×

জাতীয়

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২১, ০৮:৩৭ এএম

প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন শঙ্কা নিয়ে হাজির হচ্ছে কোভিড-১৯। ভাইরাসটির নতুন নতুন ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) নতুন সব সমস্যার মুখোমুখি করছে গবেষক ও বিজ্ঞানীদের। যদিও ‘ফাস্ট জেনারেশন’ তবুও অতি কম সময়ের মধ্যে টিকা আবিষ্কারের ফলে অনেকেই ভেবেছিলেন এই বুঝি পৃথিবী থেকে করোনার বিদায় ঘণ্টা বাজল; কিন্তু না, এখানেই শেষ নয়। ধরন পাল্টে আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে সংক্রমণের ব্যাপকতা বাড়িয়ে চলছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। মহামারির শুরুর দিকে অনেকেই ধারণা করেছিলেন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা সময় হার্ড ইমিউনিটি (গণপ্রতিরোধ ক্ষমতা) তৈরি হবে। অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষের দেহে তখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে। তখন আর সংক্রমণ বাড়বে না। করোনা মহামারির যুগ শেষ হবে। কিন্তু সেই ধারণাও বদলে গেছে। করোনা থেকে দ্রুত মুক্তির যে আশা ছিল- সেটুকুও যেন মিলিয়ে গেছে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেডিয়াট্রিক্সের অন্তর্গত টিকা গবেষণার একদল বিশেষজ্ঞ বলছেন, কোভিড-১৯ ছড়ানো রুখতে বর্তমান টিকাগুলো ব্যর্থ। যা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। হার্ড ইমিউনিটির বিষয়টিও এখন কাল্পনিক তত্ত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওই দলের প্রধান অধ্যাপক এন্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, আসলে সমস্যা হচ্ছে, এই ভাইরাসটি হাম নয়। কোনো জনগোষ্ঠীর ৯৫ শতাংশ বাসিন্দাকে যদি হামের টিকা দেয়া হয়, ভাইরাস আর ছড়াতে পারবে না। ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট কিন্তু এর পরও ছড়াবে। যারা টিকা পেয়েছে, তাদের শরীরেও ছড়াবে। তার মানে করোনাকে থামানোর পথ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ড ইমিউনিটি হবে কিনা তা নির্ভর করে ভাইরাসের প্রকৃতির ওপর। করোনা হলে বা টিকা নিলে কত মাস বা বছর পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে তা এখনো অনিশ্চিত। এদিকে করোনা ভাইরাসের ধরন প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই এখনই হার্ড ইউমিনিটির আশা করাটা সঠিক নয়। তবে আগামী দিনগুলোতে যখন ‘সেকেন্ড জেনারেশন’ টিকা আসবে। আরো বিস্তর গবেষণা হবে। তখন হয়তো এই ভাইরাসটিকে পরাজিত

করার সক্ষমতাও তৈরি হবে। তবে বর্তমান চলমান টিকা কার্যক্রমের সুফল কিছুটা হলেও মিলবে বলে তারা মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, শঙ্কার পাশাপাশি কিছু সম্ভাবনার ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে। যেমন যশোরে সংক্রমণ কমার ক্ষেত্রে গবেষণার যে ফলাফল এসেছে, সেটি অবশ্যই ইতিবাচক। হার্ড ইমিউনিটি তৈরি না হলেও প্রাকৃতিকভাবে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এর সুফল কিছুটা হলেও পড়বে।

সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার যশোরের তিনটি উপজেলার ৬টি অঞ্চলের প্রায় ৪০০ মানুষের ওপর একটি গবেষণা করে। গবেষণায়, প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ‘এন্টিবডি’ পাওয়া গেছে। এর অর্থ হলো, ৩৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত বা এ ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

মানুষের শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে র‌্যাপিড এন্টিবডি পরীক্ষা পদ্ধতিতে এই গবেষণা চালানো হয়। করোনার ডেল্টা ধরনের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধের প্রকৃত হার জানতেই এ ধরনের গবেষণার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন গবেষণার ফলাফল কিছুটা হলেও আশার আলো জাগিয়েছে।

অন্যসব সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে যা হয়েছে- করোনা ভাইরাসের বেলায় তেমনটা পৃথিবীর কোথাও হয়নি বলে মন্তব্য করেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু এখনো জানার বাকি আছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এখন অনেকেই লক্ষণ ও উপসর্গ ছাড়াই সংক্রমিত হচ্ছেন। যাদের মধ্যে মৃদু লক্ষণ ছিল তাদের মধ্যে হার্ড ইউমিনিটি তৈরি হয়নি। টিকা নেয়ার পরও তা তৈরি হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হার্ড ইউমিনিটি তৈরি হলে তা কিন্তু হতো না। তবে বর্তমানে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকাগুলো এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে না পারলেও কোভিডের অসুস্থতা গুরুতর হয়ে ওঠা কার্যকরভাবে ঠেকিয়ে দিতে পারছে। তাতে মৃত্যু ঝুঁকিও কমে আসার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশিষ্ট এই রোগতত্ত্ববিদ আরো বলেন, বর্তমানে যে টিকা দেয়া হচ্ছে সেটি ‘ফাস্ট জেনারেশনের’ টিকা। টিকার যে নতুন নতুন সংস্করণ হবে তাতে নিশ্চয়ই করোনাকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে। টিকার মাধ্যমেই করোনার হার্ড ইউমিনিটি হতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App