×

মুক্তচিন্তা

তালেবানি উত্থান উপমহাদেশের জন্য বিপজ্জনক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০৭ এএম

আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান এই উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ সাধারণ আফগান নাগরিকদের অধিকার হরণ করে সেখানেই থেমে নেই ঘাতকদের দল, ভারত ও বাংলাদেশের মৌলবাদীদের উৎসাহিত করে চলেছে। তাই উভয় দেশের সরকার হিংসা বা তালেবান শাসনের বিরোধিতা করলেও কিছু মানুষ এই সুযোগে ফের ইসলামের নামে কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার উন্নয়নমুখী সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রও ফের সক্রিয়। মুখে শান্তির কথা বললেও সাধারণ আফগান মুসলিমদের ওপর, বিশেষ করে সেখানকার নারীদের ওপর যে ধরনের তালেবানি অত্যাচার সংঘটিত হচ্ছে, তা এককথায় মানবসভ্যতার পরিপন্থি। কিন্তু তারপরও কায়েমি স্বার্থে মৌলবাদীরা ফের সেখান থেকেই হিংসার রাজনীতি আমদানি করতে চাইছে ভারত ও বাংলাদেশে। এখনো অনেকে ভোলেননি ঢাকার রাজপথে তালেবানদের উত্থানের পর সেই সেøাগান, ‘আমরা সবাই হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগানিস্তান’। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারতেরও তালেবানি উত্থানে মৌলবাদীরা বেশ উৎসাহিত। সামাজিক গণমাধ্যমে তাদের উচ্ছ¡াস ধরা পড়ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আসাম রাজ্য থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ৩ জন মৌলানাও রয়েছেন। ভারতের জাতীয় সংসদের প্রবীণ সদস্য, সমাজবাদী পার্টির নেতা সাফিকুর রহমান বার্ক প্রকাশ্যে আফগানিস্তানের তালিবানি শাসনকে সমর্থন জানিয়েছেন। উত্তর প্রদেশের সম্বল থেকে নির্বাচিত বার্ক আফগানিস্তানে তালিবানদের লড়াইয়ের সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা টেনেছেন। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড তালেবান শাসনের ঘোরতর বিরোধী। কিন্তু বোর্ডের সচিব মৌলানা ওমরেইন মেহফুজ রহমানী এবং মুখপাত্র মৌলানা সাজ্জাদ নোমানি তালিবানের আফগানিস্তান দখলকে সমর্থন জানিয়েছেন। ভারত সরকার অবশ্য তালেবান সমর্থকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তালেবানদের সমর্থনে গলা ফাটাচ্ছে। প্রকাশ্যেই তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গলায় লোহার বেড়ি পরানোর হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলা হচ্ছে, বিশ্বের অঘোষিত সুপার পাওয়ার তালেবান আলকায়দা। মৌলবাদীরা বলছেন, ‘ইসলাম রক্তের ওপর দিয়ে ভেসে এসেছে। মা-বোনেরা সন্তান গর্ভে ধারণ করো মুজাহিদ বানানোর জন্য। সন্তানকে দুধ খাওয়াও জিহাদি তৈরি করার জন্য।’ নতুন করে শুরু হয়েছে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা। আর ততে মদদ দিচ্ছে বিএনপি। কারণ বিএনপি চিরকালই অশান্তি সৃষ্টির মাধ্যমেই ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিপস) সভাপতি মেজর জেনারেল এ এন এম মুনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ‘বাংলাদেশে উগ্রবাদ জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধের একটা সরাসরি সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশে উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাস করে- এমন বেশ কিছু যুবক আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কাজেই তালেবানের সঙ্গে বাংলাদেশি উগ্রবাদীদের যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা থাকবে।’ এই উগ্রবাদ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, ‘খুব কঠোর ও নিবিড় নজরদারিতে রাখতে হবে। সাইবার যোগাযোগের ওপর নতুন করে জোর দিতে হবে। আফগানিস্তান যাওয়ার পথগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।’ র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দাদের সঙ্গে র‌্যাব সমন্বয় করে কাজ করছে। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত সমশের মবিন চৌধুরী বলেছেন, ‘তালেবানের উত্থান কাশ্মিরে প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শত শত যুবক রয়েছে, যারা সবাই মুসলিম। স্বাভাবিকভাবে রোহিঙ্গারা তালেবানদের নিয়োগের তালিকায় অগ্রাধিকার পেতে পারে। এ নিয়ে আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, তালেবানের উত্থান ও প্রভাব নিয়ে চীনও চিন্তিত। চীনের যদি এ ধরনের ভয় থেকে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের আরো বেশি ভয়ে থাকা উচিত। পরিশেষে হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনের উক্তিটিও বিশেষ জরুরি। তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের আইএসআই ও সৌদি ওহাবি ধারার সংশ্লেষে গড় হয়েছিল তালেবান’। তাই পাকিস্তান ও চীনের মতো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি থেকেও বাংলাদেশের সতর্ক থাকা জরুরি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, দেশ যথেষ্ট সতর্ক। গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী আদর্শের প্রতি বাংলাদেশের আস্থার কথাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তালেবানদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখাতে নারাজ আওয়ামী লীগ সরকার। বরং কঠোর হাতে তালেবানদের বাংলাদেশি দোসরদের দমনকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নোমান হোসাইন : ফিল্যান্স সাংবাদিক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App