×

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীরের প্রবীণ নেতা সৈয়দ আলি গিলানি মারা গেছেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৪৫ পিএম

কাশ্মীরের প্রবীণ নেতা সৈয়দ আলি গিলানি মারা গেছেন

কাশ্মীরের নেতা সৈয়দ আলী গিলানি

কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবির পক্ষের নেতা সৈয়দ আলি গিলানি ৯২ বছর বয়সে তার শ্রীনগরের বাড়িতে মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় প্রচারণা চালানো এই নেতা গত ১১ বছরের অধিকাংশ সময়ই গৃহবন্দি ছিলেন। ভারত প্রশাসন তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে বিবেচনা করতো।

গিলানির মৃত্যুর পর উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কায় শ্রীনগরে নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়িয়েছে ভারত প্রশাসন। গিলানির বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে প্রতিরোধ তৈরি করেছে তারা। খবর বিবিসির।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে সেখানে ইন্টারনেট সেবা এবং ফোন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরে কারফিউ দেয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরে এই ধরণের পদক্ষেপ এর আগেও নেয়া হয়েছে। পুলিশ এই ধরণের পদক্ষেপকে সতর্কতামূলক হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে। তাদের ভাষ্যমতে, অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতায় উস্কানি দেয়া যেন সম্ভব না হয় তা নিশ্চিত করতে এই ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে গত ৩০ বছর ধরে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। ভারতের প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী আগ্রাসন বাড়ার কারণেই এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেক কাশ্মীরিই মনে করেন ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করায় কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী মানুষের বিরুদ্ধে ভারতীয় প্রশাসন আগ্রাসন চালাচ্ছে।

ভারতে গিলানি সম্পর্কে একাধিক মতবাদ চালু রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন গিলানি সবসময় কাশ্মীরের স্বাধীনতার কথা বললেও ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানের সাথে কাশ্মীরের যোগ দেয়া সমর্থন করতেন।

তার মৃত্যুতে ভারতের কাশ্মীরি নেতাদের পাশাপাশি পাকিস্তানি রাজনীতিবিদরাও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার টুইটারে গিলানিকে 'মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন এবং বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র 'কাশ্মীরি প্রতিরোধের প্রবাদ প্রতিম নেতা' গিলানির মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে গিলানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তার শেষকৃত্যে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের যোগ দিতে অনুমতি দেয় কাশ্মীরের পুলিশ।

গিলানির মৃত্যুর খবর তার বাড়ির কাছের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় এবং সেখান থেকে আহ্বান জানানো হয় যেন সবাই তার বাড়ির কাছে জড়ো হয়।

তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায় সকালে গিলানির বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় সশস্ত্র ভারতীয় সেনাদের উপস্থিতি ছিল এবং পুলিশ স্থানীয়দের ঘরের ভেতরে থাকার অনুরোধ করে।

গিলানি ১৫ বছরের বেশি সময় আইন প্রণেতা হিসেবে কাজ করেছেন। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল জামাত-এ-ইসলামির সাথে সংযুক্ত ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

গিলানি তার জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত হওয়ার প্রচারণা চালানো শুরু করার পর প্রায় ১০ বছর কারাগারে ছিলেন তিনি।

ভারতের সাথে কোনো ধরণের আলোচনা করার বিরোধী হিসেবে খ্যাতি ছিল গিলানির। কাশ্মীর ভারতের শাসনের অধীনে থাকবে কি না, তা নির্ধারণ করতে কোনো ধরণের আলোচনার আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষপাতি ছিলেন তিনি।

এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক সময় তার দলের তরুণ নেতাদের সাথে - যারা ভারতের সাথে আলোচনার পক্ষপাতি ছিলেন - দ্বন্দ্বও তৈরি হত তার। ২০২০ সালে গিলানিকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব 'নিশান-ও-পাকিস্তান' দেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App