×

মুক্তচিন্তা

করোনার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:০৬ এএম

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণে বিগত সময়ের জনজীবনের বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে দেশের জনগণ বর্তমানে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে এই সংক্রমণ অনেকটা নিম্নগামী হলেও তবুও কে কখন আক্রান্ত হচ্ছে এই আতঙ্কে দিন কাটছে সবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবজাতি এ রকম সংকটের মুখোমুখি সম্ভবত আর হয়নি। মফস্বল এলাকায় গ্রামের জনগণের একটি বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, গ্রামে করোনা কোনো অবস্থায় ছোবল দিতে পারবে না। আর এ কারণে আমাদের দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ডেল্টা ভাইরাস তাণ্ডব চলাকালীন সময়ে গ্রামের অধিকাংশ জনগণের নাকে-মুখে কোনো মাস্ক পরিলক্ষিত হয়নি। দৈবাৎ ক্রমে কাউকে মাস্ক পরিধানরত অবস্থায় রাস্তায় দেখা গেলেও বাকিরা তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন যেন তিনি ভিন্ন গ্রহ থেকে এসেছেন। এমনকি দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে তারা যেভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন সংক্রমণের পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আশানুরূপ কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। একাধিক লোক একত্রে বসে যখন গল্প-গুজব করতেন তখন সেখানে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম-কানুন ছিল সেটিও যথাযথভাবে পালিত হয়নি। তখন সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ থাকলেও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো সীমিত পরিসরে গ্রামে পালন করতে গিয়ে একেক অনুষ্ঠানে কমপক্ষে ১০০ কিংবা ততোধিক মানুষের জনসমাগম ঘটিয়ে এক শ্রেণির মানুষ তখন গ্রামকে করোনার হটস্পটে পরিণত করেছিল। অন্যদিকে আরেকটি বিষয়ে যদি নজর দিই তবে দেখি যে, সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি হাতে নিলে ওই সময় দেখা যায় যে, যেখানে মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে প্রতিটি ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে দেখা গেছে, সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে তার চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ মেট্রোপলিটন কেন্দ্রগুলোতে যেখানে প্রতিদিন গড়ে আনুমানিক দুই হাজার লোক এই সেবা গ্রহণ করেছিল, সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এ সংখ্যা আনুমানিক ২০০ হবে কিনা তা সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এই বাস্তব চিত্রের দৃশ্য থেকে এটিই স্পষ্ট যে, গ্রামের লোকরা তখন এই টিকা গ্রহণ কর্মসূচিকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেনি বিধায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গ্রামে-গঞ্জেও করোনার ভয়াবহ দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছিল। এছাড়া অনেকের ভ্যাকসিন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবের কারণে গ্রামে তখন এই টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারণে স্থবিরতা বিরাজ করেছিল। ছোটকালে দেখতাম গৃহপালিত গরু যখন কোনো রোগে আক্রান্ত হতো তখন তাকে ওষুধ খাওয়ানোর জন্য গরুর বৈদ্যসহ তিন-চারজন মিলে দড়ি দিয়ে বেঁধে কেউ পা ধরত, কেউ মাথা ধরত আর সবশেষে গরুর বৈদ্য দুই চোয়াল ফাঁক করে মুখের ভেতর ওষুধ ঢেলে দিত। কিন্তু এত চেষ্টার পরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবে গরু যখন শেষ অবস্থায় এসে জিহ্বা বের করে দিয়ে মৃত্যুবরণ করত তখন কেমন জানি ছোট অবস্থায় আমার মনে হতো হয়তো বা ওষুধ খাওয়ার জন্য গরুটি মৃত্যুর সময় জিহ্বা বের করে দিয়েছিল। তাই বিগত দিনে দেশব্যাপী যখন গ্রামে-গঞ্জেও করোনার তীব্র ছোবল শুরু হয় তখন মনে হয় আমরাও ওই গরুর মতো শেষ অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। এখন সব টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড়, যা নিয়ে কর্তৃপক্ষকেও যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এটিকে আমি বিগত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক হিসেবে মনে করছি। তবে আগে থেকে যদি গ্রামের মানুষও মেট্রোপলিটন শহরের মতো সমানুপাতিক হারে টিকা গ্রহণ করত তবে বিগত সময়ে আমাদের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হয়তো বা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। এখন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে গিয়ে সরকার বর্তমানে আঠারোর্ধ্ব শিক্ষার্থীসহ দেশের সব নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকাদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা করোনা নিয়ন্ত্রণে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে আমি দেখতে পাই। তবে এই কর্মসূচিকে শতভাগ সাফল্যে আনার লক্ষ্যে বিকল্প হিসেবে জন্মনিবন্ধন সনদ কিংবা হাসপাতালের বার্থ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে নিবন্ধন সাপেক্ষে যদি এই টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেয়া যায় তবে তা আরো বেশি বেগবান হবে বলে আমি বিশ্বাস রাখি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে নষ্ট করেছি। এখন সবার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আর একবিন্দু সময় নষ্ট না করে করোনা নিয়ন্ত্রণে সবাই একযোগে এগিয়ে এসে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করি। সঞ্জয় চৌধুরী চট্টগ্রাম থেকে। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App