ভোগ করছেন খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডিত হওয়ার পর তাকে নেওয়া হয় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। কয়েক দফায় সেখান থেকে এনে বিএসএমএমইউতে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত বছর বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্ত সাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App