×

অর্থনীতি

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২১, ০৫:৩২ পিএম

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি

ভাচুর্য়াল ডায়ালগে আলোচকরা। ছবি: ভোরের কাগজ

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বাড়ানো আবশ্যক বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। পাশাপাশি শুল্ক ও কর কাঠামোর যুগোপযোগীকরণ ও অটোমেশন, পণ্য উৎপাদন ও সাপ্লাইচেইন ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি; স্থানীয় বাজারের উন্নয়ন’ শীর্ষক ভাচুর্য়াল ডায়ালগে তারা এ আহ্বান জানান।

এ ডায়ালগে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি দাস।

ডায়ালগের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার কমপ্লায়েন্স, ব্রান্ডিং ও আইপিআর’র চ্যালেঞ্জ সহ অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু শুল্ক-অশুল্ক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে, যা আমাদের স্থানীয় বাজারকেও প্রভাবিত করবে। তিনি জানান, আমাদের জিডিপি’তে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও সেবা খাতের অবদান প্রায় ৬০%। এছাড়াও ফ্যাশনওয়্যার, ফুটওয়্যার ও ফার্মাসিউটিক্যাল প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এমতাবস্থায় শুল্ক ব্যবস্থাপনা, কর কাঠামো ও ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তনের বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় বাজারের উন্নয়ন, পণ্য উৎপাদন ও সাপ্লাইচেইন ইকোসিস্টেম ও সর্বোপরি সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করা ডিসিসিআই সভাপতি।

রিজওয়ান রাহমান স্থানীয় বাজারের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য নতুন বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের উপর জোরারোপ করেন। তিনি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আরো শক্তিশালী করার জন্য ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরো বাড়ানোর আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি দাস বলেন, এলডিসি পরর্বতী সময়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত সরাসরি ভর্তুকি নানাবিধ সুবিধাদি হ্রাস পাবে, এমতাবস্থায় রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণে আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে আরো অধিক হারে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির স্বাক্ষরের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আভ্যন্তরীন শিল্পায়ন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বাণিজ্য সচিব এলডিসি পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীদের ক্যাশ ইনসেনটিভ সহায়তা প্রদান করতে না পারলেও, অন্যান্য পন্থায় উদ্যোক্তাদের সহায়তা অব্যহাত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার প্রক্রিয়াসমূহ আরো সহজীকরণের উপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি জানান, সরকার দেশের ব্যবসা পরিচালনার সূচকে উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচেছ এবং এ সুযোগ গ্রহণ করে ব্যবসায়ীদের আরো বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, বাংলাদেশ ব্যাংক-এর নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন-এর সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)’র নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ, জাতীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমিতি (নাসিব)-এর সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভন, প্রাণ-আরএফএল গ্রæপ’র চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ’র অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাসার হাওলাদার এবং বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি (বাপী)-এর মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান প্রমুখ ডায়ালগে নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

এলডিসি হতে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের দক্ষতা ও পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তাব করেন এনবিআর’র সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক। দেশের পণ্য রপ্তানির বৃদ্ধির জন্য বন্দরসমূহের সক্ষমতা বাড়ানো, স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সহায়তা প্রদান, ভ্যাট প্রদানের প্রক্রিয়া আরো সহজীকরণ, অবকাঠামোখাতের উন্নয়ন, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি বন্ড সিস্টেম অটোমেশনের পাশাপশি নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক-এর নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কোভিড মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেশের উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে অনেকাংশেই সুদের কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা স্বল্পসুদে আর্থিক সহায়তা পাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি জানান, করোনা মহামারীর ফলে পর্যটন খাতের ক্ষতির পুষিয়ে নিতে ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন-এর সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী স্থানীয় বেকওয়ার্ড লিংকেজ খাতের উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং জাপান ও কোরিয়ার উদাহরণকে অনুসরণ করে দেশের কারিগরি শিক্ষার আধুনিকায়নের উপর জোরারোপ করেন।

র‌্যাপিড’র নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, স্থানীয় বাজার উন্নয়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিরসন এবং স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সময়কে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর জন্য একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরী। রপ্তানির বাজার উন্নয়নে শিল্পখাতের প্রয়োজনের নিরিখে জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো সহ নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও গবেষণা এবং উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে তিনি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

নাসিব-এর সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভন দেশীয় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বাজারে অভিগম্যতা ও ঋণ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সরকার গঠিত ‘হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ ব্যবহারের কার্যক্রম দ্রæততম সময়ে শুরু করার আহ্বান জানান। তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন ব্যয়ের উপর ভ্যাট আরোপ না করে, শুধুমাত্র মুনাফার উপর ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেন।

প্রাণ-আরএফএল গ্ৰুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, ব্যবসা পরিচালনার জন্য ইতিবাচক মনোভাব খুবই জরুরী। তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়লে দেশের স্থানীয় বাজারেরও উন্নয়ন হবে। ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ’র অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাসার হাওলাদার বাংলাদেশের অবকাঠামাসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের জন্য স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App