×

আন্তর্জাতিক

তালেবানের হাতে বিপুল মার্কিন সমরাস্ত্র, অস্থিতিশীল হতে পারে এশিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:২৩ পিএম

তালেবানের হাতে বিপুল মার্কিন সমরাস্ত্র, অস্থিতিশীল হতে পারে এশিয়া

তালেবানের হাতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের হামভি ট্যংক। ফাইল ছবি

তালেবানের হাতে বিপুল মার্কিন সমরাস্ত্র, অস্থিতিশীল হতে পারে এশিয়া

ফাইল ছবি

তালেবানের হাতে বিপুল মার্কিন সমরাস্ত্র, অস্থিতিশীল হতে পারে এশিয়া

তালেবান। ফাইল ছবি

বহু শতাব্দী ধরেই শত্রুর অস্ত্র দখলে নেওয়া একটি আদর্শ গেরিলা কৌশল। রাজার খাদ্য ও অস্ত্রের রসদ দখল না করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে সফল হতে পারত না। অস্ত্র এবং অন্যান্য রসদ দখলে নেওয়া এক জিনিস; আর বিনা বাধায় শত্রুর হাত শক্তিশালী করা আরেক জিনিস।

কাবুলের রাজপথ দখলে নেওয়া তালেবান যোদ্ধাদের ছবিগুলোর দিকে তাকান। একটি বিষয় বেশ মনোযোগ কাড়বে: কারো কাছেই কালাশনিকভ নেই। বিদ্রোহী বা গেরিলা যোদ্ধাদের পরিচয় বহন করা সেই সিগনেচার অস্ত্র, একে-৪৭ মাত্র কয়েকজন তালেবানের হাতেই দেখা গেছে। এর মধ্যে হাতে তৈরি পাকিস্তানি সংস্করণ থেকে শুরু করে রাশিয়ান একে-১৯ এর আপডেট সংস্করণ পর্যন্ত একে-৪৭-এর অসংখ্য ধরন রয়েছে তাদের হাতে। আমেরিকান এম৪ কার্বাইনস এবং লেজার চশমা, ফ্ল্যাশলাইটের মতো ব্যয়বহুল অপটিক্সসহ অনেক গ্যাজেট যুক্ত এম১৬ রাইফেলই কাবুলের রাস্তায় অবস্থান নেওয়া বেশিরভাগ তালেবানের সবচেয়ে বেশি পছন্দের মনে হচ্ছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যে দৃশ্য দেখা যেতো তার সঙ্গে তুলনা করলে এ দৃশ্য একবারেই বেমানান।

এই ছোট অস্ত্রগুলির উত্স সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজাসাপ্টা: যুদ্ধের সময়ে স্রেফ লুটপাট করে পাওয়া। দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর উত্তর পাওয়া প্রয়োজন। প্রশ্নটি হলো- যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সময় ফেলে যাওয়া ব্যাপক পরিমাণ সামরিক সরঞ্জামের ভবিষ্যৎ পরিণাম কী হতে পারে, কিংবা তালেবানের অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আফগান সেনাদের হাত থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্রের পরিণতিই বা কেমন হতে পারে?

[caption id="attachment_305264" align="aligncenter" width="731"] তালেবানের হাতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের হামভি ট্যংক। ফাইল ছবি[/caption]

স্থলবেষ্টিত দেশ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে সমরাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো সহজ নয়, অর্থনৈতিকভাবেও ব্যয়বহুল। যাইহোক, এরই মধ্যে অনেক সমরাস্ত্রই সরানো হয়েছে। পাশাপাশি অস্ত্রের বড় একটা অংশই আফগান সরকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, যা ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়, শুধু তা-ই ফেলে যাওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ সামগ্রী আফগানিস্তানের বাইরে পাঠানোর চেয়ে বরং ধ্বংস করে দেওয়া অনেক কম ব্যয়বহুল। তবুও, অস্ত্র ফেলে যাওয়ার বিষয়টি এক বিষাক্ত ধারাবাহিকতার সূত্রপাত ঘটাবে। যা স্থানীয় জনগণকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগাবে। যেমনটি ঘটেছিল ইরাকে।

তবুও, সময়ের অভাব এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকে থাকার বিষয়ে অযৌক্তিক প্রত্যাশা শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ- পেন্টাগনকে বেশ অবাকই করেছেে। ‘মিলিটারি ওয়াস্ট: আনেক্সপেক্টেড কনসিকোয়েন্সেস অব পারমানেন্টলি ওয়ার রেডিনেস’ বইটির লেখক জোশুয়া রেনোর মতে, যুদ্ধ শেষ হলে একটি সামরিক বাহিনীর ছেড়ে যাওয়া এলাকায় অস্ত্র পুনরায় ছড়াতে থাকে। ফলে ক্ষুদ্র অস্ত্র বা অন্যান্য অস্ত্র গৃহযুদ্ধ বা অস্থিতিশীলতা উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

পেন্টাগনের একজন শীর্ষস্থানীয় সমর রসদ বিশেষজ্ঞের মতে, কী ধরনের এবং কী পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম ফেলে আসা হয়েছে তার কোন স্পষ্ট রেকর্ড নেই। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান আশংকা করেছিলেন, তালেবানরা হয়তো বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রকে এই জাতীয় জিনিস ফেরত নিতে দেবে না। যা আসলে এরই মধ্যে সৃষ্ট একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি নিয়ে প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। আফগানিস্তান থেকে সবচেয়ে কম ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের অন্যতম তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্তের একটি হলো, তালেবানদের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিত্যক্ত ও আফগান সমরাস্ত্রের ব্যবহার এবং বাণিজ্য থেকে যে ভবিষ্যত বিপর্যয়ের আশংকা তা যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ও কতটা হ্রাস করতে পারে।

যুদ্ধে লুটপাট করা সমরাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সাঁজোয়া হামভি ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টার। সামরিক স্কাউট ড্রোনও আছে। কাবুলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে আফগান বিমান বাহিনীর বেশিরভাগ যুদ্ধবিমান সঙ্গে নিয়ে আফগান পাইলটরা মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও আফগানিস্তানের বিভিন্ন বিমানবন্দরে কতগুলো বিমান ও হেলিকপ্টার রয়ে গেছে তা এখনও অজানা।

সোভিয়েত বিরোধী মুজাহিদীনরা সোভিয়েত ইউনিয়নকে উৎখাতের পর, ১৯৯০ সালের দিকেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনা এবং গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যেই সেই পথে একবার হেঁটেছিল। সেই সময়ে কাজটি ছিল অত্যাধুনিক ও বহনযোগ্য ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র- স্টিঙ্গার পুনরুদ্ধার করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তিশালী সশস্ত্র হামলায় ব্যবহৃত হতো হেলিকপ্টার মিল এমআই-২, যা বলতে গেলে একটি উড়ন্ত ট্যাঙ্ক। এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮০ দশকে দশকে স্টিঙ্গার দিয়ে মুজাহিদীনদের সশস্ত্র করেছিল।

সোভিয়েত পরাজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সেসব স্টিঙ্গার সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহার কিংবা বৈরী সরকারের হাতে পড়ার আশংকা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা জোরদার করতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির গোয়েন্দা গোষ্ঠীগুলো এগুলো ফেরত পেতে মরিয় হয়ে ওঠে। প্রতি ইউনিট এক লাখ ডলারে কিনে নিতো তারা। তাতে ব্যর্থ হলে যে কোন উপায়ে বহনযোগ্য এসব ক্ষেপণাস্ত্র ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠতো তারা। বহুল প্রশংসিত বই "গোস্ট ওয়ারস" এর লেখক স্টিভ কোল নিজের বইয়ে লিখেছেন, ১৯৯৬ সালে যখন তালেবানরা কাবুল দখল করে নেয়, তখন সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় সিআইএর দেওয়া ২৩০০ স্টিঙ্গারের মধ্যে অন্তত ৬০০টি নিখোঁজ ছিল। সেসময় তেহরান এসব লাপাত্তা স্টিঙ্গার পেতে মাঠে জোর প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে ওঠে।

স্টিঙ্গার ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রর কোনো যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে ভূপাতিত করতে পারে- সেসময় এমন আশংকা দেখা দেয়। ভাগ্য ভালো, শেষ পর্যন্ত সে আশংকা সত্য হয়নি। তালেবানরা ফেলে যাওয়া পরিত্যক্ত সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে বিমান বিধ্বংসী কোনো সন্ত্রাসী হামলাও করে উঠতে পারেনি।

এবং হ্যাঁ, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে।

তালেবানরা ক্ষিপ্রগতিতে অগ্রসর হওয়ার সময় থেকে যেসব অস্ত্রশস্ত্র নিজেদের দখলে পেয়েছে বর্তমানে তার পরিমাণ এবং গুণমান থেকে যৌক্তিভাবেই বলা যায়, আফগান সীমানার বাইরেও এর অনাকাঙ্ক্ষিত নেতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে। বৈরি সরকারগুলোর কাছে এবং কালোবাজারে এসব অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করে তালেবানরা তাদের রাজস্ব বাড়াতে পারে। এর মধ্য দিয়ে কেবল মধ্য এশিয়াতে নয়, এর বাইরেও অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে। ইতিমধ্যেই কাবুলে পৌছে যাওয়া হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো নতুন আশংকা তৈরি করেছে। তাদের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা মহাদেশ এবং এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াযতেও অস্ত্র পাচার হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

[caption id="attachment_305267" align="aligncenter" width="708"] ফাইল ছবি[/caption]

আশংকা হচ্ছে, এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা উস্কে দিতে ক্ষুদ্র অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে। কিংবা নাইট ভিশন গগলস এবং মিলিটারি-গ্রেড বিভিন্ন যোগাযোগ সরঞ্জাম ইসলামিক স্টেট সহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে যেতে পারে। এখন তালেবানদের হাতে আরো গুরুত্বপূর্ণ সমর সরঞ্জাম রয়েছে। যেমন হেলিকপ্টারের কথা ভাবা যাক। পাইলট এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে তালেবানের পক্ষে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ বা উড্ডয়ন সম্ভব নয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবেদনশীল বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী দেশগুলোর কাছে এসব সামরিক যান হস্তান্তর হতে পারে। এমন আগ্রহী দেশও কম নয়। যুদ্ধে লুটপাট করা সমরাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সাঁজোয়া হামভি ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টার। সামরিক স্কাউট ড্রোনও আছে। কাবুলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে আফগান বিমান বাহিনীর বেশিরভাগ যুদ্ধবিমান সঙ্গে নিয়ে আফগান পাইলটরা মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও আফগানিস্তানের বিভিন্ন বিমানবন্দরে কতগুলো বিমান ও হেলিকপ্টার রয়ে গেছে তা এখনও অজানা।

কাবুলের পতন, পূর্বাভাস অনুযায়ী, সাইগনের পতনের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। বেশিরভাগই দুই ঘটনায় মিল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে পলায়নের দিকে ইঙ্গিত করেন। যাইহোক, আরেকটি সাদৃশ্যও উল্লেখ করতে হয়। তা হলো- গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং কোলাবোরেটরদের তালিকা খুঁজে পেতে এআরভিএন এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামী পুলিশের আর্কাইভগুলিতে উত্তর ভিয়েতনামের রাজনৈতিক কমিসারদের ঝাঁপিয়ে পড়া। ক্লাউডে সংরক্ষিত বিগ ডাটা এবং ডাটাবেসের যুগে আচমকা মনে হতেই পারে, সার্ভার থেকে ডাটা মুছে ফেলা এবং হার্ড ড্রাইভ ভাঙা আসলে আর নিশ্ছিদ্র সমাধান নয়। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটিতে পরিত্যক্ত শত শত সামরিক বায়োমেট্রিক ডিভাইস, ডিজিটাল ব্রেডক্রাম হিসেবে রয়ে গেছে যা ডিজিটাল চিনচিহ্ন বহন করে। এই চিনচিহ্ন ব্যাবহার করে সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এবং সরকার সমর্থকদের খুঁজে বের করবে তালেবানরা, এবং তাদের টার্গেটও করবে। এমন ভয়ংকর আশংকাও রয়ে গেছে। হ্যান্ডহেল্ড ইন্টারএজেন্সি আইডেন্টিটি ডিটেকশন ইকুইপমেন্ট ( সংক্ষেপে HIIDE) বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে থেকে যেতে পারে। এ ডিভাইস দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শত্রুমিত্র চিহ্নিত করা যায়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট, আইরিস স্ক্যান এবং মুখের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত ডাটাবেসের ভিত্তিতে বায়োমেট্রিক রিডিংয়ের মাধ্যমে এটা করা হয়।

আধুনিক যন্ত্রপাতি হাতে পাওয়া তালেবানদের কথা মাথায় রেখে বলতেই হয়, যুদ্ধে লুটপাটের মাধ্যমে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্রে তালেবানদের যুদ্ধসামর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো মস্কো এবং বেইজিংয়ের সাথে তাদের দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার চাপে পড়তে পারে।

একইভাবে, কাবুলের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা কেবল তাদের মোবাইল ফোনে নয়, ইন্টারনেটেও তাদের কর্মকাণ্ডের ডিজিটাল ট্রেইল রেখে যায়। ডিজিটাল প্রমাণ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এই ট্রেইল ব্যবহার করা হতে পারে। তালেবান যখনই ক্ষমতা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের দখল নিশ্চিত করতে পারবে, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, তখনই এইসব তথ্যপ্রমাণ কাজে লাগাতে শুরু করবে। ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে কিছু করার মতো ক্ষমতা তালেবান অর্জন করতে পারে- এমন অনুমাকে অগ্রাহ্য করাটা বোকামি হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও তালেবানরা সহযোগিতা পেতে পারে। উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্রশস্ত্র চালানোর সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এ সহযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের লো-টেক দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো উঠে-পড়ে লাগতে পারে। তাদের এই প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এর সমর্থনে একটি উদাহরণ হতে পারে- ইরাকে ইরানপন্থী জঙ্গিরা। এ গোষ্ঠীটি মাত্র ২৬ ডলার মূল্যের অফ-দ্য-শেলফ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইউএস প্রিডেটর ড্রোন থেকে লাইভ ভিডিও ফিড উদ্ধারের ঘটনা ঘটায়। এ থেকে অনুমান করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনের অতন্দ্র দৃষ্টির প্রতি খেয়াল রাখার প্রয়োজনীয় তথ্য এ প্রক্রিয়ায় তারা হাতে পেয়েছিল।

[caption id="attachment_305286" align="aligncenter" width="660"] তালেবান। ফাইল ছবি[/caption]

জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে ড্রোন ভিডিও ফিড উদ্ধার হওয়ার অনেক ঝুঁকি আছে। এ ভিডিওর সঙ্গে যুক্ত থাকে কোডে লিখিত যোগাযোগের গোপন ভাষা। যাইহোক, লো-টেক কৌশলগত দক্ষতার উদাহরণ প্রচুর রয়েছে। এক দশক আগে থেকেই, তালেবানরা অফ-দ্য-শেল্ফ বাণিজ্যিক ড্রোন ব্যবহার করে আসছে। তা দিয়ে প্রচারণামূলক চলচ্চিত্রের শুটিং এবং আকাশে স্কাউটিংয়ের পাশাপাশি উড়তে সক্ষম কামিকাজি বোমাগুলিকেও গাইড করে থাকে তালেবানরা। এ হচ্ছে সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটের ধার করা একটি প্লেবুক। নজরদারির জন্য তৈরি বোয়িং স্ক্যান-ঈগল ড্রোন সম্প্রতি দখল করেছে তালেবান গোষ্ঠী। তাদের ক্রমবর্ধমান অস্ত্রাগারে এ ড্রোন যুক্ত হওয়ার ফলে তারা নতুন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এছাড়াও, এ দক্ষতা অর্জনের হলে এসবের কৌশলগত ব্যবহার বিকল্প বিকাশের দিকে অগ্রসর হতে পারে। যা একসময় খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

কাবুলের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা কেবল তাদের মোবাইল ফোনে নয়, ইন্টারনেটেও তাদের কর্মকাণ্ডের ডিজিটাল ট্রেইল রেখে যায়। ডিজিটাল প্রমাণ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এই ট্রেইল ব্যবহার করা হতে পারে। তালেবান যখনই ক্ষমতা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের দখল নিশ্চিত করতে পারবে, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, তখনই এইসব তথ্যপ্রমাণ কাজে লাগাতে শুরু করবে।

প্রপান্ডার কথা ভাবলে বলতে হয়, তালেবান যোদ্ধাদের আফগান শহরগুলোতে মার্কিন ওয়ার ট্রফি নিয়ে ধাবড়ে বেড়ানোর ভিডিওগুলি দেখলে বাইডেন প্রশাসনের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতেই ইচ্ছে হবে। তবে তালেবানরা আফগানিস্তানকে কিভাবে শাসন করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হামভি ট্যাংকের ওপর থেকে বাতাসে তাদের সাদা পতাকা ওড়ানোর প্রপাগান্ডাগত মূল্য আছে। তা অন্যান্য জিহাদি এবং উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে তালেবানের পথে হাঁটতে উৎসাহিত করবে। যাই হোক না কেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি হাতে পাওয়া তালেবানদের কথা মাথায় রেখে বলতেই হয়, যুদ্ধে লুটপাটের মাধ্যমে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্রে তালেবানদের যুদ্ধসামর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো মস্কো এবং বেইজিংয়ের সাথে তাদের দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার চাপে পড়তে পারে।

এক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় দেখা গেছে, সমসাময়িক সমর বিশেষজ্ঞ ভন ক্লজউইটজের পাশপাশি "আর্ট অফ ওয়ার" এর সুখ্যাত লেখক সান জু’র কথাও সমান তালে উদ্ধৃত করেছে পশ্চিমা সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট। স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সান জু’র সেই কথা- শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে, শত্রুকে জানা। এই জানার জন্য সম্ভবত ২০ বছরও যথেষ্ট ছিল না।

ভাষান্তর: রথো রাফি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App