×

সারাদেশ

মোহনপুরে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে শিশু-কিশোররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০০ এএম

মোহনপুরে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে শিশু-কিশোররা

গত বছর মোহনপুরে গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছবি: ভোরের কাগজ

রাজশাহীর মোহনপুরে কিশোর অপরাধরোধে বেশ সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। কিন্তু গত বছরের মার্চ মাসে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা অনলাইন গেমিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়েছে। জড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপরাধে। এতে বেশ চিন্তিত অভিভাবকরা। ফলে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে অভিভাবকদের সঙ্গে মতিবিনময়সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থানা পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়। যদিও স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি।

এছাড়া ‘জোরপূর্বক’ বাল্যবিয়েও হয়েছে স্কুলপড়ুয়া কিশোরীদের। এর প্রভাবে উপজেলাটিতে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সচেতন মহল দুশ্চিন্তায় থাকলেও পুলিশি তৎপরতায় বর্তমানে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে কিশোরদের অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত উপজেলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪২৬ জন। এরমধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ গ্রেপ্তার হন ৩০ জন। এছাড়া হত্যা ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তবে এ দেড় বছরে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল মাত্র ১৩ জন। তারমধ্যে শহরেরই আসামি ছিল তিনজন।

আর এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট ১৮১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া ২০১৯ সালে ৪৩০ জনকে গ্রেপ্তার হন পুলিশের হাতে। অপরাধ দমনে ৯টি কেন্দ্রে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার তিনটি কেন্দ্রে প্রতি সপ্তাহে মতবিনিময় করা হয় থানা পুলিশের পক্ষ থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার আমরাইল এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে ও কেশরহাট ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিমন ইসলাম আত্মহত্যা করে। মোটরসাইকেল কিনে দেয়াকে কেন্দ্র করে মায়ের ওপর অভিমান করেই আত্মহত্যা করে রিমন।

গত ১৫ এপ্রিল উপজেলার বিষহারা এলাকায় নিজ স্বামীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় কারিমা খাতুন নামে এক নাবালিকা মেয়েকে। হত্যার ঘটনার দু‘সপ্তাহ আগেই জোরপূর্বক বাল্যবিয়ে দেন তার পিতামাতা। এরপরই সংসারে শুরু হয় কলহ। পরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান কারিমা।

এর আগে গত বছরের ৩১ জুলাই উপজেলার নন্দনহাট এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি হয়ে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগে থাকা প্রায় ২০ হাজার টাকা হারান ফারুক হোসেন নামে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা।

উপজেলায় সেদিনই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ৩-৪ জনের সংঘবদ্ধ কিশোর চক্র অস্ত্র নিয়ে এমন কর্মকাণ্ড করে। পরে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের একজন মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। আসামিরা ছিল শহরের বাসিন্দা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৮১ টি। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ৪৩। এরমধ্যে ৩৬ টি এমপিও এবং বাকি ৭টি নন-এমপিও। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মে মাস থেকে শুরু হয় অনলাইনে ক্লাস।

তবে নন-এমপিও ৭টি বিদ্যালয়ে এখনো শুরু হয়নি অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম। অথচ উপজেলার ২৫টি মাদরাসার সবকটিতেই চলছে অনলাইনে ক্লাস। শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত অদক্ষতা ও ইন্টারনেট সংযোগের ধীরগতির ফলে ক্লাস শুরুই হয়নি নন-এমপিও ওই ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

এ বছর জোরালোভাবে অনলাইনে পাঠদানের নির্দেশনা দেয়া হলে ৩৬টি এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় ক্লাস। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস ভিডিও করে সেটি ইউটিউব ও ফেইসবুকে আপলোড করতেন। সেখান থেকে স্ব স্ব ক্লাসের শিক্ষার্থীরা দেখে নিতেন বিভিন্ন টপিকের লেকচার। তাতেও কাঙ্খিত লাভ হয়নি শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বৃদ্ধির ফলে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে থাকেন তারা।

তবে অপরাধ দমনে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম। আর অপরাধরোধে বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানওয়ার হোসেন।

এ বিষয়ে ওসি তৌহিদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা সর্বদা কাজ করছি অপরাধ দমনে। যিনিই অপরাধী হোক, কোনো ছাড় নয়। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কেউ ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তাদের অভিভাবকদের ডেকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। ফলে কিশোর অপরাধের সংখ্যাও কম।

এ ব্যাপারে ইউএনও সানওয়ার হোসেন জানান, উপজেলা প্রশাসনের মাসিক বৈঠকে কিশোর অপরাধ বা আইন শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। মতবিনিময় হয় অভিভাবকদের সঙ্গে। সকল অপরাধরোধে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

তবে অল্পবয়সী কিশোররা অপরাধ ও অনলাইন গেমিংয়ে আসক্ত হওয়ায় বেশ চিন্তিত অভিভাবকরা। অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ বিষয়ে মোহনপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দীন কবিরাজ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিফট ভিত্তিক শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

বছরের পর বছর এভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। বাকশিমইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুল-কলেজ খুলে দেয়াটাই ভাল। দীর্ঘদিন ক্লাসে না থাকার প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App