×

জাতীয়

ফুলবাড়ী আন্দোলনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩৪ পিএম

ফুলবাড়ী আন্দোলনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি
ফুলবাড়ী আন্দোলনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবসে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বিক্ষোভ, র‌্যালী ও সমাবেশ। ছবি: ভোরের কাগজ

সরকারের প্রতি ফুলবাড়ী চুক্তির ৬ দফা পূর্ণ বাস্তবায়ন, আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বড়পুকুরিয়া কয়লা লোপাটে জড়িতদের শাস্তির জোর দাবী জানিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবসে তিনি এ আহ্বান জানান।

সকালে দিনাজপুর ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবসে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কেন্দ্রিয়ভাবে আমরা কর্মসূচী করে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা লোপাটের সাথে মন্ত্রি-উপদেষ্টারাও জড়িত। তাদেরও বিচার করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, তদন্তের নামে অতীতের মত যদি কয়লা লোপাটের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে জাতীয় কমিটি গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষিদের চিহিৃত করবে। তিনি সরকারের প্রতি ফুলবাড়ী চুক্তির ৬দফা’র পূর্ণ বাস্তবায়ন,আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বড়পুকুরিয়া কয়লা লোপাটে জড়িতদের শাস্তির জোর দাবী জানান। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বিক্ষোভ, র‌্যালী ও সমাবেশসহ নানা আয়োজনে গতকাল পালিত হয়েছে ১৫তম ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস।

দিনটি উদ্যাপন উপলক্ষে ফুলবাড়ী উপজেলায় সকাল থেকেই ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে এবং কালোব্যাচ ধারন, শোক র‌্যালী, শহীদ স্মৃতি সৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ১৫তম ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলবাড়ী ব্যাবসায়ী সমিতির সামনে থেকে ফুলবাড়ী বাসীর ব্যানারে পেশাজীবী সংগঠনের আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক এর নেতৃত্বে একটি শোকর‌্যালী বের হয়। র‌্যালীটি শহরের ঢাকা মোড় হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ২০০৬ সালের নিহতদের শহীদ স্মৃতিস্তমে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদীতে পুস্পমাল্য অর্পন, সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। শপথবাক্য পাঠ করান ফুলবাড়ী আন্দোলনের নেতা পেশাজীবী সংগঠনের আহবায়ক ও ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক।

এদিকে সকাল ১০টায় ফুলবাড়ী পৌরসভা থেকে পৌর মেয়র আলহাজ্ব মো. মাহমুদুল আলম লিটনের নেতৃত্বে একটি শোকর‌্যাল পৌর শহর প্রদক্ষিণ করে শহিদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ অপর্ণ করেন এবং সকাল ১০.৩০ টায় নিমতলা মোড় থেকে একটি শোকর‌্যালী বের করে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। র‌্যালীটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ বেদীতে পুস্পমাল্য অর্পন করে সেখানে একটি প্রতিবাদী সমাবেশ করেন। র‌্যালী ও সমাবেশে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতা ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা অংশগ্রহন করেন।

২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশী কোম্পানী এশিয়া এনার্জীকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবীতে সকাল থেকেই ফুলবাড়ীর ঢাকা মোড়ে ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হতে থাকে। দুপুর ২টার দিকে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল এশিয়া এনার্জির অফিসের দিকে এগুতে থাকলে স্থানীয় নিমতলা মোড়ে প্রথমে পুলিশ বাঁধা প্রদান করে। পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে বিশাল মিছিলটি সামনে দিকে অগ্রসর হলে স্থানীয় ছোট যমুনা ব্রীজের পূর্ব মুখে পুণরায় পুলিশ-বিডিআর এর বাঁধার মুখে পড়ে। পুলিশ-বিডিআর-এর বেড়িকেট ভেঙ্গে মিছিলটি সামনের দিকে এগুতে চাইলে আন্দোলনকারীদের উপর লাঠি চার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রথম দিকে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হলেও কিছু সময় পড়ে আন্দোলনকারীরা আবার জমায়েত হতে থাকে এসময় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ-বিডিআর রাবার বুলেট ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। বিডিআরের গুলিতে এসময় নিহত হয় আল আমিন, সালেকীন ও তরিকুল। আহত হয় ২ শতাধিক আন্দোলনকারী জনতা। এরপর ফুলবাড়ীবাসী ধর্মঘটের মাধ্যমে এলাকায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করে। বাধ্য হয়ে তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিস্কার, দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে নাসহ ৬ দফা চুক্তি করলে এলাকাবাসী ধর্মঘট প্রত্যাহার করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App