×

জাতীয়

অভিভাবক হারানোর ৪৬তম বছর আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২১, ১০:৪৬ পিএম

আজ রবিবার। শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন। জাতীয় শোক দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিন জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ দিনে বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্ক লেপন করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা আর ক্ষমতালিপ্সু কতিপয় রাজনীতিক। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকলেও সেদিন ঘাতকচক্রের হাত থেকে রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধু পরিবারের নারী-শিশুরাও। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আরো প্রাণ হারান তার সহধর্মিণী, তিন ছেলেসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে ১৫ আগস্টে শাহাদতবরণকারী জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিনটি পালনে সারাদেশে আজ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আজ সরকারি ছুটি। আজ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ও ঢাকায় ৩২ নম্বরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে পুরো জাতি। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে। জাতির পিতা ও তার পরিবারবর্গের নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শুরু হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দীর্ঘ ৩৪ বছরেরও বেশি সময় পর সেই কলঙ্ক থেকে জাতির দায়মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চ‚ড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। এর মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য ও তমসাচ্ছন্ন অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালির বিজয়ের অভিযাত্রাও আরেক ধাপ এগিয়েছে। বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

সরকার যথাযথ মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশ ও প্রবাসে জাতীয় শোক দিবস পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ, সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক অনার গার্ড এবং মোনাজাত করা হবে। ১৫ আগস্টে শাহাদতবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সদস্য ও অন্য শহীদদের কবরে (ঢাকার বনানীর কবরস্থানে) সকাল সাড়ে ৭টায় পুষ্পস্তবক ও ফুলের পাপড়ি অর্পণ এবং দোয়া ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুষ্পস্তবক অর্পণ, সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক গার্ড অব অনার এবং মোনাজাত ও বিশেষ দোয়া মাহফিল রয়েছে।

সারাদেশের মসজিদগুলোতে বাদ জোহর বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে দিবসটির অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। পোস্টার মুদ্রণ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/গ্রোথ সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাতীয় শোক দিবসের পোস্টার সাঁটানো ও এলইডি বোর্ডের মাধ্যমে প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সব মোবাইল গ্রাহককে খুদে বার্তা দেবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিশু একাডেমি বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের অনুরোধের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক বক্তৃতার আয়োজন করবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, তথ্য ও সম্প্রচার, ধর্ম, মুক্তিযুদ্ধ, মহিলা ও শিশু, সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থা জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। জেলা-উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন এবং জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। জেলা-উপজেলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোতে সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত কর্মসূচিতে জেলা পরিষদ ও পৌরসভার অংশ নেয়াসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ যথাযোগ্য মর্যাদায় স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : সূর্যোদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ৮টায় জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে দলটি। এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনসহ মহানগরের প্রতিটি শাখার নেতাকর্মীরা যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এবং গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। দুপুরে অস্বচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষদের খাদ্য বিতরণ করা হবে। বাদ আছর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App