×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবরাও একদিন ধরা পড়বে: শেখ হাসিনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২১, ০৮:১৭ পিএম

বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবরাও একদিন ধরা পড়বে: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবরাও একদিন ধরা পড়বে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড যারা ঘটিয়েছে, যারা হত্যাকারীদের পাশে ছিল, আর যারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, সবাই সমানভাবে দোষী। অনেক ঘটনা জানি। আগে হত্যার বিচার করাটা খুবই জরুরী ছিল, সেটা করেছি। যারা জড়িত ছিল, ধীরে ধীরে একদিন তারাও বের হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়।

সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সভাপতির বক্তব্যে এমন কথা বলেন তিনি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে কারবালার সঙ্গে তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য যখন কোনো হত্যাকাণ্ড হয়, তখন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান শুধু তাদেরকেই হত্যা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটল, যা একমাত্র কারবালার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। সেখানে শিশু-নারী কাউকেই খুনিরা রেহাই দেয়নি।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। সভার শুরুতেই ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় বাহাত্তর সাল থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা দেশে ফেরার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্ত হলো। জাসদ সৃষ্টি হলো। পাকিস্তানী দোষর, বড় বড় নেতাদের অনেকেই পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেছে। যারা এদেশে ছিল, তারা যেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেল, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গেল।

তিনি বলেন, যেখানে একটা যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশ গড়তে বছরের পর বছর সময় লাগে, সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বছরও সময় দেয়া হলো না। সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনা শুরু হয়ে গেল, ধৈর্য ধরা হলো না। এটা নাই, ওটা নাই, এটা হবে না কেন, হচ্ছে না কেন, নানা কথা লেখা হলো। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, কারা সেগুলো লিখেছিল, কাদেরকে খুশি করতে? কারা এই হত্যাকাণ্ডের অবস্থানটা তৈরী করছিল? আমি জানি, যারা সরাসরি হত্যা করেছে, নিজেরা স্বীকার করেছে। বিবিসির সাক্ষাৎকারে রশিদ-ফারুক বলেছিল, যে তারা এই হত্যা করেছে। কারণ একটা চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়েও তাকে জনগন থেকে দূরে সরাতে পারে নাই। আর সরাতে পারেনি বলেই, এই হত্যাকান্ডটা ঘটিয়েছে। আজকে কেউ কেউ কমিশন গঠনের কথা বলছেন। এ দাবি করছেন, ও দাবি করছেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু সেইসঙ্গে এই জিনিসগুলো পড়ে দেখেন, অনেককিছু বিষয় সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার বাবা একটা জাতির জন্য জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল। নিজের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। শুধু দেশের মানুষের কথা ভাবতেন। বাংলাদেশের মানুষ ঠিকমতো খেতেও পারত না, চিকিৎসা নাই, শিক্ষা নাই, ঘরবাড়ি নাই। শোষিত-বঞ্চিত মানুষগুলির ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। ভাবতেন দেশ যদি স্বাধীন হয়, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তার সফলতা সেখানেই একটি জাতিকে তিনি দীর্ঘ সংগ্রামের পথ দিয়ে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় এনে দিয়েছিলেন।

পলাতক খুনিদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের বিচার হয়েছে। পলাতদের মধ্যে ডালিম প্রথম থেকেই পাকিস্তানে আছে। রশীদ পাকিস্তান ও লিবিয়া এই দুই জায়গায়ই থাকে। পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে মাঝেমাঝে ডালিম কেনিয়া বা অন্যান্য দেশেও যায়। নূর কানাডায় আর রাশেদ আমেরিকায়। মোসলেহউদ্দিনের খোঁজ মাঝেমাঝে পাওয়া যায়। পাকিস্তানকে বহুবার বলা হয়েছে, তারা স্বীকারও করেনা, দেয়ও না। নূরকে ডিপোর্ট করার কথা ছিল। সেই সময় কানাডার হাইকমিশনার ছিল মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে। সে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, সেটা সে করেনি। তবে আমাদের প্রবাসী বাঙালি ও আমরা চেষ্টা করছি তাকে ফিরিয়ে আনতে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে মুক্তি দেয়া, তাদের জীবনটা উন্নত করা, সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে আলো জ্বালা, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করা, যেটা বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল, সেটা যখন করতে পারবো, আমি মনে করব, এই হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ সেদিনই আমি নিতে পারব। আজকে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।

এসময় আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩১ জুলাই আমরা দুই বোন রেহানা আর আমি জার্মানীতে পৌঁছাই। ১৩ আগস্ট শেষ কথা হয় আমাদের। তার দুইদিন পরই এই ঘটনা। ৮১ সালে ফিরে আসি। যখন আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচন করে। অনেক বাঁধা, অনেক সমস্যা, অনেক কিছু আমাকে পার করতে হয়েছে। সেগুলিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আমি আমার চলার পথ ঠিক রেখেছি। আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এটা সফল হবে। এর সফলতা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের ঘরে পৌঁছাবে, তাদের জীবন উন্নত হবে। এই একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে সমস্ত বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করেছি। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ দেশবাসী সবার সহযোগিতা পেয়েছি। হ্যাঁ, তাৎক্ষণিক কিছু পাওয়ার জন্য যারা অস্থির হয়ে পড়ে, তারা যেকোনো দুঃসময় দেখলেই ঘাবড়ে যায়, ভয় পেয়ে যায়। সেটা আসে তাদের মধ্যে, যাদের অর্থের লোলুপতা থাকে। রাজনীতির মাধ্যমে ব্যাপক ধনসম্পদ কামাই করে, তারা অর্থের লোলুপতা দিয়েই বাঁচে, দুঃসময়ে দাঁড়াতে পারে না। আত্মসমর্পণ করে। আর যারা এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারে, তারা যেকোনো বাঁধা আসুক, তা অতিক্রম করতে পারে- এই কারণে যে সততাই শক্তি। আর এই সততা দিয়েই এগিয়ে যাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষের জন্য। রক্ত দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আমিও সেই রক্ত দিতেই বাংলাদেশে পা রেখেছি। আমি জানি, আমার জীবনের কোনো মায়া নেই, কোনোকিছু চাওয়া নেই। একটাই চাওয়া, যে আদর্শ নিয়ে আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন। সেই আদর্শ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। ১৫ আগস্টে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা হবে, যে ওই রক্ত কখনো বৃথা যায়নি, বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে দেব না। এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার বাবা-মা, ভাইয়ের আত্মা যেন শান্তি পায়, সেটাই চাই। অনেকদূর এগিয়েছি। সূবর্ণজয়ন্তীও পালনের সুযোগ পেয়েছি। মৃত্যুকে সামনাসামনি দেখেছি। কোনোদিন ভীত হইনি, হবোও না। কারণ আমি তো প্রস্তুত। আমি তো জানি, যেকোনো মুহুর্তে আমাকে চলে যেতে হবে। যতটুকু সময় আছে, দেশের জন্য কতটুকু করতে পারি, সেটাই বড় কথা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App