×

মুক্তচিন্তা

করোনাকালে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশের ভূমিকা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৪৮ এএম

করোনাকালে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশের ভূমিকা
শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি রীতিমতো বিস্ময়কর। সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ (ডব্লিউবিটিআই) অনুযায়ী, শিশু বুকের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন সবার শীর্ষে। মাতৃদুগ্ধের বিষয়ে দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তবে মাতৃদুগ্ধের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়লেও মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে এখনো মানুষের মধ্যে উদাসীনতা রয়েছে। ফলে দেশে এখনো মায়েদের একটা বড় অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। সার্বিকভাবে জাতীয় স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে এ বিষয়ে এখনই নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে ১৯৯২ সাল থেকে সারাবিশ্ব ও বাংলাদেশে পালিত হয়ে আসছে। এবারও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১২০টি দেশে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ উদযাপন করেছে। বস্তুত শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এই দায়িত্ব শুধু মায়ের একার নয়। এমনিতেই পরিবারের সব কাজের বোঝাই থাকে নারীর কাঁধে। এছাড়া সংসার ও কর্মক্ষেত্রের চাপ সামলিয়ে শিশুর যতœ নেয়া কর্মজীবী নারীদের জন্য আরো কঠিন। তাই সংসারের অংশীদার হিসেবে শিশুর মাতৃদুগ্ধ প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা পুরুষের দায়িত্ব। এই সময়টাতে স্ত্রীকে সার্বক্ষণিক সমর্থন ও উৎসাহ দেয়া, যে কোনো প্রয়োজনে তাকে দ্রুত চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে সাহায্য করতে হবে স্বামীদের। এ বিষয়টি তুলে ধরেই এ বছর ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’-এর প্রতিপাদ্যে ‘শেয়ারড রেসপনসিবিলিটি’র প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। আসলে নবজাতকের জন্মের পর বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও শিশু ও মায়ের যতেœ বাড়তি মনোযোগ দেয়া উচিত। মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এ সময় পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে এবং শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে থেকে শুরু করে পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত কেবল মায়ের দুধই পান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এরপর সন্তানের বয়স দুই বছর হওয়া পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার হিসেবে ঘরে তৈরি খাবার চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তারা। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, নবজাতকের জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে মৃত্যুর হার কমে যায় ৩১ শতাংশ। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি আরো ১৩ শতাংশ কমে। সঠিকভাবে মাতৃদুগ্ধ পান শিশুকে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এছাড়া শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ ও প্রয়োজনীয় ডি হরমোন তৈরিতেও সাহায্য করে। শিশুর পুষ্টি চাহিদা মেটাতে যেসব উপাদান যেমন- অ্যামাইনো এসিড, প্রোটিন, শর্করা ইত্যাদি প্রয়োজন তা কেবল মায়ের দুধেই সুষমভাবে বিদ্যমান। মাতৃদুগ্ধ পান শিশুর দাঁত, হাড় ও অস্থির গঠন মজবুত করতে ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে সন্তানকে দুধপান করিয়ে মা নিজেও শারীরিক ও মানসিকভাবে উপকৃত হন বলে মনে করেন তারা। এর মাধ্যমে প্রসূতি মায়ের ওভারিয়ান ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আসার পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে শর্করা কমে আসে, অ্যানিমিয়াতে ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে, উদ্বেগ হ্রাস পায় ও ইতিবাচক ভাব তৈরি হয়। এ সময় প্রসূতির দেহে অক্সিটক্সিন ও প্রোল্যাকটিন নামের হরমোন তৈরি হয়, যেটি মায়েদের মানসিক চাপ কমাতে ও ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে। শিশুকে স্তন্যপান করানোর ফলে মায়ের রক্তচাপ কমে ও শারীরিক স্পর্শের ফলে তাদের মধ্যে বিশ্বাস, সমঝোতা ও আবেগীয় বন্ধন তৈরি হয়। মো. নাদিম হোসেন : লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App