×

জাতীয়

১০ বছরে ২০০ নারী পাচার করে কাল্লু ও নাগিন সোহাগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম

১০ বছরে ২০০ নারী পাচার করে কাল্লু ও নাগিন সোহাগ

নারী পাচারে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ছবি: ভোরের কাগজ

আলোচিত মা ও মেয়ে পাচারের ঘটনায় জড়িত ৩ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার তিনজন হলো- পাচারকারী চক্রের হোতা মো. কালু ওরফে কাল্লু (৪০) তার ভাগিনা ও অন্যতম সহযোগী নাগিন সোহাগ ওরফে সোহাগ (৩২) এবং বিল্লাল হোসেন (৪১)। প্রায় ১০ বছর ধরে দরিদ্র ও নিন্ম আয়ের পরিবারের বেড়ে উঠা কিশোরদের ভারতে পাচার করে আসছিলো চক্রটি। তারা মূলত যৌন বৃত্তির জন্য নারী পাঠাতো। তাদের ফাঁদে পা দেয়া ভিকটিমদের ১ থেকে দেড় লাখ টাকায় পার্শ্ববর্তী দেশের দালালের কাছে বিক্রি করা হতো। কাল্লু-নাগিন চক্রে ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। তাদের কাজে লাগিয়ে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নারী পাচার করেছে তারা।

পাচারের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সোমবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে পল্লবী এলাকার ১৭ বছরের এক তরুণীকে ভারতে পাচার করা হয়। ওই তরুণীর মা পরিচয় গোপন করে মেয়েকে উদ্ধার করতে পাচার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তাকেও মেয়ের মত চক্রটি ভারতে পাচার করে দেয়। পরে তরুণীর মা কৌশলে ওই চক্রটির হাত থেকে পালিয়ে যান ও উত্তর দিনাজপুরে একটি নিষিদ্ধ পল্লীতে মেয়েকে খুঁজে পান। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মা-মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলে আমরা তদন্ত শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত রবিবার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী ও মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এ চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নারী ও তরুণীদেরকে পাচার করত। মূলত তাদের টার্গেট ছিল, দরিদ্র ও নিন্মমধ্যবিত্ত তরুণী। নাগিন সোহাগ এ চক্রের হোতা কাল্লুর ভাগিনা ও তার অন্যতম সহযোগী। এছাড়া গ্রেপ্তার বিল্লাল সীমান্তবর্তী এলাকার সমন্বয়ক। দেশেও ২০-২৫ জন এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়। পাচার চক্রে নারী সদস্যও রয়েছে। মূলত যৌন বৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই ভিকটিমদের পাচার করা হত বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়। চক্রটি ঢাকার মিরপুর, তেজগাঁও, গাজীপুরসহ বেশকয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, ভুক্তভোগীদেরকে অবৈধভাবে নৌ-পথে ও স্থলপথে সীমান্ত পারাপার করানো হতো। তারা কয়েকটি ধাপে পাচরের কাজটি সম্পাদন করত। প্রথমত নাগিন সোহাগ ও এ চক্রের অন্য সদস্যরা অল্প বয়সী তরুণীদেরকে পার্শ্ববর্তী দেশে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। প্রলুব্ধ ভিকটিমদের পরে কাল্লুর কাছে বুঝিয়ে দেয়া হতো। পরে সে নিজেই অথবা ক্ষেত্রবিশেষ সোহাগসহ অন্যদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকার বিল্লালের সেইফ হাউজে নিয়ে যেতো ফাঁদে পা দেয়া তরুণীদের। গ্রেপ্তার বিল্লাল মূলত চারটি সেইফ হাউজ চালাতো। সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে ভিকটিমদের জলপথ দিয়ে নৌকাযোগে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করানো হতো। এছাড়া স্থল পথে পাচারের ক্ষেত্রে অরক্ষিত অঞ্চল ব্যবহার করতো তারা। পাচার হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকদিন ভিকটিমদের অবস্থান করানো হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে সড়কপথে তাদেরকে চাহিদামত বিভিন্ন স্থানে পাঠানোসহ বিক্রি করা হতো। এভাবেই ভিকটিম মেয়েটিকেও পাঞ্জিপাড়া যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়। পরে তার ‘মা’ নিজে পাচার হয়ে যৌনপল্লী থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্যদের সহযোগীতায় মেয়েকে মুক্ত করে নিয়ে আসে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App