×

সম্পাদকীয়

সাইবার অপরাধ দমনে কারিগরি সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২১, ০৮:০২ এএম

দেশে প্রচলিত সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রুখতে পারছে না অপরাধীদের। তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ শনাক্তে দুর্বল জেনে অপরাধী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। করোনার এ সময়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগেই বেশি মামলা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রী, এমপি বা সরকারি দলের নেতাদের নিয়ে মিথ্যা সংবাদ ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, চিকিৎসা নিয়ে সমালোচনা করা, ত্রাণ চুরির মিথ্যা খবর পরিবেশন করা, ধর্মের অবমাননা, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি প্রভৃতি কারণে মামলা হচ্ছে। ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস ও লিঙ্ক শেয়ারের পাশাপাশি অপরাধীরা করোনা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও তৎপরতা রয়েছে। গতকাল ভোরের কাগজ পুলিশের সাইবার ইউনিটের বরাত দিয়ে জানায়, প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন হাজার সাইবার অপরাধের অভিযোগ মিলছে। মামলা হলে জড়িতরা আটকও হচ্ছে। তবে বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতির অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ ধরনের অভিযোগ আরো বেড়েছে। জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন থানা থেকে বিচারের জন্য সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট ২ হাজার ৬৪২টি মামলা আসে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৩৫টি মামলার আসামিদের সাজা হয়েছে। প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি জনমুখী হয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে মানুষকে। এটা যেমন সত্য এবং যুগের বাস্তবতা, তেমনি এর অপব্যবহারও হয়ে উঠছে মানুষের যন্ত্রণার অন্যতম কারণ। স্কুল-কলেজপড়–য়া অল্পবয়সি মেয়েরাই এসব প্রতারণার শিকার হচ্ছে বেশি। শুধু যে নারী নিগ্রহের লক্ষ্যেই সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও সাইবার অপরাধীরা ভয়ংকর অপরাধ করে চলেছে। মোবাইল ফোনে ভুয়া মেসেজ দিয়ে নম্বর হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট করার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এছাড়া আরেকটি বড় অপরাধ প্রবণতা হলো- ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো। আমরা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক প্রতারণা ও অপরাধের খবর পাচ্ছি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, এ সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা আরো বেশি, অনেক অপরাধের খবরই সংবাদ মাধ্যমে আসে না। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে এ রকম অপরাধের শিকার হয়েও থানা-পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ করছেন না। ফলে অনেক ঘটনাই বিচারের আওতায় আসছে না আর যেগুলো আসছে, সেগুলোরও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মনে রাখতে হবে, সাইবার অপরাধ যেমন বাড়ছে তেমনি তা দমনেও অপরাধ তদন্ত বাহিনীকে প্রশিক্ষিত হওয়া দরকার। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে এবং অপরাধীরা সে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ করে চলেছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যারা মাঠপর্যায়ে অপরাধ তদন্তে কাজ করছেন তাদেরও এ ব্যাপারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের নিরাপত্তা এবং সুনাম রক্ষার স্বার্থে, সাইবার অপরাধী শনাক্ত এবং দমনে প্রযুক্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার বিকল্প থাকতে পারে না। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে বলে আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App