×

মুক্তচিন্তা

স্কুল খোলার আগে শিশুদের কাউন্সিলিং জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২১, ১২:০৪ এএম

দেড় বছর বন্ধ থাকার পর যে ধরনের শিক্ষা বিপর্যয় হয়েছে তাতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা কত শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছে এবং কন্যা শিশুরা কতজন বাল্যবিয়ের সম্মুখীন হয়েছে তার পরিসংখ্যান ভয় ধরানোর মতো হতে পারে! প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রচুর পরিমাণ মোবাইল গেম খেলা, চ্যাটের মাধ্যমে অপরাধে জড়িয়ে পড়া এবং মস্তিষ্ক বিকৃতি শিশুদের অনেক পিছিয়ে দেবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। স্কুল যদি এখনো খোলা হয় তারপরও কত শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনায় ফিরবে সে বিষয়টি খুব বেশিই শঙ্কার। জীবিকার তাগিদ, বাল্যবিয়ে, নেশা, কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়াসহ সব কিছু মিলেই আমাদের শিক্ষার ওপর একটি বড় প্রভাব পড়তে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের পড়ায় ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই শুনেছি একাধারে তাদের আর পড়তে ভালো লাগে না, পরীক্ষা দিতে ভালো লাগে না। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা নিজের অ্যাসাইনমেন্ট করিয়েছে অন্যের দ্বারা। মোবাইল আসক্তির কারণে মাথাব্যথা ও চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর। হতাশা থেকে সৃষ্টি হয়েছে একাকী থাকার প্রবণতা! নৈতিক বিপর্যয়ও হয়েছে অনেক। বিশেষ করে গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলে ছেলে শিক্ষার্থীরা বেশি বখে গিয়েছে। কিশোর অপরাধের মতো অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বেড়েছে হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা। খুব ছোট কোনো কারণকেও বড় করে শিশু-কিশোরদের এমন আত্মহত্যা নির্দেশ করে তাদের ভেতরকার হতাশার চিত্র। একদিকে পড়ায় ফিরতে হবে এবং অন্যদিকে নিজেদের হতাশার জায়গা- দুইয়ে মিলে শিশুদের মানসিক বাধা অনেক। এজন্যই শিক্ষার্থীদের পড়ায় ফেরানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো স্কুল খোলার আগে শিশুদের মধ্যে কাউন্সিলিং বাড়ানো দরকার। মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সবার সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ বাড়িয়ে স্কুলে আসার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে খোলা আকাশের নিচে কিছু দিন দূরত্ব মেনে অ্যাসেমব্লি ক্লাসের আয়োজন করে দেখার অনুমতি দিতে পারে। এতে করে স্কুলে আসার ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পাবে। যেহেতু অনেকদিন বিদ্যালয় বন্ধ ছিল সুতরাং এখন কারিগরি শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এরই সঙ্গে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া দরকার নৈতিকতা ও বোধের উন্মোচন ঘটানো। যদি নৈতিক শিক্ষা বাড়ানো না যায় তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে মানসিক স্বাস্থ্যে। সুতরাং এ বিষয়টিও চিন্তার মধ্যে আনতে হবে। ক্লাস চালুর পরপরই শিশুদের এমনভাবে শুরু করতে হবে যাতে করে তারা তাদের দুঃসহ অতীত ভুলে নতুনভাবে শুরু করতে পারে। পড়ার সঙ্গে বিনোদন, প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া, বুদ্ধির খেলা দিয়ে শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক হতাশা কাটানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রতিদিন সকালে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দেয়া যেতে পারে একটি করে চকোলেটও! এতে করে তাদের মানসিক চাপ কমবে ও তারা নতুন করে ভাবতে শিখবে। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের নিয়ে ভাবনাটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি। এমন দুঃসহ বিস্মৃত অবস্থা আমরা কেউ না চাইলেও যে সময়টি কাটাতে বাধ্য হয়েছি তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে বের হতে হলে চিন্তার প্রগাঢ়তাও দরকার খুব। আশা করি এ ব্যাপারে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ভাববে।

সাঈদ চৌধুরী : শ্রীপুর, গাজীপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App