×

মুক্তচিন্তা

সরকারের কাজের মান ও স্বচ্ছতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২১, ০১:০২ এএম

সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আগেকার যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বহুগুণ এগিয়ে আছে। দেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দেশের বেশকিছু মেগা প্রকল্পসহ যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। যা দেশ বা বিদেশের মানুষের কাছেও দৃশ্যমান। গত এক দশকে লাখ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন সারাবিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশও স্থান করে নেবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় দুঃখের কথা হলো, দেশের জনগণের রাজস্বের টাকায় বাস্তবায়িত এসব অববাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি-অপচয় এখনো বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকমাত্রায় বিরূপ ধারণা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল মহলের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ পেলেও এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামে আত্রাই নদীর ওপর প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ গত জুন মাসে শেষ হওয়ার পর উদ্বোধনের আগেই সেতুর সংযোগ সড়কে ফাটল ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে এবং গার্ডারপোল ভেঙে পড়েছে। কয়েকদিন আগে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে বরিশালের উজিরপুরে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই ভেঙে নদীতে পড়ে যাওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়। সারাদেশে এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত ও অভিযোগ নিয়ে চলছে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি। প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বৃহত্তম অংশ ব্যয় করা হচ্ছে সড়ক ও সেতু বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন খাতে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ জেলা-উপজেলা, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত প্রকল্পের সর্বত্রই অনিয়ম-দুর্নীতি, মানহীনতা ও যথেচ্ছাচার দেখা যায়। শুধু রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্টই নয়, স্কুল-কলেজের ভবন, হাসপাতাল, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় শিবির থেকে শুরু করে সরকারের বিশেষ প্রকল্প হিসেবে আশ্রয়ণের মতো প্রকল্পেও এমন লুটপাট-অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদারদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা লুটপাটের সিন্ডিকেট দেশের সম্পদ ব্যবহার করে প্রত্যাশিত উন্নয়নের সুফল থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের বিশাল অংশই ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। নিম্নমানের সিমেন্ট, প্রয়োজনীয় থিকনেস, নিম্নমানের বিটুমিন-ইট-পাথর ও মাটি ভরাটের কাজে অনিয়মের কারণে কাজ শেষ হতে না হতেই ধসে পড়ছে রাস্তা-ব্রিজ, নদীতে বিলীন হচ্ছে স্কুল-কলেজসহ নানা স্থাপনা। নির্মাণে অহেতুক সময়ক্ষেপণ থেকে শুরু করে নিম্নমানের কাজে অল্পদিনে ভেঙে পড়ার মাশুল দিতে উপকারভোগীরা দুর্ভোগের শিকার হয়। বছরের পর বছর ধরে চলা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ বা জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতি-লুটপাট-অপচয় বেড়ে চলেছে। জনগণের রাজস্বের টাকার এমন অপচয় বিশ্বের আর কোথাও হয় না। সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে সবচেয়ে খারাপ মানের রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করা হয় বাংলাদেশে। দেশের সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি টাকায় জনগণের জন্য নির্মিত যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি দেশের স্ব-স্ব চলমান কাজের এলাকার জনগণকে সচেতন হতে হবে। আর যারা এসব ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের কেউ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের ও দেশের মানুষের স্বার্থে একটু নমনীয় হয়ে কাজ করা উচিত। ঠিকাদারের কর্ম এলাকায় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনদের বেশি বেশি তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। বেওয়ারিশভাবে ঠিকাদারের ওপর কাজ ছেড়ে দিয়ে রাখলে কখনো দুর্নীতি বন্ধ হবে না।

  ওসমান গনি : লেখক ও সাংবাদিক, কুমিল্লা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App