×

জাতীয়

তারেকের আশ্বাসেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: জয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২১, ০৯:১৮ পিএম

আর একদিন পরেই সেই ভয়াবহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার শোকাবহ দিন। এ দিনটি নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) একটি স্টেটাস দিয়েছেন। এতে তিনি  ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শাহেদ নূর উদ্দিনের দেওয়া ওই রায়ের বরাত দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়  নিজের স্ট্যাটাসে জানান,  বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তত্কালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের আশ্বাসেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।
সজীব জয় ওই স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, এ  হামলার ব্যাপারে তত্কালীন প্রশাসনের প্রশাসনিক সহায়তাও পেয়েছিল জঙ্গিরা। হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগীরা গ্রেনেড হামলার কিছুদিন আগে বনানীর হাওয়া ভবনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তখন সেখানে উপস্থিত তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তত্কালীন মন্ত্রী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সেনা গোয়েন্দা সংস্থার তত্কালীন পরিচালক সিআইবি মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের তত্কালীন ডিজি ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুর রহিমের সঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক করেন। বৈঠকে তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করার সহযোগিতা চায় জঙ্গিরা। তারেক রহমান উপস্থিত সবার সামনে জঙ্গিদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আর ওই হামলার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করে তার দলকে নেতৃত্বশূন্য করা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সব বিষয় তুলে ধরেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শাহেদ নূর উদ্দিন।
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র আরও বলেন, মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন, জব্দকৃত আলামত, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, গ্রেনেড হামলা চালানোর হীনউদ্দেশ্য হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হুজি, হিজবুল মুজাহিদীন, লস্কর-ই-তৈয়বা, তেহরেকি জেহাদী ইসলাম, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের জঙ্গি কর্মকাণ্ড এদেশে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়া; স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এ ছাড়া অবস্থানগত ও ক্ষমতাগত লাভের উদ্দেশেও এখানে কাজ করেছে বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়।
May be an image of 3 people and text that says 'মুফতি আব্দুল হান্নান লুতফুজ্জামান বাবর হারিছ চৌধুরী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহদ হত্যা ও বিশ্ষোরক মামলায় ট্রাইব্যুনালের পূর্ণাঙ্গ রায় তারেকের আশ্বাসেই २১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা'
শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা আরও জানান, রায়ে বলা হয়, এ উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০২ সালের জুলাই মাসে মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের কাছে ও ২০০৩ সালে একই এলাকার সাত গম্বুজ মসজিদে, ২০০৪ সালের প্রথম ও আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাওয়া ভবনে, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর সরকারি বাসভবন ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সভা করে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো আসামিরা। এসব সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামি বাবর, রেজ্জাকুল, রহিম, পিন্টু, তারেক, হারিছ, কায়কোবাদের কাছ থেকে জঙ্গিরা প্রশাসনিক সুবিধা নেয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় হামলার কাজটি করা তাদের জন্য সহজ হবে ভেবে ২০০৪ সালের প্রথম দিকে এমপি কায়কোবাদের সহযোগিতায় হাওয়া ভবনে গিয়ে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পরিচিত হন জঙ্গিরা।
জয় জানান, রায়ে আরও বলা হয়, রেজ্জাকুল ও রহিম ঘটনার দিন গ্রেনেড হামলার বিষয় অবগত থেকেও গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন। এভাবে নীরব থেকে প্রশাসনিক সহায়তায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। শতাধিক নেতা-কর্মী, সমর্থক, আইনজীবী ও সাংবাদিক আহত হন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। রায়ে বলা হয়, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান বলেছেন নির্বিঘ্নে গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য তারা প্রশাসনিক সহায়তা পেয়েছেন। আর ওই গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনের নাম তত্কালীন আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরীর সময় করা তদন্তে প্রকাশ পায়। কিন্তু উনি তাজউদ্দিনকে এই মামলায় গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে এটা স্পষ্টত যে জঙ্গিরা প্রশাসনিক সহযোগিতায় এ হামলা পরিচালনা করেন। হামলাকারীদের বিষয়ে জানা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের রক্ষা করতে প্রলোভন, ভয়-ভীতি দেখিয়ে অন্য লোকের উপর দায় চাপিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার লক্ষ্যে জজ মিয়া, আবুল হাশেম রানা ও শরিফুল ইসলামদের দ্বারা মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ভুল রেকর্ড লিপিবদ্ধ করান। একইসঙ্গে অপরাধীদের রক্ষায় ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও গ্রেনেড সরবরাহকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিদেশে পাঠিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত এ দুটি মামলায় গত ১০ অক্টোবর আসামি বাবর ও পিন্টুসহ ১৯ জনকে ‘ডাবল’ মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। দণ্ডিতদের মধ্যে অধিকাংশই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা। একই অপরাধে তারেক, হারিছসহ ১৯ জনকে ‘ডাবল’ যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। দুটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় গত মাসে প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App