×

মুক্তচিন্তা

অনৈতিহাসিক : দিনে দিনে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:২৫ এএম

অনৈতিহাসিক : দিনে দিনে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি

মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। দিনে দিনে বন্ধুহীন-স্বজনহীন হয়ে পড়েছি। কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বকে কবরস্থানে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে এই দেড় বছরে ২৬ হাজারের অধিক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে করোনা। বিশ্বব্যাপী অর্ধকোটি। এই তো গত ১৯ আগস্ট আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুটিকে তার বাড়ির পাশে নিকুঞ্জ কবরস্থানে দাফন করে এলাম। জাহিদুজ্জামান ফারুক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল, দৈনিক ইত্তেফাক, জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সঙ্গে চলা, কত স্মৃতি, কত আড্ডা- সবকিছুই আজ অতীত। হারিয়ে গেছে আরো অনেক বন্ধু। অনেক স্বজন, অনেক আপনজন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট মহাকালের ইতিহাসের মহানায়ক বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর আমরণ সহধর্মিণী সহযোদ্ধা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলো। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র ৮ বছরের শিশু শেখ রাসেলকেও ওরা রেহাই দেয়নি। গুলিতে গুলিতে তার ছোট্ট বক্ষটি ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল হায়েনারা। অপর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে এবং ছাত্র ও যুবসমাজের আইকন লিডার শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজুমনি এবং আরেক বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরানিয়াবাত ও তার পরিবারকে খুন করা হয়। খুনি এবং পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা এত নির্দয় নিষ্ঠুর যে, সেরনিয়াবাত সাহেবের চার বছরের নাতি সুকান্ত বাবুকেও হত্যা করে। একই খুনির দল চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার সমসাময়িক বিশে^র অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট বিদেশে থাকায় বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০ বার হামলা করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়, তাতে শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও দলীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৩ নেতাকর্মী নিহত এবং তিন শতাধিক গ্রেনেডের স্পিøন্টার বিদ্ধ হন। অনেকে আজো স্পিøন্টারের যন্ত্রণা বয়ে চলেছেন। মুক্তিযুদ্ধে হারালাম ৩০ লাখ, মা-বোন নির্যাতিত হলো পাঁচ লক্ষাধিক। বুদ্ধিজীবী তিন শতাধিক। এই মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। সমগ্র মানবজমিন দিশাহারা-অসহায়। একমাত্র রাব্বুল আলামিনই পারেন আমাদের এই বিপদমুক্ত করতে। আমিন। নিকুঞ্জে জাহিদুজ্জামান ফারুককে রেখে আমাদের আরেক কমন বন্ধু এনবিএলের সাবেক এমডি খায়রুল আলমসহ বেরিয়ে আসছিলাম। আলম তার ধানমন্ডির বাড়িতে আমি বনানীতে। গাড়িতে বসে ভাবছিলাম কত স্মৃতি আমাদের। ১৫ আগস্টের পর এই আমরাই প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করি, কখনো রাজপথে, কখনো পত্রিকার পাতায়। প্রেস ক্লাবের কোণের এক টেবিলে আমরা বসতাম। টেবিলটি আমি বানিয়েছিলাম। এখানে আমরা যারা বসতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা, আড্ডা দিতাম- তাদের মধ্যে আমাদের বন্ধু আতিউর রহমান আতিক, খন্দকার মোজাম্মেল হক গেদুচাচা, খন্দকার ফজলুর রহমান ফিউরি আজ আর নেই। সব নাম মনে পড়ছে না। এখন আমি, সামসুদ্দিন আহমেদ পেয়ারা, সৈয়দ ওয়ালিউল ইসলাম, ইকবাল চৌধুরী অর্থাৎ আমাদের বয়সি তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কাঁপানো বন্ধুরা, যারা কোভিডের ছোবল থেকে এখনো দূরে আছেন, এখনো কোণের টেবিলে আসেন। আসেন নাসিমুন আরা হক মিনু। উত্তর প্রজন্মের আরো অনেকে। জাহিদুজ্জামান ফারুক মহসীন হলের ৩৫৬নং কক্ষে, আমি ৩৬০নং-এর আবাসিক ছাত্র ছিলাম। ওর মধ্যে একটা আকর্ষণীয় বনেদিয়ানা ছিল। হলের সামনে থেকেই দুটি এতিম পথশিশুকে সঙ্গে করে রুমে নিয়ে এলো। আমরা ক্যান্টিন থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত আনতাম। খাওয়ার পর ওদের খাওয়াতাম। ওরা ঘুমাত আমাদের রুমের সামনের ফ্লোরে। মহসীন হলে যেদিন সাত ছাত্র খুন হলো সেদিন রাতেই ওরা কোথায় চলে গেছে। সকালে আমরা যখন হল ছেড়ে বেরিয়ে আসি তখন ওদের আর খুঁজে পাইনি। হল থেকে বেরিয়েও আমরা নারিন্দা শরৎগুপ্ত রোডে মনির হোসেনের বাড়িতে নিচতলায় ভাড়ায় উঠি। ভদ্রলোক তো প্রথম ব্যাচেলর বলে আমাদের ভাড়াই দেবেন না, তার ওপর আমার লম্বা চুল দেখে বললেন, ব্যাচেলরকে ভাড়া দেব না। আমরা চলে আসছিলাম, গেট পেরোতেই কাজের লোক দৌড়ে এসে বলল- সাহেব আপনাদের ডেকেছেন, ফিরে গেলাম। ‘দেখে তো ভদ্রলোকের সন্তান মনে হয়। বাপ-মা কেবল লেখাপড়া করায়, ছেলেটা ঢাকায় কোথায় থাকবে তা চিন্তা করে না। যান বাক্স-পেটরা নিয়ে আমার নিচতলায় উঠুন। যাবেন কোন চুলোয়’। এই ভদ্রলোকের কথা এখনো মনে পড়ে। ১৯৭৪ সালে আমরা ৩৫০ টাকা ভাড়ায় উঠি। দুর্ভিক্ষের পর যখন জিনিসপত্রের দাম কমে গেল তখন মনির সাহেব ঘর ভাড়া ৫০ টাকা কমিয়ে দিলেন। জিনিসপত্রের দাম কমলে বাড়িভাড়া কমে এমন নজির মনির সাহেব ছাড়া আর কারো জানা আছে বলে মনে হয় না। তারপর একদিন বিয়ে করে আমরা একে একে ওই বাড়ি ছেড়ে দিই। তারপরও আমি আর ফারুক পুরানা পল্টনে পাশাপাশি থাকতাম। কাজ ইত্তেফাকের পাশাপাশি টেবিলে। তারপরও মনির সাহেবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে ফারুকের বাসায় প্রায়ই আসতেন। কোনো মতলব নিয়ে নয়, এমনি এমনি। মনির সাহেবের বাড়ির রাস্তার ওপারে আমাদের ব্রেকফাস্ট হতো আবেদ খানের বাসায়। খালাম্মা ছিলেন বনেদি পরিবারের মেয়ে। যেমন চেহারায় অবয়বে গায়ের রঙে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের মনে হতো, তেমনি মিষ্টি ব্যবহার। দৈনিক ইত্তেফাকে আমাদের একটা চৌকস রিপোর্টিং টিম ছিল। আবেদ খান, খায়রুল আলম, জাহিদুজ্জামান ফারুক, হাসান শাহরিয়ার, শফিকুল কবির, ফটোগ্রাফারদের মধ্যে মোহাম্মদ আলম রশীদ তালুকদার- এ কয়েকজন আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আজ আমি আর আবেদ খান ছাড়া কেউ বেঁচে নেই। খাইরুল আমান ছিলেন কবিতার ক্যাসেট। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমানের কবিতা অনর্গল মুখস্থ বলে যেতেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমরা কীভাবে কলম প্রতিরোধ রচনা করব- তার অন্যতম পদ্ধতি ছিল এক একটি স্টোরিতে কয়েকবার বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা জয় বাংলা লিখে দিতাম। কখনো কোনো বক্তার মুখ দিয়ে। এভাবে একবার দুবার ছাপা হয়ে যেত। অবশ্য তখন নিউজ এন্ড এক্সিকিউটিভ এডিটর আসাফউদ্দৌলা এবং চিফ-সাব গোলাম সারওয়ার কখনো কখনো দেখে না দেখার ভান করতেন। তারাও আজ আর বেঁচে নেই। তবে স্বাধীনতার পর ইত্তেফাক ছিল রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। পঁচাত্তরের পর পত্রিকাটি কাশিম বাজার কুটিতে পরিণত হয়েছিল। দুই ভাই খুনি খন্দকার মোশতাকের বিশ্বস্ত অনুসারী ছিল। বড় ভাই সহযোগী। ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আবার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের প্রতিও দুর্বল ছিলেন। তার প্রধান কারণ মঞ্জু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগ করতেন। আবার এনএসএফের অনেকেই তার বন্ধু ছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনি থেকে রাজাকার-আলবদরদের অবাধ যাতায়াত ছিল ইত্তেফাকে। তবে খুনি রাজাকাররা কখনো দোতলার নিউজ সেকশনে আসতে সাহস পেত না। দোতলায় সবাই মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সমর্থক। অনেকের কাছে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা ইত্তেফাক জ্বালিয়ে দেয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের নেতৃত্বে ম্যানেজমেন্ট তখন পাকি জেনারেল রাও ফরমান আলীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করে। অঙ্কটা ১৮ লাখ বলে শুনেছি। বিজয়ের পর নতুন বিল্ডিং হয়, নতুন মেশিন আসে। দিনে দিনে ইত্তেফাক আড়াই হাজার থেকে ৩ লাখ সার্কুলেশনে পৌঁছে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বসতেন দোতলায় আনোয়ার হোসেন তিন তলায়। ওইসব অঞ্চলেই খুনি রাজাকারদের আনাগোনা হতো। যে জন্য কথাগুলো বললাম- ইত্তেফাকে একটি স্ট্রং ইউনিয়ন ছিল ডিইউজে। কখনো আবেদ খান, কখনো জাহিদুজ্জামান ফারুক, কখনো আমি এবং কখনো আবুল কালাম আজাদ নেতৃত্ব দিয়েছেন। একইভাবে ইত্তেফাকে শ্রমিক ইউনিয়ন কর্মচারী এসোসিয়েশন ছিল স্ট্রং। যখন দুই ভাইয়ের বিরোধে ইত্তেফাকের অন্তত তিনজন কর্মী নিহত হয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে, তখন আমরা তিন ইউনিয়ন যৌথভাবে প্রতিরোধ রচনা করে প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাই। ১৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন বঙ্গবন্ধু ভবনের মতো রক্তাক্ত। মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো ক্ষমতার হাতবদল চলছে। এমনি পর্যায়ে ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। একটা অন্ধকার সময় যাচ্ছিল। এরই মধ্যে সম্ভবত ৬ নভেম্বর আমি ও ফারুক প্রেস ক্লাব থেকে হেঁটে ইত্তেফাকে যাচ্ছিলাম। স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যেতে শুনলাম বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ফুটবল খেলা হচ্ছে। দুই বন্ধু ভিআইপি গ্যালারিতে ঢুকে পড়লাম। গ্যালারিগুলোতে অল্প কিছু দর্শক। খেলা শুরু হলো। অকস্মাৎ দুটি ছেলে দৌড়ে আমাদের সামনে দিয়ে চলে গেল হাতে দুটি লিফলেট গুঁজে দিয়ে। মনে হলো ওইগুলো জাসদের। ফারুক আর আমি বসলাম না। বসাটা নিরাপদ মনে হলো না। আমি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। কোনো মিছিল-মিটিং বাদ দিতাম না। কলাভবনে পুলিশের সঙ্গেও অনেক মারামারি করেছি। ফারুকও ছাত্রলীগ করত। তবে দিন-রাত ক্যাম্পাসে মিটিং-মিছিলে থাকত কম। বিশেষ বিশেষ দিনে অংশগ্রহণ করত। শৌখিন ছিল। একদিকে পশ্চিমা সাদা চামড়া তার ওপর পোশাকে-আশাকে ছিল একেবারেই আলাদা। কিন্তু এই ফারুকই যখন দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টার হলো, জাপানের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি কিয়োডোর বাংলাদেশ করস্পডেন্ট হলো তখন ভিন্ন ফারুককে দেখলাম। অসম্ভব পরিশ্রমী। তখনকার দিনে আজকের মতো টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট হয়নি। তাই কাগজ দেরিতে বের হতো। আমরা রাত ১টার আগে বেরোতে পারতাম না। কোনো কোনো দিন ২টা-আড়াইটা বেজে যেত। রোহিঙ্গা সংকট দেখা দিলে ফারুক কয়েক দিন পরপর কক্সবাজার চলে যেত কারেন্ট নিউজ সংগ্রহে। এমনকি বেশি দিনের কথা নয়, শরীরে ক্যান্সার বহন করেও ভাসানচরে চলে যায়। শরীরের কথা কাউকে জানায়নি। ফারুকের খুব শখ ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হওয়ার। যতবারই সে উদ্যোগ নিয়েছে ততবারই চক্রান্তের শিকার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমরা দুই ফোরামে বিভক্ত হয়ে যাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাঙালি জাতীয়তাবাদী এবং ওরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে রাজাকার-আলবদর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ফোরাম। আমাদের ফোরাম যৌথ নেতৃত্বে চলত; কিন্তু এক পর্যায়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী আমাদের ফোরামে ঢুকে পড়েন। আমাদের যৌথ নেতৃত্ব ভেঙে যায়। ইকবাল যাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন তাকেই নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতেন। সবার বেলায় ইকবালের উক্তি ছিল ‘বেশি বাড়তে দিতে নেই’। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরও প্রেস ক্লাবে তিনি নাকি উক্তি করেছিলেন- ‘এমনটি যে ঘটবে আগেই জানতাম, সবকিছুর একটা শেষ আছে।’ যার সামনে উক্তিটি করেছিল তিনি আতিয়ার রহমান আতিক, অল্প কিছুদিন আগে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। ইকবাল একদিন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টাও হন। তবে অল্প কিছুদিনের জন্য। বছর খানেকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তাকে চিনে ফেলে এবং আউট হয়ে যান। এখনো তা বিক্রি করছেন শোনা যায়। একবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমরা জাহিদুজ্জামান ফারুককে সভাপতি পদে নমিনেশন দিই। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা ডেকে সর্বসম্মতভাবে ফারুকের নমিনেশন ঘোষণা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আমাদের ফোরামের সিনিয়র নেতা মরহুম হাবিবুর রহমান মিলন। ইকবালও সে সভায় উপস্থিত ছিলেন। ফারুক যথারীতি ক্যাম্পেইন করে চলেছে। আমরাও তার পক্ষে ক্যাম্পেইন করছি। এমন পর্যায়ে নির্বাচনের দুদিন আগে হঠাৎ করে স্বপন সাহাকে প্রার্থী করে হাজির হন, যে অল্প কিছুদিন আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টারের দায়িত্ব এনজয় করে দেশে ফিরেছেন। নির্বাচনের দিন ইকবাল স্বপন সাহার ছবি বুকে নিয়ে ক্যাম্পেইন করেন। ফলে যা হওয়ার হয়েছে, দুজনই হেরেছে। দোষ দেয়া হলো ফারুককে। এক পর্যায়ে ইউনিয়নের মোল্লা জালাল এবং কুদ্দুস আফ্রাদকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করি এবং জামায়াত-বিএনপির পতন ঘটাই। পতনের মুহূর্তে ইকবাল সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে আসেন গোলাম সারওয়ার সভাপতি এবং রুহুল আমিন গাজী সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা রুখে দাঁড়াই এবং ইকবালকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিই। তার নমিনেশন বাতিল করে দিই। আমাকে প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হতে হয়। একবার এই ইকবাল কাদের মোল্লা আর কামারুজ্জামানকে প্রেস ক্লাবের সদস্য বানান। নাম দেন আমার। এরপর আমরা ফারুককে বাসসের প্রধান সম্পাদক ও এমডি পদের জন্য রাজি করাই। অর্থনীতি সাবজেক্টের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে অনার্স এমএ। বাংলা-ইংরেজি ভাষা জ্ঞানসহ অনেক লেখাপড়া জানা সাংবাদিক। তার বায়োডাটা আমরা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি। প্রেস ক্লাবের কোণের টেবিলটি এখনো আছে। জাহিদুজ্জামান ফারুক নেই, নেই আতিয়ার রহমান আতিক, খন্দকার মোজাম্মেল হক গেদুচাচা। আমি গত দেড় বছরে কয়েকবার মাত্র গেছি। এখন গেলে শামসুদ্দিন আহমদ পেয়ারা, হারুন হাবীব, ইকবাল চৌধুরী, মোল্লা জালাল, কুদ্দুস আফ্রাদ, বুলবুল, আজাদ, সাইফুল আলম, নাসিমুন আরা হক মিনু, শ্যামল দত্ত, পরের জেনারেশনের ফরাজী, জাফর ওয়াজেদ, আশরাফ আলী, সলিমুল্লাহ সেলিম, সূর্য, জলিল, শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা, এলিছ, পিয়ার বিশ্বাস, সবুজ, কামরুল, গোলাম মহিউদ্দিন খানসহ অনেকেই আসেন। আসবেন না আর ফারুক, আতিক, গেদুচাচারা। আসুন তাদের জন্য দোয়া করি। আমিন।

মুহম্মদ শফিকুর রহমান : এমপি, সাবেক সভাপতি, সা. সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App