×

জাতীয়

‘পরী মনি, মৌ, পিয়াসারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্মম শিকার’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২১, ০৭:৩৪ পিএম

‘পরী মনি, মৌ, পিয়াসারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্মম শিকার’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের মিছিল। ছবি: ভোরের কাগজ

‘পরী মনি, মৌ, পিয়াসারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্মম শিকার’

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরম মানববন্ধন সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল । ছবি: ভোরের কাগজ

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে ঘরে বাইরে সামাজিক ও গণমাধ্যমে নারীদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র।  পাশাপাশি একই দাবীতে ও অবিলম্বে তনু মিতু আফসানা সহ নারী শিশু হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে সেখানে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘ঘরে— বাইরে, গণ ও সামাজিক মাধ্যমে নারীর উপর যৌন ও সহিংস আক্রমণ বন্ধ করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তসলিমা আক্তার বিউটির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক তৌফিকা লিজা, সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তি, নওশীন সাথী প্রমুখ।

সমাবেশে নারীনেত্রীরা বলেন, ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিনকে পুলিশ কতৃর্ক ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের সৃষ্টি হয়। সেদিন ধর্ষণকারী পুলিশ সদস্যরা ইয়াসমিনকে পতিতা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্ত প্রতিরোধ আন্দোলন বাধ্য করেছিল ফৌজদারী মামলায় পুলিশের বিচার করতে। দীর্ঘ ২ বছর সারাদেশের নারী সমাজসহ দিনাজপুরবাসীর অপ্রতিরোধ্য গণআন্দোলন বাধ্য করেছিল ৩ পুলিশ সদস্যের ফাঁসির রায় প্রকাশ করতে। ২০০৪ সালে এই ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

[caption id="attachment_304065" align="aligncenter" width="1600"] সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরম মানববন্ধন সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল । ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

তারা বলেন, আজ দীর্ঘ ২৫ বছর পর যখন আমরা এই দিবসকে স্মরণ করছি, তখন করোনাকালীন ভয়াবহ পরিস্থিতি মানুষকে এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। খেটে খাওয়া গরিব মানুষ করোনায় মৃত্যু ভয়ের চেয়েও বেশি ভয়ে আছে না খেয়ে মরার। কাজ নেই, চিকিৎসা নেই, নিরাপত্তা নেই। তদুপরি নানা সহিংস মাত্রায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। পরী মনি, পিয়াসা,মৌ, হেলেনার মতো নারীরা এই পুঁজিবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নির্মমতার স্বীকার হচ্ছে। তাদেরকে যেভাবে প্রতিনিয়ত বিচারের নামে জনসম্মুখে নিয়ে আসা হচ্ছে, সেটা কখনোই বিচারের পদ্ধতি হতে পারে না। একই মামলায় একবার পুলিশ, একবার সিআইডি, আরেকবার ডিবি রিমান্ডে নিচ্ছে, তাতে করে মনে হচ্ছে বিচারের নামে প্রহসন চলছে। যাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আজকে পরিমনিরা তৈরি হচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে নামের তালিকা প্রকাশ করা হোক। আইনে আছে যতক্ষন না অপরাধ প্রমানিত হয় ততক্ষণ তাকে অপরাধী বলা যায় না। পরী মনি অপরাধ করলে অবশ্যই তার বিচার হবে এই বিষয়ে আপত্তি নেই। তবে অপরাধের মূলহোতাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

নেত্রীরা বলেন, নারীরা সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী অথচ নাগরিক হিসেবে সমঅধিকার ও মর্যাদা দাবি করলেই অনেকে অস্বস্তিতে পড়ে যান। যেকোন ঘটনায় ভিকটিম ব্লেমিং প্রাধান্যে থাকে। গণ ও সামাজিক মাধ্যমে অকথ্য আক্রমনও যৌন হয়রানির নামান্তর। এর কারণ, নারীকে অধস্তন করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সমাজ থেকে নির্মূল হয়নি। সমাজে নাগরিক অধিকারের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মননের খুবই অভাব। রাষ্ট্র জনগণের এই পিছিয়ে পড়া সাংস্কৃতিক মনন দূর করতে ভুমিকা তো পালন করছেই না উপরন্তু আইন, প্রশাসন ও বিচারের রন্ধ্রে রন্ধে্র পুরুষতন্ত্রের অবস্থান।

নারীনেত্রীরা বলেন, বর্তমানে দেশে নারীর উপর নির্যাতন সহিংসতা অনেকগুন বেড়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদকাসক্তি, জুয়া, অশ্লীল সিনেমা—নাটক—বিজ্ঞাপন মানুষকে ভোগবাদী মানসিকতায় নিমজ্জিত করছে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার ফলেই আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার ক্ষমতাসীন দলগুলি অন্যায়ভাবে জবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে অন্যায়, জুলুমকে প্রশ্রয় দিয়ে অপরাধীদের রক্ষা করে চলেছে। তারা বলেন, আজ এই দিবসের সূচনালগ্নে সামাজিক ও গণমাধ্যমে নারীর প্রতি যৌন ও সহিংস আক্রমনের নানান ঘটনা থেকে শুরু করে দেশের সকল নারী নির্যাতনের ঘটনা আমাদের এটাই শিক্ষা দেয় যে, শাসকগোষ্ঠী বরাবরই অপরাধীদের রক্ষক। নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা, নির্যাতন বন্ধ করতে হলে নারী নির্যাতন বিরোধী সকল আন্দোলনকে বৈষম্য ও দমনমূলক সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিচালিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App