সালমান শাহবিহীন ২৫ বছর
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০১ এএম
সালমান শাহ
সালমান শাহ
২৫ বছর আগের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার কালজয়ী নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে সমকালীন ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গনে সব থেকে বড় শূন্যতা তৈরি করে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। আজ এই মহানায়কের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার পারিবারিক নাম শহীদ চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। সালমান ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে।
বাংলা সিনেমার সেই সময়কার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাকে খুন করা হয়েছিল ২৫ বছরেও পুরোপুরি মীমাংসা হয়নি এ প্রশ্নের। যদিও চলতি বছরের শুরুর দিকে তৃতীয় দফা তদন্তেও শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। দুই যুগ আগের এই চলচ্চিত্র তারকা ‘আত্মহত্যাই করেছিলেন’ জানিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই।
সিআইডি, বিচার বিভাগীয়, র্যাবের পর এবার পিবিআই-এর তদন্ত প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে সালমান শাহের পরিবার। হত্যা হলেও, বার বার এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে দাবি করে, ন্যায়বিচারের জন্য তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের চলচ্চিত্র-জীবনে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সালমান শাহ ঢাকাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকে যারা বয়সে ছিলেন কিশোর-তরুণ, তাদের অনেকের হৃদয়েই সালমান শাহ বাংলাদেশের ‘সেরা রোমান্টিক অভিনেতা’ হয়ে থাকবেন। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন সালমান শাহ।
১৯৯৩ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। প্রথম ছবিই তাকে ঢালিউডের প্রথম শ্রেণির নায়ক করে তোলে। এরপর ক্রমেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন তিনি! শুটিংয়ে যাওয়ার সময় সালমান শাহের সঙ্গে ব্যক্তিগত একটি ব্রিফকেস থাকত সবসময়। যার ওপরে লেখা থাকত ‘সালমান, দ্য শ্যাডো অব ইমন’। তাতে থাকত সিডিউলের সব কাগজপত্র ও ডায়েরি। মানুষ ও নায়ক, সালমান শাহের দ্বৈত সত্তা। তার জন্ম, সাংস্কৃতিক পরিম-লে বেড়ে ওঠা, সামিরার সঙ্গে প্রেম-বিয়ে, শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক রহস্য, তারকা খ্যাতি, অতঃপর অমীমাংসিত মৃত্যু। প্রথম ছবির পর থেকে সালমানের ক্যারিয়ারে একের পর এক যোগ হতে থাকে সাফল্যের পালক। এ যেন এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। প্রথম ছবি থেকে শুরু করে শেষ ছবিটি পর্যন্ত সমানতালে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন সালমান শাহ।
বাংলা চলচ্চিত্রের সাফল্যের রাজপুত্র হিসেবেও সালমানকে অভিহিত করা হয়। প্রথম ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও পরে শাবনূরের সঙ্গেও একটি সফল জুটি গড়ে ওঠে সালমানের। এসব জুটির একেকটি ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে আছে। এ ছাড়া তার সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি। সালমান শুধু অভিনেতাই ছিলেন না, চলচ্চিত্রের নতুন ধারার প্রবর্তকও ছিলেন তিনি। একক কৃতিত্বে সামাজিক-অ্যাকশনধর্মী ও নিটোল প্রেমের ছবির নতুন একটি ধারার সঙ্গে সবাইকে পরিচিত করেছিলেন তিনি।