×

মুক্তচিন্তা

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ও অন্তর্ধান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২১, ০৮:০৪ এএম

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ও অন্তর্ধান
ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান চার যুগে চারটি ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও বর্ণ পরিগ্রহ করে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। ভগবান কেন যুগে যুগে অবতীর্ণ হন সে সম্পর্কে তিনি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ৪/৮ নম্বর শ্লোকে বর্ণনা করেছেন- পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃৃতাম্/ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে। অর্থাৎ ‘সাধুদের রক্ষা করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।’ কলিযুগে ভগবান কখন আবির্ভূত হবেন সে সম্পর্কে শ্রীমদ্ভগবত এবং বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে- কলিযুগে ভগবান তিনটি ভিন্ন অবতারে আবির্ভূত হবেন। তিন অবতারের একজন হচ্ছেন ভগবান বুদ্ধদেব আরেকজন ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। এই দুই অবতারে ভগবান ইতোমধ্যে লীলা বিলাস সম্পূর্ণ করেছেন। কলিযুগের তৃতীয় অবতাররূপে ভগবান কল্কিদেব সম্ভল নামক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে কলিযুগের শেষাংশে আবির্ভূত হবেন। এখন এই তিন অবতারের কার্য কী হবে সেটা ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বর্ণনা করা আছে। বুদ্ধদেব সম্পর্কে ভাগবতে বলা হয়েছে- সন্মোহায় সুর-দ্বিষাম, ভগবান বুদ্ধদেব আবির্ভূত হবেন নাস্তিকদের দণ্ড দিয়ে সমাজে অহিংসা নীতি প্রতিষ্ঠা করতে। অহিংসা পরম ধর্ম। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কার্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি হবেন প্রেমের অবতার। তার কার্য দণ্ড দেয়া নয়, তিনি পাপি-তাপি সবার মাঝে কৃষ্ণ নামের প্রেমসুধা বিতরণ করবেন। ভগবানের শুদ্ধ নাম বিতরণে তিনি সর্বদা নিয়োজিত থাকবেন নাম রূপে কৃষ্ণ অবতার। কলিযুগের সর্বশেষ অবতার কল্কি। সেই কল্কি অবতারের কার্য তাহলে কী? কল্কি অবতারের আসার এখনো চার লাখ সাতাশ হাজার বছর বাকি আছে। কল্কি অবতারের কার্য সম্পর্কে ভাগবতে আছে তিনি দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করে পুনরায় সত্যযুগের সূচনা করবেন। ভগবানের অন্তর্ধান সম্পর্কিত বিষয়ে আমাদের অনেকেরই শাস্ত্রীয় সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। অনেকেই অনেক ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকেন। অনেকেই মনে করেন, জরা নামক ব্যাধের শরাঘাতে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ভগবান নিজেই গীতায় বলেছেন তিনি জন্মমৃত্যুর অতীত। অর্থাৎ তিনি অজ এবং অব্যয়। তাহলে শিকারির সামান্য আঘাতে কীভাবে তার মৃত্যু হয়? ভগবানের অন্তর্ধান রহস্য শ্রীমদ্ভবত, মহাভারত ও অন্যান্য প্রামাণিক শাস্ত্রীয় গ্রন্থের আলোকে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ছত্রিশ বছর পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিভিন্ন অশুভ লক্ষণ দেখে যাদবগণকে প্রভাসে সরস্বতী নদীর তীরে স্বস্ত্যয়নাদি সম্পাদন করতে আদেশ করেন। যাদবগণ কৃষ্ণের আদেশ অনুসারে প্রভাসে গমন করেন। সেখানে তারা উৎসবে মগ্ন হন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মায়াশক্তির দ্বারা মোহিত হয়ে মৈরেয় নামক মিষ্টি পানীয় পান করে সবাই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কলহ করে একে অপরকে হত্যা করে, যার বদৌলতে যাদবগণের কেউ আর জীবত ছিলেন না। এদিকে শ্রীবলরাম সমুদ্রতীরে গমন করে নিজের মধ্যে নিজেকে বিলীন করে নিত্যধামে প্রবেশ করেন। বড় ভাই বলরামের অন্তর্ধান দর্শন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শোকে মৌনভাবে ভূমিতে উপবেশন করেন। তারপর জরা নামক এক শিকারি দূর থেকে ভগবানের বাম পদতলকে হরিণ মনে করে তীর বিদ্ধ করে। শিকারি তৎক্ষণাৎ তার ভুল বুঝতে পেরে ভগবানের পদতলে পতিত হয়ে তার এহেন কার্যের জন্য দণ্ড গ্রহণের অনুরোধ করে। কিন্তু ভগবান শিকারিকে বলেন সে যে কার্য করেছে তা তার (ভগবানের) ইচ্ছায় সংঘটিত হয়েছে। এতে তার অনুশোচনা করার কোনো কারণ নেই এবং দণ্ড গ্রহণেরও প্রয়োজন নেই। আসলে ভগবান ভক্ত বৎসল। তার ভক্তের দোষ-ত্রæটি তিনি মার্জনা করেন। কিন্তু কেউ যদি তার ভক্তের চরণে অপরাধ করে তবে সেটি তিনি মার্জনা করেন না। অতঃপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই শিকারিকে ক্ষমা করে বৈকুণ্ঠ ধামে প্রেরণ করেন এবং তিনি তার নিত্যধাম গোলক বৃন্দাবনে প্রবেশ করেন। এভাবে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই জড় জগৎ থেকে অন্তর্ধানের মাধ্যমে মানব লীলা সংবরণ করেন। সচ্চিদানন্দ কৃষ্ণ দাস (সজল) কলাম লেখক, সিলেট। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App