×

মুক্তচিন্তা

রোহিঙ্গা ইস্যু কি সমাধান হবে না

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২১, ১২:২০ এএম

রোহিঙ্গা ইস্যু কি সমাধান হবে না

আজ প্রায় চারটি বছর কেটে গেল। কিন্তু সমাধান হলো না রোহিঙ্গা ইস্যুর। দেশে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি হওয়াতে রোহিঙ্গা নিয়ে খুব একটা নড়চড় নেই। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের দিকে। বাংলাদেশে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের সঙ্গে আগে কক্সবাজার জেলায় থাকা রোহিঙ্গারাসহ এখন ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসভূমি। এদের মধ্যে ৬ লাখ আছে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত কুতুপালং মেগা শিবিরে। আর এটি হচ্ছে বিশে^র সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে শুধু চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। তবে অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত নিরাপত্তাসহ আরো নানা ইস্যুতে মিয়ানমার ও চীন একে অপরের ওপর অনেক নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে সম্পর্কও বেশ ঘনিষ্ঠ। চীনের সমর্থন ছাড়া মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মদদ পাওয়া বেশ কঠিন। কাজেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে বাংলাদেশের সহায়তায় চীন কতটা এগোবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক বৈরী হলেও মিয়ানমার প্রশ্নে এই দুই দেশ দুই-তিন দশক ধরে একই নীতিমালা অনুসরণ করে আসছে। আর তা হলো, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যাই ঘটুক না কেন, বাইরে থেকে তারা কোনো ধরনের চাপ আসতে দেবে না। ফলে ভারত বাংলাদেশের অন্যতম মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে নেই। প্রকৃত প্রস্তাবে চীন বা ভারত কোনো দেশই নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশের সপক্ষে এসে দাঁড়াবে না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই সত্য বাংলাদেশ যত দ্রুত অনুধাবন করতে পারবে ততই মঙ্গল। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়ে এই সংকটপূর্ণ অবস্থা চলতে থাকলে সন্ত্রাসবাদ জন্য নিতে পারে সম্প্রতি এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টাকে আদৌ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে মিয়ানমার, চীন বা ভারত? এমন প্রশ্নও রয়েছে। আর এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সন্ত্রাসবাদের এই আশঙ্কাকে মিয়ানমার, চীন বা ভারত সবাই আমলে নিয়েছে। কিন্তু আপাতত তারা এই মুহূর্তে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আপেক্ষিক স্বার্থের দিকগুলোকেই বেশি বিচার-বিবেচনা করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে আরো বাস্তবসম্মত নীতিমালা গ্রহণ করার পাশাপাশি, স্বনির্ভর হয়ে ওঠা প্রয়োজন বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনা টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেখানে বাদ যায়নি রোহিঙ্গারাও। অন্য দেশের ওপর অতিনির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের উচিত অর্থনৈতিক নীতিমালা শক্তিশালী করা। দেশের অভ্যন্তরে সমর্থনের যে ঘাঁটি রয়েছে সেটা গড়ে তোলা। যেন বাংলাদেশ নিজের দেখাশোনা নিজেই করতে পারে। যে কোনো দুর্বল জনগোষ্ঠী যখন কোনো সবল জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে উঠে দাঁড়ায়, তখন তাদের কেউই সমর্থন করে না বা সমর্থন করলেও অতি সীমিত সমর্থন করে। তেমনি বাংলাদেশ বা রোহিঙ্গা কারো ব্যাপারেই কোনো রাষ্ট্র নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্য রাষ্ট্রকে সমর্থন করতে যাবে না। রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান না হলে বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়ে যাবে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোহিঙ্গাদের আস্তানায় হানা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে অনেক রোহিঙ্গাকে। রোহিঙ্গা সংবলিত বা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের অনেক লোক তাদের কাছে জায়গা-জমি বিক্রি করে বাংলাদেশে থাকার স্থান করে দিয়েছে। সুযোগ করে দিচ্ছে এনআইডি কার্ডেরও। ভুয়া জন্মনিবন্ধন বানিয়ে এনআইডি কার্ড করে নিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা আদিবাসী। যার কারণে পার্বত্য জেলাগুলোতে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের লোকজনও জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা কার্যক্রমে, যার ফলাফল এক ভয়াবহতা প্রকাশ করে। পার্বত্য বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলাগুলোতে রোহিঙ্গা কার্যক্রম বেড়ে গেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান হলে অনেকটা ইয়াবা কারবারি কমে আসবে সঙ্গে পার্বত্য জেলাগুলো অনেকটা আপরাধ কর্ম কমে আসবে। এর ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। অন্যথায় রোহিঙ্গা ইস্যু কাল হয়ে দাঁড়াবে।

তারেক আল মুনতাছির : শিক্ষার্থী, ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App