×

মুক্তচিন্তা

শেখ হাসিনা : মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে মানুষকে বাঁচানোর সংগ্রামের নাম

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২১, ১২:৩৯ এএম

শেখ হাসিনা : মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে মানুষকে বাঁচানোর সংগ্রামের নাম
বাঙালির জীবনে দুঃসহ এক মাসের নাম আগস্ট। ১৯৭৫ সালের আগে আগস্ট নিয়ে বাঙালির এই উদ্বিগ্নতা ছিল না। ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে আগস্টের গায়ে এমন কালিমালেপন করেছে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি। বিদেশে অবস্থানের জন্য সে সময় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরিবারের সবাইকে হত্যার মধ্য দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং এ দেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করার নিষ্ঠুর প্রকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার পাঁয়তারায় বাঙালির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসকেও তারা বিপন্ন করেছিল। বিপন্ন ও বিকৃত করেছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ষড়যন্ত্রকারীরা মুক্তিযুদ্ধকে নানা কৌশলে সাধারণের সম্মুখে ভ্রান্তরূপে উপস্থাপনের প্রয়াস গ্রহণ করেছিল। সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধকালীন চার মৌল নীতিকেও সাধারণের সম্মুখে সুপরিকল্পিত উপায়ে নানারূপ অপব্যাখ্যায় উপস্থাপন করেছে। সংবিধানকে বিকৃত করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকেও বিকৃতির আড়ালে আচ্ছন্ন করেছে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যা দিবস ১৫ আগস্টকেও এই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। শোকাভিভূত বাঙালি যেন ১৫ আগস্ট স্মরণপূর্বক শোক প্রকাশও করতে না পারে সেজন্য এ দিনটিকে তারা বেগম খালেদা জিয়ার জন্মোৎসব হিসেবে পালনে মাতোয়ারা হয়েছিল। কিন্তু আগুন যেমন ছাই দিয়ে চেপে রাখা যায় না, তেমনি সত্যিকারের ইতিহাসকেও তার গতিধারা থেকে বিচলিত করা যায় না। প্রকৃত ইতিহাস আপন তেজে আপনিই প্রকাশিত হয়- অন্তত বাংলাদেশে তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর ছয়-ছয়টি জন্মদিনের দালিলিক প্রমাণাদি এখন ইন্টারনেট দুনিয়ার সর্বত্র ভাসমান! অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে যে কোনো ব্যক্তি একটু চেষ্টা করলেই ইন্টারনেট থেকে খালেদা জিয়ার কমপক্ষে ছয়টি জন্মদিনের সন্ধান পাবেন! এগুলোর মধ্যে মেট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী জন্মদিন ৯ আগস্ট ১৯৪৫, বিবাহ সনদে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, পাসপোর্ট সনদে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫! অথচ তিনি ১৫ আগস্ট জাতির বেদনাবিধুর এবং বেদনাক্রান্ত দিনটিকে নিজের জন্মদিন বানিয়ে আনন্দ-উৎসবে মাতিয়ে মানুষকে ১৫ আগস্টের শোক ভুলিয়ে বাঙালির শাশ্বত চেতনাকে ভোঁতা করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন! সম্প্রতি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্ডে তার আরেকটি নতুন জন্মদিন জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। সেখানে তার জন্মদিন দেখা গেছে ৮ মে ১৯৪৬! মানুষ একজন- অথচ ছয়-ছয়টি জন্মদিন! ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এ অনায়াসেই তিনি স্থান করে নেবেন সন্দেহ নেই! কিন্তু এরূপ বিষয় জাতি হিসেবে আমাদেরকে নিশ্চয়ই খাটো করে। ক্ষমতালিপ্সু ও নরঘাতকদের গভীর ষড়যন্ত্র এবং নির্মম ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডের এই ১৫ আগস্টকে বাঙালির চিত্তপট থেকে ভুলিয়ে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছে! বঙ্গবন্ধু আজ আর কেবল বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ নন। তিনি বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের অমোঘ এবং অবিসংবাদিত নেতার আসন পেয়েছেন। বিশ্বের সব প্রান্তের অসহায় ও নিরন্ন মানুষের সহায়রূপে তাদের মননের গভীর আসনটিও তিনি জয় করে নিয়েছেন! মানুষ যতই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানছেন ততই মুগ্ধ বিস্ময়ে তার নেতৃত্বের প্রতি অনুগতচিত্ত সমর্থন জ্ঞাপন করছেন। বিশ্ববাসী মুক্তিযুদ্ধের মহান এই স্থপতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সশ্রদ্ধ সম্মানও করছেন। পক্ষান্তরে, খুনি এবং খুনিদের মদদদানকারী গোষ্ঠীর প্রতি প্রকাশ করছেন অন্তহীন ধিক্কার এবং ঘৃণা। হত্যাকারীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর ধর্মনিরপেক্ষতা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আদর্শের ওপর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দেশবাসীকে ইতিহাসের সঠিক গতিপথ থেকে দিকভ্রান্ত এবং বিভ্রান্ত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নানাভাবে প্রলোভিত করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দাও লুটে নিয়েছিল। উপরন্তু ধর্মপ্রাণ মানুষকে দাবার ঘুঁটির মতো হাতে রেখে নিজেদের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার অবকাশও তৈরি করেছিল। এদেরই প্রশ্রয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত ও পলায়নকারীরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। বলা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযুদ্ধের একেবারে বিপরীত ও বিরুদ্ধ শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল। শুধু দখলই নয়- সাধারণের মধ্যে আদর্শিক দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করে সূ² কৌশলে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকেও থাকে! কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের কৌশল দেশের মানুুষের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তির উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছিল না বলেই ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে মানুষের দ্বারাই তারা ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। প্রত্যাখ্যাত হলেও ক্ষমতা দখলে ষড়যন্ত্রকারীদের অপচেষ্টা এখনো থেমে নেই। আওয়ামী লীগ এবং বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি তীব্র আক্রোশ নিয়ে এখনো সক্রিয় এবং মাঝেমধ্যে সশস্ত্রও হয়ে ওঠে। ১৫ আগস্টের ‘অসমাপ্ত’ কাজ সমাপ্ত করার জন্য আবারো ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে তারা যেন আগস্টকেই বেছে নিয়েছিল! বেছে নিয়েছিল ২১ আগস্টকে! বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য নরপিশাচের দল ২০০৪ সালে মত্ত হয়ে উঠেছিল। ২১ আগস্টের কারিগর কারা এবং কারা বারবার বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সক্রিয় জাতির কাছে তাও স্পষ্ট হয়েছে অনেক আগে। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যখন ক্ষমতা দখল করে তখন সে জাতি নানাভাবে বিপন্ন ও পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাস সেই বিপন্নতারই ইতিহাস! কিন্তু জাতিকে বিপর্যস্ত ও বিপন্নদশা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে পিতার মতোই অমিত সাহসে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজনীতির মাঠে আগমন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে পরাজিত শক্তি। তাই তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে নিজেদের ভয়কে জয় (!) করতে চেয়েছে! সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়, জনমত উপেক্ষা করে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করে যারা নীতিহীন, আদর্শহীন এবং হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী তারা আস্তাকুঁড়েই নিক্ষিপ্ত হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও সেই শাশ্বত সত্যকেই প্রমাণ করেছে। রাজনীতির লেবাসে যারা রক্তের হোলি খেলায় মত্ত হয়েছিল আজ তারা ইতিহাসের সেই আস্তাকুঁড়েই নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আমরা জানি না, কোথায় আছে ইতিহাসের তামসঘন মুহূর্তের সেই সব অপনায়ক! যারা সাধারণ মানুষকে ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্রকে করে তুলেছিল বিভীষিকাময় এক রক্ত-স্রোতস্বিনীরূপে! ১৫ আগস্ট কিংবা ২১ আগস্ট শুধু নয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সেই নরপিশাচগোষ্ঠী এ পর্যন্ত কম করে হলেও ২৩ বার আক্রমণ করেছে। কিন্তু বাঙালির অন্তহীন ভালোবাসা আর মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। বেঁচে আছেন বলেই শেখ হাসিনার হাত ধরে এ দেশের মানুষের উন্নতি হচ্ছে দিন দিন। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করছে খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ। দরিদ্র দেশের তকমা ত্যাগ করে শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দক্ষ নেতৃত্ব¡গুণে আমরা আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছি। এ অগ্রযাত্রার গতি অব্যাহত থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। কিন্তু উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রয়াস নিয়ে ঘাতকরা বারবার আক্রমণ করে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে তিনি ফিরে এসেছেন। ফিরে এসে দেশের সাধারণ মানুষকে সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য কাজ করেন। সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে সে চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেন। কর্মহীনদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য তিনি উদ্বিগ্ন হন। এক কথায়, মানুষের সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের জন্য তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। শত্রæদের প্রদর্শিত মৃত্যুভীতির কাছে তিনি নতজানু হননি, থমকেও যাননি! বরং মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ২১ আগস্টের অপনায়ক এবং তাদের দোসরদের অনেকেই আজ বিচারের মুখোমুখি, অনেকেই পলাতক। তবু এদেরই বশংবদেরা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় আজো নানাভাবে সক্রিয়। সক্রিয় বলেই বারবার হামলা করা হয় জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। যে আদর্শ ও বিশ্বাস নিয়ে জাতির পিতা বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সেই চেতনাকে নানা পন্থায় ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করাই হামলাকারীদের উদ্দেশ্য। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী তথা ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এ দেশের মানুষ এই অপশক্তির উত্থানকে প্রতিহত করবেই। এটিই বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অনুরূপ আদর্শ ও চেতনার পতাকাবাহী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব না হলে আমাদের সেই বৈশিষ্ট্য দীর্ঘজীবী হবে না। সুতরাং জাতীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নির্মাণ করে তোলাও রাজনৈতিকভাবে বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ প্রকল্প হওয়া জরুরি। নতুন প্রজন্মের মানসিকতার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চার মৌল আদর্শের শক্ত ভিত্তি প্রদানের লক্ষ্যে এরূপ প্রকল্পই এখন সময়ের অবিকল্প দাবি। আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App