×

জাতীয়

রোগীর চাপে বেসামাল হাসপাতাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২১, ০৮:৪৫ এএম

রোগীর চাপে বেসামাল হাসপাতাল

ফাইল ছবি

১৭টি হাসপাতালের চারটিতে আইসিইউ নেই, আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই ৬টিতে ‘রোগী সংকুলান করতে পারছে না হাসপাতালগুলো’- খোদ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীই যখন এমন বক্তব্য দেন তখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক চিত্রটা কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। এ নিয়ে অনেক বারই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্কের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বা সাধারণ বেড কোনোটিই বাড়ানো যাচ্ছে না।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। গত দুই মাসের তুলনায় ৭ গুণ রোগী বেড়েছে। পরিস্থিতি উত্তরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা কাজ করছে, আমরা টিকার কাজ করছি, ফিল্ড হাসপাতাল আমরা বাড়িয়ে চলছি, বেড বাড়িয়ে চলছি, কিন্তু তারও একটা সীমা আছে। কতটুকু আর করা যেতে পারে? কোভিড রোগীদের জন্য ঢাকা শহরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার বেডের মধ্যে ১ হাজার বেডও খালি নেই, এ অবস্থায় আমরা আছি। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ আর নিতে পারছে না। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যে দেশে সংক্রমণ বাড়াবে এবং পরিস্থিতির অবনতি হবে- এমনটা অনেক আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণ শুরুর পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলায় আইসিইউ স্থাপন ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর করোনা সংক্রমণের গত দেড় বছরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সক্ষমতা বেড়েছে। তবে কিছুতেই যেন কুলিয়ে উঠা যাচ্ছে না।

রোগীর চাপ সামলাতে সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ ফিল্ড হাসপাতাল চালু হয়। এটিই দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। বর্তমানে ৩৫৭ বেড নিয়ে চালু হলেও ভবিষ্যতে এটিকে ১ হাজার বেডে উন্নীত করা হবে। এখানে রয়েছে ৪০টি আইসিইউ বেড। বাকি ৩১৭টি সাধারণ বেড হলেও প্রতিটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন যুক্ত থাকায় রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া রাজধানীর ৪টি স্থানে করোনা ফিল্ড হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার কিছুটা কমে এলেও হাসপাতালগুলোতে কিন্তু রোগীর চাপ কমছে না। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা দুশর কম। কিন্তু এর আগে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক। সংক্রমণ কমানো না গেলে একের পর এক হাসপাতাল বানিয়েও সুফল আসবে না। সংক্রমণ কমাতে হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।

কোভিড গাইডলাইন ও হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই করোনা রোগীদের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। সব করোনা রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হয় না। সরকার ইউনিয়ন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু কমিটি কাজ করে না। স্থানীয় পর্যায়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তারাও সহযোগিতা করে না। করোনা মোকাবিলা কোনো একক মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এটি একটি টিমওয়ার্ক। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক-নার্সরা টানা দেড় বছর সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত। দেশে ৪০ হাজার চিকিৎসক ও সমসংখ্যক নার্স বেকার রয়েছে। তাদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়নে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা সচল করা যেতে পারে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শনাক্তের সংখ্যা যত বাড়বে ততই জটিল রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এজন্য আইসিইউও লাগবে। তাই আইসিইউ বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। যে হারে রোগী বাড়ছে সেই হারে আইসিইউ বেড বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই রোগী যাতে না বাড়ে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এটি করতে পারলে রোগীর সংখ্যা কমবে। আর রোগীর সংখ্যা কমলে আইসিইউ চাহিদা কমে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকায় সরকারি হাসপাতাল আছে ১৭টি। এর মধ্যে আইসিইউ সুবিধা নেই ৪টিতে। এই চার হাসপাতাল হলো- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস এন্ড ইউরোজলজি, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস ও হাসপাতাল। আর গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য অনুযায়ী, আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই ৬টি হাসপাতালে। এই ছয় হাসপাতাল হলো- ৫০০ বেডের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট এবং ২৫০ বেডের টিবি হাসপাতাল শ্যামলী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে করোনা হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেড আছে ১৭ হাজার ১৮২টি। এর মধ্যে বেড ফাঁকা আছে ৭ হাজার ৬৯৫টি। আইসিইউ ১ হাজার ৩৩২টি বেডের মধ্যে ফাঁকা আছে ২৭৩টি। এইচডিইউ বেড আছে ৮৮৭টি। এর মধ্যে ফাঁকা আছে ১৯৫টি। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ১ হাজার ৯৩১টি, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ২ হাজার ১৯৫টি এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২৯ হাজার ৫১টি। কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা আছে ১১২টি হাসপাতালে। এখনো কয়েকটি হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App