×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আহত ১৬, ১৪৪ ধারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৫৪ পিএম

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আহত ১৬, ১৪৪ ধারা

রবিবার পুলিশের লাঠি চার্জ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছোঁড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপে পথচারীসহ অন্তত ১৬জন আহত হয়েছে। ছবি: ভোরের কাগজ

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আহত ১৬, ১৪৪ ধারা

এ সময় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

নোয়াখালী জেলা শহরে আওয়ামী লীগের ত্রি-মূখী সমাবেশের ডাকে সমাবেশ সফল করতে শোডাউন চলাকালীন দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চার্জ ও গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। পুলিশের লাঠি চার্জ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছোঁড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপে পথচারীসহ অন্তত ১৬জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

রোববার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীর টাউন হল মোড় থেকে রশিদ কলোনী পর্যন্ত আবদুল মালেক উকিল প্রধান সড়কে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের একাধিক সুত্রে জানা গেছে, সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় শহরের টাউন হল মোড়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন। একই সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডাকেন স্থানীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী। অপর দিকে সকাল ১০ টায় নোয়াখালী পৌরসভার আগামী নির্বাচন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করেন মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল।

আওয়ামী লীগের ত্রি-মূখী সমাবেশ ও আলোচনা সভা সফল করতে রবিবার বিকেলে শহরের রশিদ কলোনী থেকে মোটরসাইকেল শোডাউন বের করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। মোটরসাইকেল শোডাউনটি শহরের বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে বাঁধা দেয় পুলিশ। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা পুলিশের সঙ্গে শাহীন অনুসারীদের ধাওয়ার চেষ্টা করলে শাহীন অনুসারীরা পাল্টা পুলিশ এবং একরাম অনুসারীদের ধাওয়া করলে পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠি চার্জ করে। এতে শাহীন অনুসারীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় বেশ কিছু যানবাহনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শহরের প্রবেশ পথে জটলা বাঁধে শত শত গাড়ী। ভোগান্তির শিকার হয় পথচারী ও ব্যবসায়ীরা।

[caption id="attachment_305944" align="aligncenter" width="1040"] এ সময় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।[/caption]

এ ঘটনায় আহত হয় পথচারী আলমগীর, জনি, ইসতিয়াক, নাসিমা বেগম, যুবলীগ কর্মী মোহন, ছাত্রলীগ নেতা রাজুসহ অন্তত ১১জন। এদিকে বিকাল ৫টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের কর্মী-সমর্থকরা সোমবারের পূর্ব ঘোষিত আলোচনা সভা ও র‌্যালি সফল করার লক্ষে শহরের প্রধান সড়কে শোডাউন বের করে। শোডাউনটি টাউন হল মোড়ে পৌঁছালে তাদের ওপর সাংসদ একরামের অনুসারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম ছিদ্দিকী রাজু, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিনসহ ৫জন আহত হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুনরায় শহরের পৌর বাজার থেকে রশিদ কলোনী প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে শিহাব উদ্দিন শাহীনের অনুসারীরা। এসময় ওসি শাহেদের প্রত্যহার দাবি করেন নেতাকর্মীরা।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, আমার নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত আলোচনা সভা ও র‌্যালি সফল করার লক্ষে বিকালে শোডাউন বের করে। শোউডানটি টাউন হল মোড়ে পৌঁছালে সাংসদ একরামের লোকজন ইটপাটকেল নিয়ে হামলা চালালে তার পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় সোমবার সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি উদ্যোগ নিই। ওই কর্মসূচি সফল করতে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা বিকেলে শহরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রাটি বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে সুধারাম থানার ওসি শাহেদের নেতৃত্বে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় ওসির সহযোগিতায় একরাম চৌধুরীর কিছু সমর্থক আমার কর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আমাদের কর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠি চার্জ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে। মুজিব শতবর্ষের শোভাযাত্রায় পুলিশ বাঁধা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাহীন। একই সঙ্গে তিনি ওসি শাহেদের অপসারণ দাবি করেন।

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৯ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে সোমবার সকালে জেলা শহরে আওয়ামী লীগের ত্রি-মূখী সমাবেশ, আলোচনা সভা ও র‌্যালি আহবান করায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নোয়াখালী পৌর এলাকায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। জেলা প্রশাসক ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সব ধরণের সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ ধারা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App