×

জাতীয়

মৃত্যুদণ্ডের আদেশে আসামিরা হেসে বলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২১, ০১:৫৪ পিএম

মৃত্যুদণ্ডের আদেশে আসামিরা হেসে বলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’

মঙ্গলবার আদালতে হাস্যোজ্জল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি। ছবি: ভোরের কাগজ

বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে বাসার ভিতর কুপিয়ে হত্যা মামলায় বিচারক ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলে হাসতে দেখা যায় আসামিদের।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালত আট আসামির মধ্যে ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডসহ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়া, আকরাম হোসেন, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ। এদের মধ্যে প্রথম দুইজন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া এ মামলার আরও দুই পতালক আসামি সাব্বিরুল হক চৌধুরী ও মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত।

এদিন রায় ঘোষণার সময় আটক চার আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর দুপুর ১২ টা ১০ মিনিটে এজলাসে বিচারক রায় ঘোষণার সময় তাদেরকে নিজেদের মধ্যে হাসা-হাসি করতে দেখা যায়।

এছাড়া রায় ঘোষণার পর তাদেরকে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময়ও হাসতে দেখা যায়। প্রিজন ভ্যানে উঠে এক আসামি হেসে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। রায়ে আমাদের কোনো অনুশোচনা নেই।

রায় ঘোষণার পর আসামিদের হাসির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তারা কতটা মারাত্মক। মৃত্যুদণ্ডের রায়ে কোন অনুশোচনা নেই। তারা অনেক হিংস্র স্বভাবের।

তবে রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা নির্দোষ। হত্যার কোন প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। আমরা হাইকোর্টে যাব।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিচারক মজিবুর রহমান মামলার রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেছিলেন।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডে জুলহাজের বাসায় ঢুকে তাকেসহ তার বন্ধু তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৩৫ বছর বয়সী জুলহাজ মান্নান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী) ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাতো ভাই।

এছাড়া তার ২৬ বছর বয়সী বন্ধু তনয় লোকনাট্য দলের কর্মী ছিলেন। তারা দুইজনেই দেশে সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছিলেন। এ কারণে উগ্রবাদীরা এ হত্যাকান্ড ঘটায় বলে জানা যায়। পরে হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন একটি হত্যা মামলা করেন।

এরপর দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১২ মে জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম। পরের বছর ১৯ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলায় বিভিন্ন সময়ে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করেন। যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। অন্যদিকে আইনজীবীরা আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তাদের খালাস চান।

উল্লেখ্য, আসামিদের মধ্যে সায়মন, আরাফাত, আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ কারাগারে আছেন। আর বাকি চার আসামি শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। এছাড়া জিয়া, মোজাম্মেল, আরাফাত ও আকরাম বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App