×

জাতীয়

এফএএস ফাইন্যান্সের ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২১, ১২:৫১ পিএম

এফএএস ফাইন্যান্সের ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক

দুদক / ফাইল ছবি

পিকে হালদার চক্রের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এফএএস ফাইনান্সের আট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে দুদকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে, তলবি নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে এই আটজন সকাল ৯টার সময় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন। একই ইস্যুতে পর্যায়ক্রমে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ও বুধবার (১৮ আগস্ট) আরো ২২ ব্যক্তি‌কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হ‌বে।

এর আগে, গত ৯ আগস্ট এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার অংশ হিসেবে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৩০ কর্মকর্তাকে তলব করে দুদক। তলবকৃতদের মধ্যে ২৬ জন এফএএস ফাইন্যান্সের ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ৪ জন।

আজ যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তারা হলেন, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক নিয়াজ আহমেদ ফারুকী, দিপক কুমার চক্রবর্তী, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এসভিপি ও কর্পোরেট ফিন্যান্স অ্যান্ড রিকভারি এবং আইন বিভাগের প্রধান জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, প্রিন্সিপাল শাখার ব্যবস্থাপক তানভির আহমেদ কমল, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট মীর ইমাদুল হক, ভিপি মো. মনির হোসেন, সিনিয়র অফিসার মৌসুমী পাল, ম্যানেজার আহসান রাকিব, সাবেক সিনিয়র অফিসার তাসনিয়া তাহসিন রোজালিন, সাবেক ভিপি মো. মনিরুজ্জামান আকন্দ, সাবেক এসভিপি ও এসএমই ফিন্যান্সের প্রধান মো. আজিমুল হক এবং এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক এসইভিপি ও সিএডির প্রধান প্রাণ গৌরাঙ্গ দে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তারা হলেন, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল হক গাজী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক এম. এ হাফিজ, মো. আবুল শাহজাহান, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, মাহফুজা রহমান বেবী, সোমা ঘোষ, ডা. উদ্দাব মল্লিক, মো. আতারুল ইসলাম এবং অরুণ কুমার কুণ্ডু।

১৮ আগস্ট (বুধবার) যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক অঞ্জন কুমার ঘোষ ও প্রদীপ কুমার নন্দী, স্বতন্ত্র পরিচালক বীরেন্দ্র কুমার সোম, সত্য গোপাল পোদ্দার, মোস্তফা আমিনুর রশীদ, পরিচালক মোস্তফা সাহেব, গ্রীণলাইন ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন কুমার দাস, জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজের গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী এবং তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্স লিমিটেডের মো. মুনিরুল ইসলাম।

আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স থেকে লুটপাট হয় দুই হাজার কোটি টাকা। শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে মর্টগেজ ছাড়াই ঋণ নিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য আরবি এন্টারপ্রাইজ, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, তামিম অ্যান্ড তালহা এন্টারপ্রাইজ, ক্রসরোড করপোরেশন, মেরিন ট্রাস্ট, নিউটেক, এমএসটি মেরিন, গ্রিন লাইন ডেভেলপমেন্ট, মেসার্স বর্ণসহ অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যার রেকর্ডপত্র দুদকের অনুসন্ধান টিমের কাছে রয়েছে। এ অনিয়মের সঙ্গে পি কে হালদার, ওইসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ প্রায় ৭৫ জনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। মূলত এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখতেই এই জিজ্ঞাসাবাদ।

প্রসঙ্গত, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল। দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে আরো একটি টিম তার আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। ওই টিম এরই মধ্যে ১৫টি মামলা করেছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া নামে ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা এবং ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করে দুদক।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। কোম্পানিগুলো হলো, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ জন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও তার সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক এবং সর্বশেষ পি কে'র বান্ধবী অবান্তিকা বড়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App