×

অপরাধ

পরকীয়ার জেরে স্বামীকে খুন, স্ত্রীসহ প্রেমিক গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২১, ০৬:০১ পিএম

পরকীয়ার জেরে স্বামীকে খুন, স্ত্রীসহ প্রেমিক গ্রেপ্তার

আটককৃত আসামি সুলতানা আক্তার কেমিলি ও রবিউল করিম পিন্টু। ছবি: ভোরের কাগজ

ডিস ব্যবসায়ী হওয়ায় স্বামীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরেই ঘটে বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি (৩০)। তবে তদন্তে ঘুরে যায় ঘটনার মোড়।

খুলতে থাকে হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট। বেরিয়ে আসে দুই সন্তানের মা স্ত্রী কেমিলিয়ার পরকীয়ার ঘটনা। এরই জের ধরে প্রেমিক রবিউল করিম পিন্টুর (৩৫) সঙ্গে মিলে স্বামী এলিম সরকারকে (৪২) হত্যার নির্মম কাহিনী।

আশুলিয়ার ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকার ক্লুলেস হত্যা মামলা রহস্য উদঘাটন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলার এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।

রাজধানী উত্তরার পিবিআই ঢাকা জেলা কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এসপি বলেন, তদন্ত ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আশুলিয়া জিরাবো জামগড়া এলাকা থেকে নিহতের স্ত্রী মোসা. সুলতানা আক্তার কেমিলি ও তার পরকীয়া প্রেমিক মো. রবিউল করিম পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা পিবিআই।

তিনি আরো বলেন, ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়া এলাকায়। প্রতিদিনের মত গত ২৭ মার্চ রাত ১০ টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে এলিম সরকার তার স্ত্রী সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন ২৮ মার্চ সকাল ৮টার দিকে এলিম সরকারের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলি ঘুম থেকে উঠে জরুরী প্রয়োজনে তার শ্বশুর ফজল হক সরকারের বাড়িতে যান। বাড়ির অন্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শেষে ওই দিন সকাল ১০ টার দিকে বাড়িতে ফিরে আসেন কেমিলি। বাসায় ঢুকেই স্বামী এলিম সরকারের লাশ দেখতে পায়। তখন স্বামীর গলার নিচে ১টি ও পেটে ১১ টি ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের ১টি আঘাত দেখতে পায় বলে জানায় সে।

পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এলিমের বাবা ফজল হক সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৬৮) করেন। যেহেতু নিহত ব্যক্তি আশুলিয়ায় ডিস ব্যবসা করতেন। তাই হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটি ডিস ব্যবসা কেন্দ্রিক ঝামেলায় ধাবিত করতে চেয়েছিলো কেমিলি। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা।

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, মামলাটি আশুলিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআইও তদন্ত করছিলো। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তে আসামিদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রবিউল করিম পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান হিসেবে চাকুরী করেন। সেই সুবাধে স্থানীয় ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকারের বাসায় বিদ্যুতের মিটার লাগানোর কাজ করতে গিয়ে তার স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

গত ২০১৯ সালের থেকে তাদের পরকীয়া প্রেম চলে আসছিলো। পরবর্তীতে বিষয়টি স্বামী এলিম সরকার টের পেয়ে যায়। তা পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও জানাজানি হয়ে যায়। এই নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। ধরা খেয়ে যাওয়ার কারণেই স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্ত্রী কেমিলি। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে ভাড়াটিয়া খুনী দিয়ে হত্যাকান্ড সংঘটিত করতে চাইলেও ব্যার্থ হয়। পরে পিন্টু একাই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই অনুযায়ী, কেমিলি রাতেই তার স্বামী এলিম সরকারকে দইয়ে সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী গত ২৮ মার্চ সকাল আনুমানিক ৮-৯ টার মধ্যে কেমিলির পরামর্শে পিন্টু তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাসায় ঢুকে। নিস্তেজ পড়ে থাকা এলিমকে চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে বাসার সিসি ক্যামেরা ও ডিভিআর নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় পিন্টুর বন্ধু পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম এখনই বলা যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App