×

মুক্তচিন্তা

তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার একটা ডিল আছে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২১, ১২:১২ এএম

তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার একটা ডিল আছে? মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তালেবানরা কিছুই করবে না। চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, কুড়ি বছর আফগানিস্তানে অবস্থান, ২ হাজার ৪৪২ আমেরিকান নিহত, ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে আমেরিকা সাফল্যের সঙ্গে আফগানিস্তানে এক তালেবানকে সরিয়ে আরেক তালেবানকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমেরিকা কি এতই পাগল? যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ছাড়ার পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের, বাইডেন তা বাস্তবায়ন করছেন। তবে সঠিক পরিকল্পনা না করেই বাইডেন আফগানিস্তান ছাড়ার কাজটি করেছেন। এজন্য জো বাইডেন সমালোচিত হচ্ছেন, তবে তেমন জোরালোভাবে সমালোচিত হচ্ছেন না, ট্রাম্প থাকলে মিডিয়া তার চামড়া ছিঁড়ে ফেলত। যেমন ভারতীয় মিডিয়া করছে মোদির বিরুদ্ধে! কাবুলে তালেবানরা ক্ষমতাসীন হওয়ায় আশপাশে সব দেশ তটস্থ। তালেবানদের উত্থান ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির প্রেক্ষাপট নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হতে পারে। বাংলাদেশ বা ভারতে যারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে আনন্দিত, তারা আসলে বিকারগ্রস্ত, স্বাধীনতাবিরোধী ও কমবেশি মৌলবাদী। কারণ কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে তালেবানি তাণ্ডব সহ্য করা অসম্ভব। আফগানিস্তানে এতদিন ক্ষমতায় ছিলেন ‘ইসলামপন্থিরা’; এখন যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারাও ‘ইসলামপন্থি’। তাহলে আফগান মুসলমানরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে চাচ্ছেন কেন? তসলিমা নাসরিন বলেছেন, তারা আফগান ছাড়ছে ‘শরিয়ার ভয়ে’। বাংলাদেশে বা ভারতের তালেবান সমর্থকদের বুঝতে হবে, ‘শরিয়া’ তাদের জন্যও সুফল বয়ে আনবে না, শরিয়াভুক্ত কোনো দেশই বিশ্বাসযোগ্য নয়? মহাভারতের ‘গান্ধার’ রাষ্ট্রটি এখন আফগানিস্তান। কথিত আছে, গান্ধারের রাজকুমারী গান্ধারী যিনি অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী এবং একশত পুত্রের মা, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তার সব পুত্র নিহত হলে পুত্রশোকে গান্ধার রাজ শকুনীকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তোমার রাজ্যে কখনো শান্তি থাকবে না। কেউ কেউ বলছেন, এরপর থেকে গান্ধার বা আফগানিস্তানে কখনো শান্তি ছিল না, আপাতত শান্তির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তালেবানরা রাজধানী কাবুল দখল করলেও ‘গোকুলে’ বিদ্রোহীরা একত্রিত হচ্ছে। তালেবানবিরোধী আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র মাসুদ জুনিয়র তার সমর্থকদের ‘পানশি’ উপত্যকায় চলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। পানশি কখনো তালেবানের অধীনে যায়নি, এখনো নয়, এরা হয়তো বিদ্রোহী গ্রুপ হিসেবে তালেবানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লা শেখ, যিনি ১৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছিলেন, তিনি নিজেকে আফগানিস্তানের কেয়ারটেকার রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন। অনুমান করা হচ্ছে তিনি সম্ভবত পানশি উপত্যকায় রয়েছেন। অর্থাৎ আফগানিস্তানে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘নতুন খেলা’ শুরু হচ্ছে। তালেবান নৃশংসতার মধ্যেও মানুষ, বিশেষত নারীরা প্রতিবাদ করছেন। একদা চীনের চেয়ারম্যান মাও সেতুং বলেছিলেন, ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’, আফগানিস্তানে তালেবানরা এ উক্তি প্রমাণ করেছে। আগে যারা বলতেন, ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’, তারা কি এখন তালেবানদের সমর্থন করবেন? বাংলাদেশ কিছু সংখ্যক আফগানকে স্বল্পকালীন আশ্রয় দেয়ার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি ভালো। ভারত বেশি উদারতা দেখিয়ে আফগান শরণার্থী নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বুমেরাং হতে পারে। অর্ধশত মুসলিম দেশ যখন আফগান শরণার্থীদের নিতে অস্বীকার করছে, তখন ভারত না উন্নত বিশ্ব নিজের পায়ে ‘কুঠার’ মারছে না তো? এতসব দুঃসংবাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী সংবাদ হচ্ছে, কাবুলের একটি হিন্দু মন্দিরের একমাত্র পূজারি মেরে ফেললেও মন্দির ছেড়ে চলে যেতে রাজি নন। তালেবানরা তাদের দেশে ধর্মের নামে ৭০ হাজার মানুষ খুন করেছে। এই পূজারির ভাগ্যে কী আছে তা দেখার জন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। তালেবানরা যে কোনো অমুসলিমের বিরুদ্ধে, তাই ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘মধুময়’ হওয়ার বোধগম্য কোনো কারণ নেই? তালেবানের ভাঁড়ারে অনেক যুদ্ধাস্ত্র আছে, বারুদ আছে, কিন্তু ভাত নেই। তালেবানি রাজত্বে অনাহারের মুখে দেড় কোটি আফগান। যুক্তরাষ্ট্র আফগান সেন্ট্রাল ব্যাংকের ৯শ কোটি ডলার জব্দ করেছে। মার্কিন রাজস্ব দপ্তরে ‘তালেবান’ নিষিদ্ধ, তাই কোনো অর্থ যাবে না। মধ্যখান থেকে ভুগবে আফগান জনগণ, ভুলে গেলে চলবে না, এই আফগান জনগণ কিন্তু তালেবানকে সাহায্য-সমর্থন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

নিউইয়র্ক থেকে শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App