×

শিক্ষা

শিক্ষার রোডম্যাপ ঘোষণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৩৮ এএম

শিক্ষার রোডম্যাপ ঘোষণা

ফাইল ছবি

করোনা পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতি হওয়ায় দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধ থাকার পর আগামী রবিবার থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে সংক্রমণ বাড়লে আবারো বন্ধ করে দেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ মাস্ক ছাড়া ঢুকতে পারবে না। শুরুতে সব শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন হবে না। শুধু পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ এখনো ঠিক করা যায়নি। গতকাল রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুরুতে শুধু চলতি বছর এবং আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকিদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই হলো শিক্ষা ব্যবস্থাপনার রোডম্যাপ। প্রসঙ্গত, করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি আছে।

এদিকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীর ক্লাস আপাতত বন্ধই থাকছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সশরীরে চালু করা হবে। এখন প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি থেকে ক্লাস শুরু হবে। উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেনগুলোতে প্লে-গ্রুপ, নার্সারি ও কেজি নামে আলাদা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর আগে হাতে আছে এক সপ্তাহ সময়। এই সময়ের মধ্যে দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদান উপযোগী হবে কিনা সে নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন রয়েছে। তবে শিক্ষা প্রশাসন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি নিতে স্কুল কলেজগুলোকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করাসহ মোট ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার গাইড লাইন। এ গাইড লাইন অনুসরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে সব স্কুল-কলেজকে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী শিক্ষার রোডম্যাপ ঘোষণাকে ‘মন্দের ভালো’ বলে উল্লেখ করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ভোরের কাগজকে তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এতে তাদের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মধ্য দিয়ে ক্ষতি পোষাণোর সময় এসেছে। তবে স্কুল খুললেও ফ্রি-স্টাইলে চলাফেরা করা যাবে না। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে, দূরত্ব মানতে হবে। সব মিলিয়ে যে ১৯ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা কড়াকড়িভাবে মানলে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি যতœবান হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমছে, টিকার আওতা বাড়ছে- এ রকম পরিস্থিতিতে সবকিছুই খুলে দেয়া হয়েছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল। এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আরো কিছুদিন বন্ধ থাকলে আরো ক্ষতি হতো। তবে খুলে দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে অভিভাবকদের অনেকে বলেছেন, সংক্রমণের হার এখনো ৫ শতাংশের নিচে নামেনি। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে মানা হবে তা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা রয়েছে। এছাড়া বড় বড় প্রতিষ্ঠানে জুমে ক্লাস নেয়া হয়েছে। এতে সব শাখার শিক্ষার্থীরা একই সঙ্গে ক্লাসে যোগ দিয়েছে। এখন হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় আলাদা আলাদা ক্লাস কীভাবে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা বলা হলেও এখনো দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা যায়নি। বলা হয়েছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রস্তুত করতে হবে। গতকালও কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাটেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, স্কুলটির বেঞ্চ-ডেস্ক ভেঙে গেছে। অনেকগুলো খেয়েছে উঁইপোকায়। এগুলোকে রোদে শুকানো হচ্ছে।

ঢাকার খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে দেখা গেছে, মাঠে ঘাসের জঙ্গল হয়েছে। এগুলো কাটা শুরু হয়েছে মাত্র। আগামী এক সপ্তাহে কতটুকু প্রস্তুত করা যাবে- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল ভোরের কাগকে বলেন, স্কুল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কতগুলো শর্ত মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, স্কুলে দলবেঁধে ঢোকা এবং বেরুনো যাবে না। ক্লাসরুমের সব দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে। মাস্ক পরে ক্লাসে আসতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামাজিক দুরুত্ব মানতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এসব না করা গেলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।

তবে সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, এবার আমরা দেখছি সংক্রমণের হার দ্রুত কমছে। অভিজ্ঞতা বলছে, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সংক্রমণের হার কম থাকে। আর টিকা কার্যক্রম যে গতিতে চলছে সে বিবেচনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করব। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হতে হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মাস্ক পরা ছাড়া কেউ শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে পারবে না। শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। একেবারে কমবয়সি যারা, তাদের কোনো সংকট হচ্ছে কিনা- তা শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, ১৭ মাস যেহেতু শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ছিল না, তাই চার ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা করে ক্লাস নেয়া হবে। তারপর ধীরে ধীরে ক্লাসের সময়সূচি স্বাভাবিক করা হবে। বাকি সব শ্রেণিতে একদিন করে ক্লাস হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় পরামর্শক কমিটি আমরা সবাই যৌথভাবে এই পর্যবেক্ষণ কাজের মধ্যে থাকব। আমরা দেখব- কীভাবে এই পরিস্থিতিটা এগিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার জন্য আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বরকে আমরা নির্ধারণ করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, এ বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হয়তো কিছুদিন পরই শেষ হয়ে যাবে। এরপর নবম এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও প্রতিদিন ক্লাস হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মধ্য অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার একটি পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে আবারো উপাচার্যদের সঙ্গে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। তারা চাইলে এর আগেও খুলতে পারবেন।

পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষার জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি আছে। তারপরও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে না নেয়া গেলে তখন সেটা দেখা যাবে। তিনি বলেন, কারো বাড়িতে কারো মধ্যে যদি করোনা ভাইরাস উপসর্গ থাকে তার ক্লাসে আসার দরকার নেই। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি হবে না। তবে শরীরচর্চা হবে।

যাদের বয়স ১২ বছর তাদেরও ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, টিকা প্রাপ্তি ও কারিগরি ব্যবস্থাপনা শেষ হলে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। বেশিরভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। এছাড়া ১২ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, আগের ঘোষণা অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি মাধ্যমিক এবং ডিসেম্বরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App