×

সারাদেশ

ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় ৫ মাস কারাগারে ঝুমন দাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩৬ এএম

ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় ৫ মাস কারাগারে ঝুমন দাস

ঝুমন দাস

আমার ছেলের একটি বাচ্চা রয়েছে। তার দিকে চাইলে আমার বুক ফেটে যায়। মা জানেন সন্তানের ব্যথা। আমার ছেলের মুখ কোন দিন দেখতাম? কথাগুলো শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ঝুমন দাস আপনের মা নিবা রানী দাসের।

ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ঝুমন দাস আপন ৫ মাসের বেশি সময় কারাগারে রয়েছেন। পাঁচবার সুনামগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও একবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন আবেদন করেও নাকচ হয়েছে।

এদিকে ঝুমন দাস আপনের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা লুটপাটের মামলার আসামি স্বাধীন মেম্বারসহ অনেকের জামিন হয়ে গেছে।

ঝুমনের মা নিবা রানী দাস বলেন, সুনামগঞ্জ কোর্টে ৫ বার ও হাইকোর্টে একবার জামিন আবেদন করা হয়েছে। তবু আমার ছেলের জামিন হচ্ছে না। ছেলেকে দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। আমার ছেলে এমন কী অপরাধ করল যার জন্যে ৫ মাস ২০ দিন ধরে জেলে রাখা হয়েছে?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আগে থেকেই সমালোচনায় ছিলেন মামুনুল হক। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ অবস্থায় দিরাইয়ের সমাবেশে এসে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন তিনি।

সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস আপন। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকে তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের কিছু লোক ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

পরে রাতেই স্থানীয় বাজারে হেফাজতে ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে প্রশাসন। এ সময় ঝুমনকে আটকের খবর জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রশাসনের আহ্বানে তখন শান্ত থাকার আশ্বাস দেন উপস্থিত সবাই।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দিরে।

১৬ মার্চ আটকের পর ১৭ মার্চ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঝুমনকে আদালতে পাঠায় শাল্লা থানা পুলিশ। এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।

সুনামগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক বলেন, ঝুমন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। এজন্য তার জামিন হচ্ছে না। অপরদিকে যারা হামলা-লুটপাট করেছে তাদের জামিন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই- ঝুমনের যেন দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক শামস শামীম বললেন, ঝুমন দাস মামুনুল হকের সমালোচনা করেছে। মামুনুল হক সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এজন্য এখন সে জেলে আছে। অথচ তার সমালোচনা করায় ঝুমন দাস আপন জেলে বন্দি। বারবার জামিন আবেদন করা হলেও জামিন হচ্ছে না। রাষ্ট্র এখানে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। আমরা এ আচরণের নিন্দা জানাই।

ঝুমনের আইনজীবী দেবাংশু শেখর দাস বলেন, আমরা ঝুমনের জামিন চেয়েছি বারবার। কিন্তু জামিন হয়নি। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে রয়েছে। চলতি সপ্তাহে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App