×

অপরাধ

কাজী আরেফ হত্যা: ২২ বছর রাজশাহীতে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রওশন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২১, ০২:২০ পিএম

কাজী আরেফ হত্যা: ২২ বছর রাজশাহীতে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রওশন

আসামি রওশন

বহুল আলোচিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ হত্যাসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মণ্ডল নিজের পরিচয় গোপন করে পালিয়ে ছিলেন রাজধানীতে।

১৯৯৯ সালে এই হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি রাজশাহীতে যেয়ে নিজের নাম পরিচয় পরিবর্তন করে গাজীপুরের ঠিকানায় উদয় মণ্ডল নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের জন্য তিনি গরুর খামার তৈরি করে। র‍্যাবের অভিযানে বহুল আলোচিত কাজী আরেফ হত্যাকান্ডসহ একাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন আলী ওরফে উদয় মন্ডল গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব দাবি করছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন ছিলেন একজন সিরিয়াল কিলার। কাজী আরেফ ছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আরও কয়েকজনকে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, এলিট ফোর্সটির লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে, গতকাল বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর শাহমখদুম থানাধীন ভারালীপাড়া এলাকা থেকে মো. রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মন্ডলকে গ্রেফতার করে।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায় একটি সভা চলাকালীন সময়ে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত গুলি বর্ষণে কাজী আরেফসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় ২৯ জনকে আসামি করে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা দায়রা জজ আদালত ১০ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন।

আসামিরা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট উচ্চ আদালত ৯ জন আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন এবং বাকি ১৩ জনকে খালাস প্রদান করেন। তন্মধ্যে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি তিনজন আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। এছাড়া একজন আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত অপর ৫ আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে র‍্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে।

গ্রেফতারকৃত রওশন'কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাজী আরেফ হত্যাকান্ডে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। এছাড়াও সে আরও কয়েকটি হত্যাকান্ড; সহিংসতা ও ডাকাতির সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রদান করেছে।

রওশন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শুরু করে রাজবাড়ীস্থ একটি কলেজ থেকে বিএ পাশ করে। এরপর ১৯৯২ সাল থেকে সীমান্তবর্তী চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজে সম্পৃক্ত হয়। এ সমস্ত কাজে সে এলাকায় সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলে। যাদের সহযোগিতায় সে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করত। তার সাথে চরমপন্থী দলের সখ্যতাও তৈরি হয়। ১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয়। এ সময় মাঝে মধ্যে সে গা ঢাকা দিতে রাজশাহীতে অস্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করে।

সে রাজশাহীতে পরিচয় গোপন করতে “আলী" নামে পরিচয় দিত। এছাড়া রাজশাহীতে তার আদি নিবাস গাজীপুর' বলে সবাইকে জানাত। প্রাথমিক পর্যায়ে সে একটি গরুর খামার স্থাপন করে। পরবর্তীতে সে জমি কেনা-বেচার ব্যবসায় যুক্ত হয়। এভাবে ধীরে ধীরে সে রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। রাজশাহীতে অবস্থানকালে সে "উদয় মন্ডল" নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। তবে সে নিজ এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। প্রভাব বিস্তার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে সে মাঝে মধ্যেই নিজ এলাকায় গমন করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেই আবারও গা ঢাকা দিত।

কাজী আরেফ হত্যাকান্ড সম্পর্কে সে জানায়, ওই হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়াও সমন্বয় এবং পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এছাড়া সে চেয়ারম্যান বাকী ও স্থানীয় আমজাদ হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গেক তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। তার নামে ২০০৫ সালে গাংনীতে একটি ডাকাতি মামলাও রয়েছে।

র‍্যাব জায়ায়, ১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান আব্দুল বাকীকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের তেরাইল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করে রওশন। ওই ঘটনায় চেয়ারম্যান বাকী তার ছেলে আবদুল্লাহ বাশারকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার পথে রওশন ও তার সহযোগী অন্য একটি মোটরসাইকেলযোগে তাদের পথ অবরোধ করে। এরপর আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রথমে চেয়ারম্যান বাকীকে এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের ছেলে আবদুল্লাহ বাশারকে গুলি করে। ঘটনাস্থলে চেয়ারম্যান বাকী নিহত হন এবং তার ছেলে আবদুল্লাহ গুরুতর আহত হন। এ হত্যাকান্ডের বিচারকার্য শেষে রওশন আলীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।

রওশন আলী উদয় মন্ডল ২০০০ সালে ২১ জুন স্কুল শিক্ষক আমজাদ হত্যা মামলার ১ নম্বর চার্জশীটভুক্ত পলাতক আসামি। বর্ণিত হত্যাকান্ডেও সে তার সহযোগীসহ পথিমধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে প্রকাশ্যে দিবালোকে স্কুল শিক্ষককে গুলি করে হত্যা করে।

তিনি বলেন, রওশন বিভিন্ন মামলার মৃত্যুদন্ড ও যাবতজীবন সাজাপ্রাপ্ত একজন দাগী ও কুখ্যাত পলাতক আসামি। সে আত্মগোপন ও গা ঢাকা দেওয়ার কৌশলে হত্যাকান্ডসহ ডাকাতি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। সে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা, অর্থ, চাঁদাবাজী, আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ ও এলাকার বিভিন্ন কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা ইত্যাদি অপরাধগুলো সংগঠিত করেছে বলে জানায়। কাজী আরেফ, চেয়ারম্যান বাকী, স্কুল শিক্ষক আমজাদ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App