শিল্পকর্মে গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২১, ০৯:৩৩ পিএম
শনিবার সন্ধ্যায় একাডেমির নন্দনমঞ্চের দক্ষিণ পাশের লবিতে শুরু হয় এই প্রদর্শনী।
রাস্তায় ছোপ ছোপ রক্ত। ছড়ানো-ছিটানো অসংখ্য স্যান্ডেল ও জুতো। সারিবদ্ধভাবে সাজানো রক্তাক্ত ২৪টি লাশ। পাশেই জ্বলন্ত সাদা মাইক্রোবাস থেকে বের হওয়া ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন শরতের বাতাস। গ্রেনেডের আঘাতে বিধ্বস্ত গাড়ির ভেতরে রক্তে রঞ্জিত কয়েকটি লাশ। অন্যপাশে গ্রেনেডের আঘাতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়া ক্ষত-বিক্ষত মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইভি রহমান কাতরাচ্ছেন মৃত্যু যন্ত্রণায়। গা শিউরে উঠা লোমহর্ষক এই স্থাপনা শিল্প প্রায় ১৭ বছর আগের সেই ভয়াবহতাকেই যেন মনে করিয়ে দেয়। আর ক্ষণে ক্ষণে যন্ত্রশিল্পীদের ঢাকঢোলের করুণ সুর সেই ভয়াবহতাকে আরো লোমহর্ষক করে তোলে। স্থাপনাশিল্পে একখণ্ড বঙ্গবন্ধু এভিনিউই চিত্রিত হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে। ভয়াবহ একুশে আগস্টের ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে লোমহর্ষক এমন দৃশ্যকল্প নিয়েই শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ‘আগস্ট রিপিটেড অ্যাটেম্পট’ শিরোনামের তিনদিনের প্রদর্শনী।
শনিবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় একাডেমির নন্দনমঞ্চের দক্ষিণ পাশের লবিতে শুরু হয় এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, একুশে আগস্টের ভয়াবহতা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমির এই প্রয়াস। শিল্পের আলোয় নতুন প্রজন্মকে আমরা আলোকিত করতে চাই। তারা যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে এবং সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব মো.আছাদুজ্জামান, চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিমসহ অন্যান্য পরিচালক এবং স্থাপনাশিল্প প্রদর্শনীর কিউরেটর শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরী। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন- সুজন মাহাবুব, সাদিয়া বৃষ্টি, সবুজ, আমরিন প্রমি, রনি, অনুরাধা, সাগর, মংসেন, হুমায়রা নীড়, অনিক, বিশাল, মুন জেরীন, জোবায়ের ও অর্নব।
গ্রেনেড হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার এক নাটকীয় কৌশল অবলম্বন করে। মামলার আলামত নষ্ট ও জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করার অপচেষ্টা করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। লাইভ পারফরমেন্সের মাধ্যমে জজ মিয়াকেও অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থাপন করে শিল্পীরা। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই প্রদর্শনী। সোমবার শেষ হবে স্থাপনাশিল্পের তিনদিনের এই প্রদর্শনী।
প্রসঙ্গত, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভা চলাকালীন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ভাগ্যবশত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের ওই সময়কার সাধারণ সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪জন শহীদ হন ও প্রায় তিনশত নেতাকর্মী আহত হন। বর্বরোচিত সেই হামলায় পায়ের জুতা, স্যান্ডেল, ঘড়ি, মানিব্যাগ, চশমা, ব্যানার-ফেস্টুন, রক্ত ভেজা শহীদদের লাশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পড়ে থাকে ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে।