×

খেলা

নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে আশাবাদী সাবের হোসেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২১, ০৮:০৬ পিএম

নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে আশাবাদী সাবের হোসেন

‘মেয়েরাও পারে’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। ছবি: ভোরের কাগজ

ক্রিকেট বাংলাদেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিচয়, এশিয়ান গেমসের স্বর্ণপদক। কিন্তু সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরাও একটি অতৃপ্তি রেখে যাচ্ছেন বারবার। মেয়েদের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো শিরোপা জিতে উৎসবের সুযোগ করে দিতে পারেননি তারা।

তিন বছর আগে সেই অতৃপ্তি ঘুচিয়েছেন মেয়েরা। এতদিন মেয়েদের এশিয়া কাপের ইতিহাস মানেই ছিল শিরোপা ভারতের এমন একটা ধারণা সবারই হয়ে গিয়েছিল। ভারতের ধারে কাছে আসার মতো কোনো দলই এশিয়ার নারী ক্রিকেটে ছিল না।

২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে সেই ভারতকেই ৩ উইকেটে হারায় বাংলাদেশের মেয়েরা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারতের ১১২ রান বাংলাদেশ টপকে যায় শেষ বলে। প্রথমে বল হাতে ও পরে ব্যাটিংয়েও রুমানা আহমেদের দারুণ পারফরম্যান্সের পর সালমাকে নিয়ে জাহানারা আলমের শেষ বলে ২ রান নিয়ে ম্যাচ জেতানোর মুহূর্তটি রূপকথাকেও হার মানিয়েছিল সেদিন।

রবিবার (২২আগস্ট) দুপুরে ঢাকা ক্লাবে সাবেক ক্রিকেটার ও সংগঠক মনোয়ার আনিস খান মিনুর নারী ক্রিকেটারদের পথচলা নিয়ে গ্রন্থ ‘মেয়েরাও পারে’ এর মোড়ক উন্মোচন হয়। নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে বাংলাদেশে এটিই প্রথম কোনো গ্রন্থ।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আশরাফুল হক, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, রাফিয়া আক্তার ডলি, সৈয়দ শাহেদ রেজা, শাকিল কাসেম, ওমর খালিদ রুমি, নারী ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক আইভী, নারী ক্রিকেট দলের সাবেক হেড কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমসহ আরো অনেকে।

মনোয়ার আনিস খান ক্রীড়াঙ্গনে মিনু নামেই সমাদৃত। মিনু নিজে ক্রিকেট খেলেছেন। পরবর্তীতে ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নারী উইংয়ের দায়িত্বেও ছিলেন। ‘মেয়েরাও পারে’ গ্রন্থে তিনি নারী ক্রিকেটে তার পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।

ঢাকা ক্লাবে ‘মেয়েরাও পারে’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, নারীরা আমাদের ক্রিকেটে প্রথম এশিয়া কাপের ট্রফি দিয়েছে। এশিয়ান গেমসেও নারীদের পদক রয়েছে। সামনে কমনওয়েলথ গেমসে নারী ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত থাকছে।

আশা করি সেখানে আমরা পদকের জন্যই যাব। আমাদের দেশে নারী ক্রিকেট এগিয়ে গেলে দেশের ক্রিকেটও এগিয়ে যাবে। ‘মেয়েরাও পারে’ গ্রন্থের লেখক মনোয়ার আনিস খান মিনুকে নিয়মিত লেখালেখি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের হাত ধরে অলিম্পিকে পদক জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক দিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক যাত্রা শুরু করে। এরপর নিয়মিতভাবে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ নামক এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে আসছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

এ পর্যন্ত ১০টি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কোনো পদক জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। মিনুর গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা ১০টি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছি। একটাতেও কোনো পদক পাইনি। আমি মনে করি নারী ক্রিকেটারদের হাত ধরে আমরা প্রথম পদকটা পেতে পারি।

অলিম্পিকে অবশ্য ক্রিকেটের ইভেন্ট বন্ধ আছে। আইসিসি চাইছে ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে আবার ক্রিকেট ফেরাতে। এজন্য অলিম্পিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে জোর আলোচনা। এদিকে সাবের হোসেন চৌধুরীও জানিয়েছেন, অলিম্পিকে নারী ক্রিকেট দিয়ে পদক আনতে গেলে এখনই হাতে নিতে হবে বেশকিছু পদক্ষেপ।

তিনি আরো বলেন, এখন থেকে যদি আমরা পরিকল্পনাগুলো হাতে নেই, বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ে নারী ক্রিকেটকে যদি প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়। আমি মনে করি এটা কিন্তু অনেক বড় একটা সম্ভাবনা আছে। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে অবশ্যই সম্ভব।

ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক মিনুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই বইটি ইংরেজিতে অনূদিত হলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নারীদের ক্রিকেট সম্পর্কে জানতে পারবে।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন এ রকম যে কোনো উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে। যে কোনো সহায়তায় আমরা পাশে থাকব।

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেটে নারীদের ঐতিহ্যের সম্পর্কে বলেন, ১৯৮৩ সালে আমরা পশ্চিমবাংলায় সফরে গিয়েছিলাম। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারত টেস্ট চলছিল ইডেনে। আমাদের স্বপ্ন ছিল ইডেনে খেলা। ইডেনে গিয়ে আমরা জেনে গর্বিত হই, আমাদের আগে নারীরা ইডেনে খেলেছেন।

‘মেয়েরাও পারে’ বইটি লেখার কারণ সম্পর্কে মিনু বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের অবদান অনেক। ক্রিকেটে নারীদের আত্মত্যাগ রয়েছে অনেক। অনেক নারী ক্রিকেটে আসছে। আমার এই গ্রন্থে নারীদের সংগ্রাম ও ক্রিকেটের সাফল্যগুলো রয়েছে।

এই গ্রন্থ আশা করি নারী ক্রিকেট উন্নয়নে ও নারীদের ক্রিকেটে আগ্রহ বাড়াতে সক্ষম হবে। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক নারী ক্রিকেটার ও আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকির জেসি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App