×

শিক্ষা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ল ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২১, ০৪:২০ পিএম

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরেক দফায় বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ছুটি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ল। একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে মন্ত্রণালয় ৫ দফা সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে পরবর্তী বৈঠক হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সভা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে, মধ্য অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরফলে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে খুলতে শুরু করবে বিশ^বিদ্যালয়গুলো। তবে এর আগে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিকা সক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ টিকার আওতায় আসবে সেগুলো আগে খুলবে। তবে এরআগে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হবে। এরফলে বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের সশরীরে হাজিরার মাধ্যমে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এ ছুটি ছিল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনা মহামারির পুরোটা সময়জুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ বন্ধের ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যত বেশি সময় ধরে শিশুরা বিদ্যালয়ের বাইরে থাকবে তারা তত বেশি সহিংসতা, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এতে তাদের ততই স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমে যাবে। সরকারের মধ্যেও এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ আগস্ট সচিব সভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং টিকা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে।

তবে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করোনার সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়, তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে শিক্ষার্থীরা পারিবারিক পরিমণ্ডলে কোলাহলের মধ্যে থাকে-এই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি সংখ্যা বিবেচনা করা যায় কিনা সে বিষয়ে কারিগরি কমিটির পরামর্শ চাওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল ‘রিওপেনিং প্ল্যান’ করে রেখেছে তারপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে এই ‘রিওপেনিং প্ল্যান’কে আগামী সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তার জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং সেল গঠন করবে এবং প্রতিদিন প্রতিবেদন তৈরি করবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে মনিটরিং প্রতিবেদন তৈরি করার একটি গাইডলাইন তৈরি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের যে সমস্ত শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছে, টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেসন করেনি কিন্তু শিক্ষার্থীর এনআইডি আছে, যাদের এনআইডি নাই কিন্তু তাদের বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে এবং যাদের বয়স এখনো ১৮ হয়নি তাদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাদের এনআইডি নেই কিন্ত তাদের বিয়স ১৮ এর উপর তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি পাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে। তারপর সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। টিকা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের শরীরে এন্টি বডি হওয়ার জন্য ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর বুধবার আবার যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই যৌথসভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংক্রমণের হার অনেক নেমে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশ বা এলাকার সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়।২০২০ সালে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে এখনো পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর গত ১৭ মাসে মোট ২২ দফা ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ মে ও ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েও করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সবশেষ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, তাদের পরিকল্পনা হলো, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া। পরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। বৃহস্পতিবার উপাচার্যদের আলোচনা শেষে ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চান শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যেতে পারে। তার আগে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন তার তথ্য ছক আকারে ইউজিসিতে পাঠাতে হবে। তার মধ্যে কতজন টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, কতজন এক ডোজ নিয়েছেন, অবসান হলের কতজন শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এসেছে এ সংক্রান্ত তথ্য ইউজিসিতে পাঠাতে হবে।

বৈঠকে আরো বলা হয়, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে, কিন্তু টিকা পাননি তাদের তথ্য পাঠাতে। আর যাদের এনআইডি নেই তাদেরও তথ্য পাঠাতে বলা হয়। গণটিকা চালুর আগে তাদের এনআইডি করে দ্রুত সময়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটা না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়। দীপু মনি বলেন, তথ্য বিবেচনা করে সন্তোষজনক হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমোদন দিতে পারবে ইউজিসি। তবে যাদের টিকা কার্যক্রম শেষ হবে না তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App