×

সারাদেশ

বাবুই পাখির কলরবে মুখরিত লোকনাথ সেবাশ্রম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২১, ০৮:১৯ পিএম

বাবুই পাখির কলরবে মুখরিত লোকনাথ সেবাশ্রম

আখাউড়া পৌরশহরের শান্তিবন লোকনাথ সেবাশ্রম মহাশ্মশানের বাবুই পাখির বাসা

“বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহা সুখে অট্টলিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তাই? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।”

কবি রজনীকান্ত সেনের বাবুই পাখির সেই দৃষ্টিনন্দন বাসা এক সময় শহর কিংবা গ্রামের উঁচু তালগাছে দেখা যেত। সেই মনোমুগ্ধকর বাসা দেখে চোখ জুড়াতো। কিন্তু সময়ের বিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতার সেই বাবুই পাখির বাসা।

শুধু বাবুই পাখিই নয়। প্রায় সব ধরনের পাখিই আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আর হারিয়ে যাওয়ার এই দুঃসময়ে বাবুই পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের শান্তিবন লোকনাথ সেবাশ্রম মহাশ্মশান।

সেবাশ্রমের দুই উঁচু তাল গাছে প্রকৃতির অপরূপ শিল্পের কারিগড় বাবুই পাখির অসংখ্য বাসা বাতাসে দুলছে। চোখ জুড়ানো ও মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখে প্রকৃতি প্রেমিকদের মন জুড়িয়ে যায়। তাইতো বার বার ছুটে আসেন সেবাশ্রমে।

আখাউড়া লোকনাথ সেবাশ্রম ও শান্তিবন মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির সভাপতি হীরালাল সাহা জানান, এখানকার পরিবেশটা খুবই শান্ত বলে আশ্রমের এই দুই তাল গাছ বাবুই পাখির নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে। সেবাশ্রমে যেসব ভক্তকুল আসেন তারা বাবুই পাখি আর প্রকৃতির এই সৌন্দর্য় উপভোগ করেন।

সেবাশ্রমের সেবায়িত মহারাজ আশিষ কুমার ঘোষ জানান, একটা সময় গাছ-গাছালিতে পাখিদের কলরবে আশ্রম এলাকা মুখরিত থাকতো। আগের সেই কলরব এখন নেই বললেই চলে। তবে দুটি তাল গাছে বাবুই পাখির অসংখ্য বাসা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে তারা বাসা তৈরি করে বসবাস করছে।

আমরা এই পাখিগুলোকে সেবাশ্রম ও শ্মশানের বাসিন্দা বলেই মনে করি। এখানে এই পাখিদের বিচরণ ও কলরব সেবাশ্রমে আসা ভক্তকুলও উপভোগ করে। পৌরশহরের রাধানগরের বাসিন্দা আশিষ বিশ্বাস বলেন, প্রশান্তির খোঁজে এখানে প্রায় সময়ই ছুটে আসি। তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ও বিচরণ খুবই আনন্দ দেয়।

পৌরশহরের কলেজ পাড়ার বাসিন্দা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন জানান, বৃক্ষ নিধন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না।

শ্মশানের এই জায়গাটার অবস্থান শহরে হলেও নিরিবিলি ও সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজ করে। আমার মনে হয় পাখিরা এখানে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করে। এখানে আসলে আমার অনেক ভালো সময় কাটে।

গ্রামাঞ্চলে এই পাখি তাঁতি পাখি, বাবুই, বাউই নামেও বেশ পরিচিত। কেউ কেউ আদর করে বাবুই পাখিকে প্রকৌশলী পাখি বলেও ডাকে। বাবুই পাখি বেশ দৃষ্টিনন্দন পাখি। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল।

তবে আকৃতি খুবই সুন্দর। কয়েক প্রজাতির বাবুই পাখি একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে। খড়, কচিপাতা ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে তারা বাসা তৈরি করে। তাই বাবুই পাখিকে শৈল্পিক ইঞ্জিনিয়ার বলা যায়। নিজের ঘর সাজাতে তাদের কোনো জুড়ি নেই।

এরা দলবদ্ধ আর কলোনী করে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। পুরুষ প্রজাতির বাবুই পাখি বেশ উজ্জল রঙের হয়। আবার কিছু প্রজাতি তাদের প্রজনন মৌসুমে বর্ণের ভিন্নতা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই দেখা যায়। দেশী বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। বাবুই পাখির বাসা দেখতে উল্টানো কলসির মতো। বাসা বানানোর জন্য এই পাখি খুবই পরিশ্রম করে।

ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ ছড়াই। পরে সেই আবরণ যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে গোলাকৃতিটি মসৃণ করে। বাসায় শুরুতে দুটি নিম্নমুখি গর্ত থাকে। ডিম পারার সময় একদিক বন্ধ করে দিয়ে জায়গা তৈরি করে। অন্য দিকটি লম্বা করে প্রস্থান ও প্রবেশ পথ তৈরি করে। কথিত আছে বাবুই পাখি চালাকও কম নয়। রাতে আলো জ্বালাতে জোনাকি পোকা বাসায় এনে গুঁজে রাখে।

বাবুই পাখি সাধারণত উঁচু তালগাছের পাতা, নারিকেল গাছ, খেজুর গাছ ও কড়ই গাছে বাসা বাঁধে। তাদের শিল্প চিন্তা খুবই নিপুণ। প্রবল ঝড়-তুফানেও বাসার কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারে না।

এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, পোকা, ফুলের মধু ও কচিপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী বাবুই দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফোটতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে। বাবুই ছানা এক মাসেই উড়তে শিখে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App