×

জাতীয়

অ্যাপার্টমেন্ট কেনা নিয়েই জাপানি স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ: ইমরান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২১, ১০:১০ পিএম

জাপানি দুই শিশুকে জিম্মা নিয়ে বিতর্কে বলা হয় ইমরান শরীফ নিজ সন্তানদের অপহরণ করে দেশে এনেছেন কিন্তু বাবা ইমরান শরীফ বলেছেন, তিনি নিজ সন্তানদের অপহরণ করেননি। তারা স্বেচ্ছায় তাদের বাবার কাছে এসেছে। সন্তানদের মা ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন, তাও সত্য নয়।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের অভ্যর্থনাকক্ষে বসে গণমাধ্যমে এমনটায় দাবি করেছেন ইমরান শরীফ। এ সময় তিনি বলেন, জাপানের টোকিও শহরে অ্যাপার্টমেন্ট কেনাকে কেন্দ্র করেই বিরোধের তৈরি হয়। তবে ইমরানের স্ত্রী নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, এটি অনেক সমস্যার একটি। এটিই একমাত্র সমস্যা নয়।

গত দুদিন থেকে শিশু দুটি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশের জিম্মায় আছে। আদালতের নির্দেশে আজ সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত শিশুদের সঙ্গে তাদের মা সময় কাটান। বেলা তিনটা থেকে মেয়েদের সঙ্গে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ইমরান শরীফ। তবে ইমরান নির্ধারিত সময়ের আগেই উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে অপেক্ষা করতে শুরু করেন। মায়ের মতো তিনিও তাঁর মেয়েদের জন্য রান্নাবান্না করে নিয়ে এসেছিলেন। মায়ের মতো এই বাবাও সন্তানদের জিম্মা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন।

ইমরান শরীফ বলেন, তাঁরা ২০০৮ সালে বিয়ে করেন। তাঁদের ১১, ১০ ও ৭ বছর বয়সী ৩টি মেয়ে রয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান কলেজের পাঠ চুকিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তড়িৎকৌশল নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। পরে কর্মসূত্রে জাপানে আসেন এবং নাকানো এরিকোকে বিয়ে করেন। নাকানো পেশায় চিকিৎসক। সপরিবার তাঁরা টোকিওতেই থাকছিলেন। তবে প্রায়ই পেশাগত প্রয়োজনে তাঁকে টোকিওর বাইরে যেতে হতো। এর মধ্যেই তিনি একবার জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুর টোকিওর বিলাসবহুল এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট কেনার পরিকল্পনা করছেন।

ইমরানের দাবি, ভালোভাবে সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুর অ্যাপার্টমেন্টটি কিনে ফেলেন। ওই অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা তাঁর ছিল না। তবু তাঁকে ৮০ শতাংশ ঋণ শোধ করার জন্য চাপাচাপি করেন স্ত্রী ও শ্বশুর। বছর দেড়েক ঋণ শোধ করার পর তিনি অপারগতার কথা জানান। তিনি অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ার একটি অ্যাপার্টমেন্টে উঠে যাওয়ার অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা শোনেননি।

শিশুদের বাবা বলেন, তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়নি। তাঁর স্ত্রী গত বছরের শেষ ভাগে একবার তিন মেয়েকে তাদের নানাবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওই সময়ও তাঁর বড় মেয়ে বাবার সঙ্গে থেকে যায়। এরপর স্ত্রী অপর দুই মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। এখন পর্যন্ত তিনি একাধিক চিঠি পেয়েছেন। এর একটি ছিল অ্যাপার্টমেন্টে থাকার জন্য ‘রেন্ট কনট্র্যাক্ট’ (বাড়িভাড়া চুক্তিপত্র)। একটি চিঠিতে তাঁকে তাঁর শ্বশুর চাবি রেখে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সবশেষ যে দুটি চিঠি তিনি পান, তার একটি পাঠিয়েছিলেন তাঁর শ্বশুর। তাঁরা অ্যাপার্টমেন্টে এসে থাকবেন, এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন ওই চিঠিতে। অন্য চিঠিটি ছিল তাঁর স্ত্রী নাকানোর পাঠানো। যেখানে তিনি আলাদা থাকা ও পরবর্তীকালে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ইমরান বলেন, তিনি তাঁর মেয়েকে সব কথা খুলে বলেন। এরপর ২১ জানুয়ারি স্কুল থেকে ফেরার পথে বড় দুই মেয়েকে নিয়ে জাপানেই অন্য একটি বাসায় ওঠেন। পরে পাসপোর্টের কাগজপত্র ঠিকঠাক করে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিয়ে আসেন তাদের। তাঁর স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে জাপানের আদালতে তিনটি মামলা করেছেন।

৩১ আগস্ট সন্তানসহ হাজির হওয়ার কথা ছিল ইমরান শরীফের। তার আগেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২২ আগস্ট রাতে শিশুদের নিজেদের জিম্মায় নিয়ে আসে। শিশুরা কষ্টে পড়েছে বলে মন্তব্য তাঁর। স্ত্রীকে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া ও পরবর্তীকালে নাকানোর চোখ বেঁধে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করানোর অভিযোগ উঠেছে ইমরানের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। ইমরান বলেছেন, নাকানোকে তিনি কোভিড পরীক্ষা করিয়ে আসতে বলেছিলেন।

আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে আইনি লড়াই করছেন ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তিনি বলেন, জাপানের আদালতের নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়। সেখানেও অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে বিরোধের উল্লেখ আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App