×

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানে কর্মজীবী নারীদের ঘরে থাকার নির্দেশ তালেবানের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২১, ১২:৩৫ পিএম

আফগানিস্তানে কর্মজীবী নারীদের ঘরে থাকার নির্দেশ তালেবানের

ফাইল ছবি

তালেবানের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, আফগানিস্তানে কর্মরত নারীদের তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকতে হবে। খবর বিবিসির।

মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, এটি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য একটি প্রক্রিয়া।

২০০১ সালের আগে তালেবান, যখন আফগানিস্তান শাসন করতো, তখন তারা কঠোর শরীয়া আইন জারি করেছিল। নয় দিন আগে তারা আবারও আফগানিস্তানের পূর্ণ ক্ষমতা নিয়েছে।

জাতিসংঘ তালেবানদের দ্বারা নির্যাতনের নির্ভরযোগ্য কিছু প্রতিবেদন তুলে ধরেছে যার মধ্যে নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অন্যতম। এদিকে মঙ্গলবার কাবুলে নিজেদের সংবাদ সম্মেলনে, তালেবান মুখপাত্র রাজধানী কাবুল থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন উচ্ছেদের কথাও তুলে ধরেছেন।

মুজাহিদ দেশটির বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন যে আফগানদের সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ নয়। তিনি আরও বলেন, আমেরিকার উচিত আফগানদের চলে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা বন্ধ করা কারণ আফগানিস্তানে তাদের প্রতিভার প্রয়োজন রয়েছে।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগের জন্য বেধে দেয়া ৩১শে অগাস্টের সময়সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস স্বীকার করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়সীমা বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। কাবুল বিমানবন্দর থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযানের সময় হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা যায়।

মার্কিন সেনারা কাবুল বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে, যেখান থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার ৭০০ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মি. মুজাহিদ ৩১শে আগস্টের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার অভিযান সম্পর্কে তালেবানদের অবস্থান আবারও নিশ্চিত করেছেন।

আফগান নারীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন যে, যে কোনও ধরণের বিধিনিষেধ স্বল্পস্থায়ী হবে।

মুজাহিদ বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকেরই প্রশিক্ষণ নেই যে কিভাবে নারীদের সঙ্গে আচরণ করতে হয় বা তাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়। পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা নারীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিচ্ছি।

নারীদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশলেট মঙ্গলবার বলেন, তিনি তালেবানদের দ্বারা শিশু সৈনিক নিয়োগ এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা জানতে পেরেছেন।

তিনি জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলরের এক জরুরি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন। পরে, কাউন্সিল নারী ও মেয়েদের অধিকারের প্রতি তার অটল অঙ্গীকার নিশ্চিত করে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে। কিন্তু অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ তদন্ত প্রতিনিধি পাঠানোর যে আহ্বান জানিয়েছিল তা শেষমেশ অনুমোদন পায়নি।

ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে, তালেবান বেশ সংযত আচরণ করছে এবং তারা নারী ও মেয়েদের অধিকার এবং বাক-স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বাইডেন মঙ্গলবার জি সেভেন-ভুক্ত নেতৃস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

ব্রিটিশ নাগরিক, অন্যান্য বিদেশি নাগরিক এবং বিদেশে পুনর্বাসনের যোগ্য আফগানসহ হাজার হাজার মানুষ এখনও আফগানিস্তান ত্যাগের অপেক্ষায় রয়েছে।

আফগান নাগরিক খালিদ, যিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দোভাষী হিসেবে কাজ করেছিলেন, বিবিসিকে তার স্বস্তির কথা জানান, একই সাথে দেশ ছাড়ার জন্য তার দুঃখের কথাও প্রকাশ করেন। তিনি এবং তার পরিবার এখন ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে রয়েছেন।

তিনি বলেন, যখন আপনি আপনার দেশ ত্যাগ করেন, আপনার জনগণ, বিশেষ করে আপনার বোন, আপনার ভাই, আপনার মা সবাইকে আপনি ত্যাগ করেন ... এইসব কারণে আমি দুঃখিত ছিলাম। কিন্তু এখন আমি যুক্তরাজ্যে ভাল আছি।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর- এর মতে, তালেবানরা নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার আগেও, এই বছর যুদ্ধের কারণে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল।

এদিকে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা- সিআইএ'র প্রধান কাবুলে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মোল্লা বারাদারের সঙ্গে একটি গোপন বৈঠক করেছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যম জানতে পেরেছে।

এটি সত্যি হয়ে থাকলে, কাবুলের পতনের পর এবং দেশটি থেকে মার্কিন সমর্থিত বাহিনী সরিয়ে নেয়ার এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App