×

মুক্তচিন্তা

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বাংলাদেশের অগ্রগতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২১, ১২:৩৯ এএম

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বাংলাদেশের অগ্রগতি
বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা আগস্ট মাস। এই মাসটি বাঙালি জাতির জন্য শুধু বেদনারই নয়, শোকের ও আবেগের মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই কোনো না কোনো বেদনাবিধুর ঘটনা ঘটেছে এই মাসে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়, পরের বছরের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একসঙ্গে বোমা হামলা ঘটানো হয়েছিল। শোকের মাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের এই লেখা শুরু করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির পিতা। তিনি বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন দেখলে দেখতে পাব তিনি তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর আদর্শগুলোকে লিখিত এবং অলিখিতভাবে আমাদের মাঝে দিয়ে গেছেন। জাতির পিতার রেখে যাওয়া আদর্শগুলো আমি তিন ভাগে ভাগ করে আজকের এই লেখায় উপস্থাপন করছি। প্রথমত, জাতির পিতা তাঁর জীবদ্দশায় অলিখিতভাবে যে কাজগুলো করেছেন তার মাধ্যমে আমরা তাঁর অনেক আদর্শ পাই। দ্বিতীয়ত, লিখিত রূপ অর্থাৎ জাতির পিতার যেসব কাজের লিখিত রূপ রয়েছে। তৃতীয়ত, জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে রেখে যাওয়া আদর্শ। অলিখিত আদর্শগুলো আমরা জাতির পিতার রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করা এবং বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মুক্তি, নিজস্ব ভূমিসত্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। যা তিনি ছাত্রজীবন থেকে শুরু করেছেন। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তাঁর মন কাঁদত। জনগণের মুখে হাসি ফুটানো তাঁর অন্যতম একটি আদর্শ। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য- এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে বাংলার মানুষের উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠাই ছিল তার আদর্শ। বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং বাঙালি জাতি যেন একটি শোষণমুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করতে পারেন এটাই তাঁর সারা জীবনের স্বপ্ন। এই স্বপ্নই হচ্ছে আদর্শের বহিঃপ্রকাশ। তার অন্যতম ছিল বাঙালি জাতির একটি নিজস্ব ভূমিসত্তা, যে ভূমিতে বাঙালি তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে, তার নীতি সে নিজেই পরিচালনা করতে পারবে এবং বাঙালির সংস্কৃতি সে নিজেই পরিচালনা করবে। জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়া, জনগণকে ক্ষমতায়ন করা, ধর্মনিরপেক্ষ থাকা, মানুষের জন্য কাজ করা, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য নিজের বিলিয়ে দেয়া জাতির পিতার অন্যতম আদর্শ। যে কারণে তিনি জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী নেতা হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতির ওপর শোষণ, জুলুম, নির্যাতন আর নিপীড়ন চালাতে থাকে। বঙ্গবন্ধু এর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার লক্ষ্যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরের বছরই ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুটি সংগঠনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির পিতা ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ছয় দফা উপস্থাপন, ’৬৮-এর আগরতলা মামলা প্রতিহতকরণ, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান- এসবই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। সেই ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক, অবিস্মরণীয় ভাষণ প্রদান করেন। সেই ভাষণে শান্তির ডাক দিয়েছেন, যার মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের শুরু হয়। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যখন হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করে ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পরই পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিসত্তার প্রকাশ ঘটে। যার সর্বাধিনায়ক আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেন গুদামে খাদ্য নেই, মাঠে ফসল নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ শূন্য। বস্তুত কোনো ব্যাংকের কার্যকারিতা নেই। সড়ক ও রেলপথ বিচ্ছিন্ন, নৌ ও সমুদ্রবন্দরগুলো বিধ্বস্ত। স্কুল-কলেজগুলো ছিল পরিত্যক্ত সেনাছাউনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে সম্ভাব্য সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের কিছু কুচক্রী মহল তখনো চাইছে দেশটি স্বাধীন হিসেবে না থাকুক অথবা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হোক। এত কিছুর পরও এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট থেকে ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকার বাজেট প্রদান করেছেন। এত অল্প সময়ে বাংলাদেশের এত উন্নতি দেখে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শত্রæ সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্ত শুরু হয় এবং দেশের ভেতরে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন যে দেশে এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশকে আমি যে লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চাই সেই লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারব না। তাতে অনেক সময় লেগে যাবে। তখন তিনি ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আমাদের মাঝে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন। এই দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমেও বঙ্গবন্ধু তাঁর নতুন কতগুলো আদর্শ আমাদের মাঝে দিয়ে গেছেন। এই দ্বিতীয় বিপ্লবে তিনি চেয়েছিলেন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, কৃষি এবং শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় ঐক্য এবং জনগণকে একটি জনমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা উপহার দেয়া। জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি জাতির পিতার সেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ফলে আজকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা পাকিস্তানের থেকে কম। তাঁর যে খাদ্য উৎপাদনের নীতি তা আজ প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করছে। যার ফলে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছিলেন আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বাধীনতাবিরোধী দুয়েকটি দল ছাড়া বাকি সব দল জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকন্যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সরকার ব্যবস্থা। যদিও এটি একটি কঠিন কাজ। আমরা ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যারা করতে চাইবে তাদের অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শগুলো সামনে রেখেই রাজনীতি করতে হবে। সেটা সে দলের মধ্য থেকে কাজ করুক কিংবা দলের বাইরে থেকে কাজ করুক। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা, তিনি কোনো দলের না, তাঁর আদর্শ যে কেউই ধারণ করতে পারে। কিন্তু জাতির পিতার প্রতিষ্ঠিত দলে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শগুলো ধারণ বা পালন করেই রাজনীতি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যখন কিছু মানুষ ভয় পেতে শুরু করল এবং তারা যখন বুঝে গেল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জাতির পিতার এই আদর্শকে সামনে রেখে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক নেতায় পরিণত হতে যাচ্ছে তখনই জাতির পিতা এবং তাঁর আদর্শকে এই বাংলাদেশ থেকে বিলীন করে দেয়ার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। যেখানে স্বাধীনতা বিরোধীচক্র নারী, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও বৃদ্ধাসহ গোটা পরিবারের সবাইকে হত্যা করে। যদি সেদিন স্বাধীনতা বিরোধীচক্র বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে না চাইত তাহলে গোটা পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলো কেন? কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় ছিলেন বলেই আমরা জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি। যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছিল তারা ১৯৭৫-এর পরও জাতির পিতার আদর্শকে জীবিত রেখেছে এবং সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার সেই আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশকে আমরা একটি উন্নত বিশ্বে পরিণত করতে সক্ষম হচ্ছি। আমার আজকের এই লেখাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই, আমাদের আজকের যে তরুণ প্রজন্ম যারা রাজনীতি করতে আগ্রহী বা রাজনীতি করছেন কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান তারা যেন ক্ষমতা ও সব ধরনের লোভ-লালসায় না পড়েন। জনগণের সেবার মাধ্যমে তারা যেন জাতির পিতার আদর্শকে খুঁজে পান এবং ধারণ করেন। তাদের মাধ্যমেই চিরকাল এই বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বহমান থাকবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App