×

মুক্তচিন্তা

ই-কমার্সে এসএমই ব্যবসায়ে নতুন মোড়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:১০ এএম

করোনা ভাইরাস মানুষের জীবন নিয়ে যেমন ছিনিমিনি খেলছে তেমনি মানুষের জীবিকার ওপরেও চরম চপেটাঘাত করে চলেছে। সদ্য প্রকাশিত ‘দ্য হাঙ্গার ভাইরাস মাল্টিপ্লাইস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, বিশ্বে করোনায় রোজ যত মানুষ মারা যাচ্ছে, এর চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে ক্ষুধায়। করোনায় যেখানে মিনিটে ৭ জনের মৃত্যু হচ্ছে সেখানে ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে ১১ জন। এদিকে করোনা মহামারি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোকে স্বাভাবিক ব্যবসা পরিচালনার সুযোগই দিচ্ছে না। দিনের পর দিন লকডাউন থাকায় পণ্যের স্তূপ যেমন বেড়ে গেছে তেমনি অনেক পণ্য ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। কেউ কেউ তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে পেরেছে, আবার অনেকেই পারেনি। কেউ কেউ আবার নতুন পুঁজি ঢুকিয়ে ব্যবসাকে সচল রেখেছেন। নতুনভাবে কেনাবেচা করে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন তারা। ২০২০ সালের মার্চ থেকে যে দুর্যোগ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের আগস্ট মাসের শেষেও ফুরোয়নি সেটি, কবে শেষ হবে তা কেউ হলফ করে বলতে পারছেন না। ২০২০-এর দুর্যোগকালীন মুহূর্তে এপ্রিলের প্রথম দিকে এসএমই ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরে ২০২১ সালের জুন মাসে আবারো ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের গ্রাহকদের বিতরণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে। আগে যারা প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা পেয়েছেন এবার তারা আর পাবেন না। ফলে নতুন ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা এই ঋণ পাবেন। এছাড়াও ২০২০ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম সুবিধাও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো পেতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্যের যখন এই পরিস্থিতি তখনই কিছুটা আশার আলো নিয়ে এসেছে ই-কমার্স। তথ্যপ্রযুক্তি বা আইসিটির যুগে ব্যবসা পরিচালনা ও বিস্তারে ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশ-বিদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা পণ্য বাজারজাতকরণে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। লকডাউনে দোকান খোলা রেখে ব্যবসা পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। এমনিতেই বাজারজাতকরণে তারা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতেন। আবার করোনা মহামারি তাদের আরেক ধাপ পিছিয়ে দিল। তাই বাধ্য হয়েই তাদের নতুন পথের সন্ধানে নামতে হচ্ছে। আর এই নতুন পথ হচ্ছে ই-কমার্স, যা উদ্যোক্তাদের মনে আশা জাগাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা এই পথ বেছে নিয়ে সফলতার মুখ দেখেছেন। আমার সঙ্গে এমনি একজন উদ্যোক্তার কথা হয়েছে। যিনি সহজলভ্য ফেসবুককে তার বাজার হিসেবে নিয়েছে। প্রতিদিন তিনি তার পণ্য নিয়ে ফেসবুক লাইভে হাজির হন, যেমনটি বিক্রেতারা দোকানে সাজিয়ে রাখেন আর কাস্টমার এসে নিয়ে পরখ করে কিনে নিয়ে যান। ওনার ইনবক্সে সম্ভাব্য ক্রেতারা প্রশ্ন করেন আর উনি তার যথাযথ উত্তর দেন। পছন্দ হলে ক্রেতারা পণ্যের অর্ডার দেন। তিনি তা কুরিয়ারে ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে দেন। ই-কমার্স ব্যবহার করে তারা পেমেন্ট করতে পারেন। বিভিন্ন ব্যাংকের ই-কমার্সে টাকা পরিশোধের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রয়, পণ্যের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করার সুযোগ পান এবং উদ্যোক্তারা সহজেই বিশ্বব্যাপী ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ঘরে বসে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। করোনাকালে ই-কমার্স এবং পণ্য ও সেবার অনলাইন লেনদেনে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে এসএমইতে পরিবর্তনশীল ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এটা এসএমই খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে বলে এই খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এবং বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করছেন।

আনোয়ার ফারুক তালুকদার শামীম : ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App