×

আন্তর্জাতিক

কাবুল বিমানবন্দরে হামলা: কারা এই আইএসকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২১, ০১:৫২ পিএম

আইএসআইএসকে। এ হলো সংক্ষিপ্ত নাম। আইএসকেপি নামেই বেশি পরিচিত।যার পূর্ণ রূপ– ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ। এই গোষ্ঠী আইএসের আঞ্চলিক শাখা। মূলত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সক্রিয়।

বিবিসি লিখেছে, আফগানিস্তানে যতগুলো জিহাদি গ্রুপ সক্রিয়, তাদের মধ্যে এই আইএসআইএস-কে সবচেয়ে বেশি উগ্রপন্থি ও সহিংস।

আইএস যখন ইরাক ও সিরিয়ার বড় একটি অংশ দখল করে নিয়ে খেলাফত কায়েমের ঘোষণা দিয়েছিল, সেই সময় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আইএসআইএস-কের গোড়াপত্তন হয়।

পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীর অভিযানে আইএস এর সেই কথিত খেলাফতের পতন ঘটে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর আইএসআইএস-কের নাম নতুন করে আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ওই হামলার পেছনে আইএসআইএস-কে।

আইএস এর পক্ষ থেকেও  দাবি করা হয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরের আত্মঘাতী ওই বোমা হামলা তাদেরই কাজ।

ইসলামিক স্টেট খোরাসান পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশ থেকেই নিজেদের সদস্য সংগ্রহ করে। তাদের নজর থাকে কট্টর জিহাদিদের দিকে, বিশেষ করে সাবেক তালেবান যোদ্ধাদের দিকে, যারা নিজেদের সংগঠনকে আরও বেশি কট্টর ভূমিকায় দেখতে চাইত।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওই এলাকায় ভয়ঙ্কর কিছু সহিংসতার ঘটনায় আইএসআইএস-কের যোদ্ধাদের দায়ী করা হয়। এর মধ্যে মেয়েদের স্কুল এবং হাসপাতালে হামলার কয়েকটি ঘটনা রয়েছে।

এমনকি একটি মাতৃসদনে ঢুকে গুলি করে অন্তঃসত্ত্বা নারী আর নার্সদের হত্যার ঘটনাতেও আইএস-এর এই সহযোগী গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়।

তালেবান যেখানে নিজেদের আগ্রহ আফগানিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে,  সেখানে আইএসআইএস-কের লক্ষ্য পুরো বিশ্ব। আইএস এর গ্লোবাল নেটওয়ার্কেরই একটি অংশ তারা। পশ্চিমা স্বার্থ যেখানে আছে, সেখানে আঘাত করারই তাদের লক্ষ্য।

আইএসআইএস-কের ঘাঁটি মূলত আফগানিস্তানের নানগড় প্রদেশে। পাকিস্তান সীমান্তের লাগোয়া ওই অঞ্চল মাদক আর মানব পাচারের জন্য কুখ্যাত।

সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় যখন ছিল, আইএসআইএস-কের সদস্য সংখ্যা তখন তিন হাজারের মতো ছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু আফগান, আমেরিকান, এমনকি তালেবানদের সঙ্গে বিভিন্ন লড়াইয়ে তারা অনেক যোদ্ধাকে হারায়।

একভাবে দেখলে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তবে সেই যোগাযোগটা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। সেই তৃতীয় পক্ষ হল হাক্কানী নেটওয়ার্ক।

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের বক্তব্য হলো, এই আইএসআইএস-কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে এই হাক্কানী নেটওয়ার্কের। তারা আবার তালেবানেরও ঘনিষ্ঠ।

তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খলিল হাক্কানীর কাঁধে, যারা মাথার জন্য ৫০ লাখ ডলার দাম ঘোষণা করা আছে।

এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষক ড. সজ্জন গোহেল আফগানিস্তানের এই সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন বহু বছর ধরে।

তিনি বলছেন, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেশ বড় কয়েকটি হামলার পেছনে আইএসআইএস-কে, তালেবানের হাক্কানী নেটওয়ার্ক এবং পাকিস্তানভিত্তিক আরও কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন সম্মিলিতভাবে জড়িত ছিল।

গত ১৫ অগাস্ট কাবুলের দখল নেওয়ার পর পুল-ই-চরকির কারাগার থেকে বিপুল সংখ্যক বন্দিকে ছেড়ে দেয় তালেবান যোদ্ধারা। তারা সেসময় জেল থেকে বেরিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে আল কায়েদা আর আইএস এর জঙ্গিরাও আছে।

আইএসআইএস-কে এবং তালেবানের মধ্যে আরেকটি বড় পার্থক্যের জায়গাও আছে। কাতারের দোহায় বিলাসবহুল হোটেলে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসায় তালেবানের সমালোচনা করেছিল আইএসআইএস-কে। তাদের ভাষায়,আপসে শান্তির জন্য তালেবান যোদ্ধারা জিহাদের পথ ত্যাগ করেছে।

২০ বছর পর আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরা তালেবানের জন্য বড় একটি দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে আইএস। আর এখন সেটা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্যও ভাবনার কারণ।

সূত্র: বিবিসি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App