×

স্বাস্থ্য

করোনা টিকার এসএমএস ও সনদ নিয়ে যত ভজঘট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৩৭ এএম

করোনা টিকার এসএমএস ও সনদ নিয়ে যত ভজঘট

ফাইল ছবি

করোনা প্রতিরোধী টিকা নেওয়া এবং এর সনদ প্রাপ্তির এসএমএস নিয়ে তৈরি হয়েছে ভজঘট অবস্থা। রেজিস্ট্রেশনের এক/দেড় মাস পেরিয়েও অনেকেই টিকা নেয়ার তারিখ জানানোর এসএমএস পাচ্ছেন না। টিকা নেওয়ার কয়েক মাস পরও সনদ তুলতে পারছেন না কেউ কেউ। আবার টিকা না নিয়েও কারো কারো নামে সনদ তৈরি হয়ে আছে। অনেকটাই যেন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড চলছে এসএমএস ও সনদ নিয়ে।

সাংবাদিক শরীফা বুলবুল করোনা প্রতিরোধী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন ৬ আগস্ট। কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল। এখনো তিনি টিকা কবে নিতে পারবেন সে সম্পর্কিত কোনো এসএমএস পাননি। ২২ জুলাই নিবন্ধন করেও এসএমএস পাননি গোপীবাগের বাসিন্দা মৌসুমী নাথ (৪২)। তার কেন্দ্র ছিল মুগদা হাসপাতাল। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসএমএস পাননি তারা।

জানা যায়, সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের নিবন্ধন, তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। আর এসএমএসের দায়িত্ব সারাদেশের বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রে যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের। তারাই ঠিক করেন এই কেন্দ্রে কত হাজার নিবন্ধন করা হয়েছে এবং কাদের টিকা দেয়ার জন্য এসএমএস দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে তালিকা ঠিক করে এসএমএস পাঠানো হয়। আর এই সুযোগকে পুঁজি করেই বিভিন্ন হাসপাতালে গড়ে উঠেছে অসাধু চক্র। অর্থের বিনিময়ে টিকার নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের এসএমএস পাইয়ে দিত এই চক্রের সদস্যরা। গত বুধবার রাতে রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে এমনই একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে সাংবাদিক মুকুল শাহারিয়ারের অভিজ্ঞতাটি ভিন্ন। গত ৮ মার্চ তিনি টিকার প্রথম ডোজ এবং ৮ মে মুগদা হাসপাতাল থেকে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। কিন্তু এখনো তিনি টিকার সনদ তুলতে পারছেন না। সুরক্ষা অ্যাপসে গিয়ে সনদ ডাউনলোড করতে গেলে সেখানে বলা হচ্ছে- তিনি কোনো টিকাই নেননি। অন্যদিকে সাংবাদিক এস এম নুরুজ্জামান টিকার কোনো ডোজ না নিয়েও টিকার সনদ পেয়ে গেছেন। তিনি জানান, টিকা নেয়ার জন্য দুবার এসএমএস এলেও ঢাকার বাইরে থাকায় এবং দ্বিতীয় ডোজের আগে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তিনি কোনো ডোজই নিতে পারেননি। তবে গত ২০ এপ্রিল নুরুজ্জামান একটি এসএমএস পান। সেখানে লেখা ছিল তার দুই ডোজ টিকা নেয়া সম্পন্ন হয়েছে। সুরক্ষা অ্যাপ থেকে টিকা সনদ গ্রহণ করতে পারবেন। এসএমএস পাবার পর তিনি সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে লগইন করে দেখেন তার টিকার সনদ তৈরি।

গত ৭ আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রোগ্রামার আব্দুল্লাহ রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বিশেষ প্রয়োজনে

এক ডোজ টিকা নেয়ার পর Surokkha.com.bd ওয়েবসাইট থেকে করোনা টিকা সনদ তোলা যাচ্ছে। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, কেউ যদি এক ডোজ টিকা নিয়ে অন্যকোনো দেশে যেতে চান সেই দেশ যদি অনুমতি দেয় তাহলে তিনি টিকা সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে যেতে পারবেন। ছাত্র এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী ও কূটনীতিকদের জন্যই মূলত এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার এসএমএস দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৩১ আগস্ট সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক ও কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক নির্দেশে বলা হয়, নিবন্ধিত বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক ও ১৮ বছর ঊর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসএমএস দিয়ে তাদের দ্রুত টিকা দিতে হবে। নিবন্ধিত গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের এসএমএস ছাড়াই (ওয়াক ইন ভিত্তিতে) নিবন্ধনকৃত নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে টিকা দিতে হবে। তবে গর্ভবতী নারীদের টিকা নেয়ার আগে অবশ্যই গর্ভধারণের প্রমাণ স্বরূপ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখাতে হবে এবং তাদের জন্য নির্ধারিত সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।

আর ২৩ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) এক জরুরি ঘোষণায় বলা হয়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নেয়া ব্যক্তিরা এসএমএস ছাড়াই দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারবেন। এমআইএসের পরিচালক ও এইচআইএস এন্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানান, দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য (নাগরিকদের) এসএমএস পাবার কথা। যদি নাও পায় তাহলেও কেন্দ্রে যাবে। টিকা কার্ডটা নিয়ে গিয়ে প্রথম ডোজ নিয়েছেন বললেই টিকাদান কর্মীরা তাকে টিকা দিয়ে দেবেন।

নিবন্ধন করার পরও নিবন্ধনকারীরা কেনো এসএমএস পাচ্ছেন না? এ প্রশ্নের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) এবং টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা ভোরের কাগজকে বলেন, টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। তাই নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ তার সুবিধা অনুযায়ী কয়েকটি নির্দিষ্ট হাসপাতালেকেই টিকা কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। ফলে ওই হাসপাতালগুলোতে নিবন্ধন বেশি হচ্ছে। যেসব হাসপাতালে নিবন্ধন বেশি হচ্ছে সেখান থেকে এসএমএস পেতে দেরি হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। যারা নিবন্ধন করেছেন তারা টিকা পাবেন।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, একটি কেন্দ্রের সক্ষমতার চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি নিবন্ধন করা হচ্ছে। তাই চাপ বাড়ছে। কোনো কোনো কেন্দ্রের সক্ষমতা ৩ থেকে ৪’শ। সেখানে নিবন্ধন করেছে ২০ থেকে ৩০ হাজার। তাদের সিরিয়াল আসতে দেরি হচ্ছে।

আর টিকার সনদ পেতে ভোগান্তি প্রসঙ্গে এমআইএস পরিচালক বলেন, দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর কেন্দ্র থেকে তথ্য আপডেট করলে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে গিয়ে তা ডাউনলোড করে নামানো যায়। কেউ যদি তা না পারেন বা কোনো সমস্যা হয় বুঝতে হবে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য আপডেট হয়নি। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রে গিয়ে তথ্য আপডেট করতে হবে।

আর টিকা না নিয়েও সনদ প্রাপ্তির বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এই সমস্যাটি আগে কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে। আমাদের নজরে তা এসেছে। সার্ভারে ত্রæটি কিংবা চাপের কারণে এ রকম হতে পারে। তবে এখন এই সমস্যা হচ্ছে বলে কোনো খবর পাইনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App