×

সারাদেশ

দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুই শিশুর মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২১, ০৬:৩১ পিএম

দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুই শিশুর মৃত্যু

ছবি: ভোরের কাগজ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। এ পর্যন্ত ৩০টি গ্রামের অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শতশত পরিবার চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বহুগুণ। বন্যা দুর্গত এলাকায় এখনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি।

বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে বন্যার পানিতে ডুবে সমবয়সী দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। কয়েকশ পরিবার চরম দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে।

জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। বর্তমানে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। এ পর্যন্ত উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০-২২টি গ্রাম এবং চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চারদিকে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় এবং বাড়িঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় ওইসব গ্রামের লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।

অন্যদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বহু ফসলের মাঠ। এসব মাঠের জমিতে পাট, আমন ধান, বিভিন্ন সবজি ও বাদামসহ নানা ধরনের ফসল ফসল রয়েছে। এছাড়া ভেসে গেছে বহু পুকুরের চাষকৃত মাছ। ভেঙে পড়ছে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি। ডুবে গেছে বিভিন্ন সড়ক। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। আরো অনেক গ্রাম নতুনভাবে বন্যা কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে ওইসব গ্রামের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বন্যা কবলিত গ্রামগুলোয় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। উপজেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ত্রাণের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বুধবার দুপুরে চিলমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ খারিজারথাক গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে সমবয়সী দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো, ওই গ্রামের ছিদ্দিক মোল্লার ছেলে সিয়াম (৭) ও মনি জমাদারের মেয়ে ঝুমা আক্তার (৭)। বন্যার পানিতে বাড়ির আশপাশের জলাশয় ভরে ওঠায় সেই পানিতে খেলতে গিয়ে তারা ডুবে মারা যায়। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলার হার্ডিঞ্জ সেতু পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী কয়েক দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে পাউবো সূত্র জানায়।

এদিকে বন্যার মাঝেই উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই ইউনিয়নের নদীভরাট, চিতলমারী, রুইমারী, চৌদ্দহাজার ও নতুন চরসহ আরো কয়েকটি গ্রাম ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে হাটখোলাপাড়া, ভুরকাপড়া ও কোলদিয়াড় এলাকায় প্রবল নদী ভাঙনে জমি জায়গা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রাইমারি ও হাইস্কুল এবং ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন খুঁটি হুমকির মুখে রয়েছে। ভুরকা হাটখোলা পাড়া ও কোলদিয়াড় এলাকায় পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। সংসদ সদস্য আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশার উদ্যোগে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল জানান, এ পর্যন্ত সেখানকার প্রায় ৬০-৬৫ ভাগ বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে এসব গ্রামের বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। কিন্তু পৌঁছেনি কোনো সাহায্য সহায়তা। চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, তার ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। বুধবার বন্যার পানিতে ডুবে সেখানকার দুই শিশু মারা গেছে। দুর্গতদের সহায়তায় সংশ্লিষ্টদের দ্রুত এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান, নদী ভাঙনের কবলে তার ইউনিয়ন ব্যাপক হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে সংসদ সদস্যের উদ্যোগে নদীর পাড়ে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢোকার খবর পেয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ একটি টিম সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ত্রাণ তৎপরতাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন ইউএনও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App