×

সারাদেশ

বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে হাতিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩২ পিএম

বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে হাতিয়া

তিনটি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ট্রাকবোঝাই মালামাল আসা শুরু হয়েছে হাতিয়ায়। ছবি: ভোরের কাগজ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপসহ উপজেলা হাতিয়াকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি “সাবমেরিন ক্যাবলে সরবরাহের দাবি, বিদ্যুৎ বঞ্চিত হাতিয়া দ্বীপের ৫ লক্ষাধিক মানুষ” শিরোনামে দৈনিক ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদটি বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আসলে হাতিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ এক ধাপ এগিয়ে যায়।

তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ আগস্ট থেকে তিনটি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ট্রাকবোঝাই মালামাল আসা শুরু হয়েছে হাতিয়ায়। নদী পাড়ি দিয়ে আনা এসব মাল নিয়ে যাওয়া হয়েছে উপজেলা সদরের দক্ষিণে হরেন্দ্র মার্কেটের পাশের বালুর মাঠে। ওখানেই হেভি ফুয়েল ওয়েল (এইচএফও) ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে। এর আগে, বিদ্যুৎ বিভাগ এই স্থানে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে বালু ভরাট সম্পন্ন করেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হবে ১ হাজার ১০০টি ট্রাক। এর মধ্যে ২০ টন ওজনের বড় লরিও ব্যবহার হবে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নদী পথ হওয়ায় একটি ভাসমান ফেরি আনা হয়েছে। একবার একটি ফেরিতে ১০টির মতো ট্রাক পারাপার করা যাবে। এই ফেরিতে ট্রাকগুলো হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নলচিরা ঘাটে পৌঁছানো হবে। এ ছাড়া হাতিয়ার সড়কগুলো এসব ট্রাক চলাচলের জন্য অনুপযোগী। তাই বিশেষ করে ঘাট এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

ফেরি থেকে ট্রাক নামানোর জন্য ঘাটে বিশাল মাঠ তৈরি করা হয়েছে। ঘাট থেকে প্রকল্প এলাকার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সড়কের অনেক স্থানে গাছ কেটে বাড়ানো হয়েছে প্রশস্ততা। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে গত ২০দিন আগ থেকে। গত ১৮ আগস্ট বিদ্যুতের মালবাহী ট্রাকগুলো আসতে দেখে সাধারণ মানুষকে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন বাজারের ওপর দিয়ে আসা ট্রাকগুলো দেখে মানুষজনকে চিৎকার করে উল্লাস করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোডও করেছেন।

হাতিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান সরকার হাতিয়ায় পাঁচটি ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে শুরু করে ‘হাতিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র’। কিন্তু অনেক পুরনো এই ইঞ্জিনগুলো বর্তমানে অনেকটাই বিকল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সাংসদ আয়েশা ফেরদাউসের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার তিনটি নতুন ইঞ্জিন দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কিছুটা সচল রাখে। বর্তমানে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এতে শুধু পৌর এলাকার কিছু সংখ্যক মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যদিকে নিঝুম দ্বীপসহ হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নের মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে হাতিয়া সফর করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি হাতিয়াতে শতভাগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। এরপর ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি হাতিয়ায় বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভোরের কাগজ। এরপরই বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা হাতিয়াতে জরিপ শুরু করেন।

প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। গত ৩ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিউবো)। এই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ বলেন, সরকারের অনুমোদন দেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বিতরণ বিভাগের উন্নয়ন করা হবে। উৎপাদনের জন্য চুক্তি করা হয় দেশ এনার্জি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে। তারা প্রাথমিকভাবে ১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্ল্যান্ট তৈরি করবে হাতিয়ায়। এতে ১৫ বছরের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। যাদের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ১২ দশমিক ১০ সেন্টে কিনে নেবে সরকার। নিঝুম দ্বীপ হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোক্তারিয়া ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ খাল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার ১১ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হবে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদনের দায়িত্বে থাকা দেশ এনার্জি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন জানান, হাতিয়াতে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ হাতিয়ার হরেন্দ্র মার্কেট এলাকায় পাঁচ একর জমি দিয়েছে কোম্পানিকে। সেখানে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখানে ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হেভি ফুয়েল ওয়েল (এইচ এফ ও) ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

হাতিয়া দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতার পর সারাদেশে বিদ্যুতের উন্নয়ন হলেও হাতিয়ায় বিদ্যুতের আলো জ্বলেনি। এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য দ্বীপ বন্ধু মোহাম্মদ আলী ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জোরালো দাবি জানিয়ে আসছেন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতিয়ার মানুষের বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে দ্বীপ বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন।

হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী বলেন, হাতিয়াবাসীর স্বপ্ন ছিল হাতিয়াতে শতভাগ বিদ্যুতের উন্নয়ন হবে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতিয়ার মানুষের স্বপ্ন পূরণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কাজের সূচনা করেছেন। এটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে হাতিয়াবাসীর জীবন যাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App