×

জাতীয়

ডেঙ্গুর লক্ষণে ২৫ মৃত্যুর ঘোষণা ‘নেই’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২১, ০৮:৪২ এএম

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদা নাসরিন বাবলি মারা যান। ১৩ জুলাই রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রথম আলোর সম্পাদনা সহকারী আবুল কালাম আজাদ বিপ্লব। ৪ আগস্ট স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এটিএন নিউজের এডিটর (অ্যাসাইনমেন্ট) সারওয়ার হোসেনের ছেলে শাবাব সারোয়ার (১০)।

চিকিৎসক এবং স্বজনরা বলছেন, তাদের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে ২৫ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘোষণা আসেনি। যা নিয়ে জনমনে তো বটেই বিশেষজ্ঞ মহলেও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ আছে, মহামারি কিংবা দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা কম দেখানোর একটা চেষ্টা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বরাবরই দেখা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২২টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে। তবে আইইডিসিআর এখনো পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর পর্যালোচনা সমাপ্ত করেনি এবং কোনো মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেনি। সম্প্রতি অনলাইনে স্বাস্থ্য বুলেটিনে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু সন্দেহে যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে কাগজপত্র আইইডিসিআরে দেয়া হয়। তারা কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর নিশ্চিত করে। এ কারণে একটু সময় লাগে। এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না। কারণ ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের অন্য অনেক রোগও থাকতে পারে। তাই আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখি, আসলেই কোনো রোগে তার মৃত্যু হয়েছে। এই কারণে একটু সময় লাগে।

আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে কিনা- সেই সন্দেহ যখন থেকে যায়; তখনই ওই ব্যক্তির তথ্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইইডিসিআরের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে ৬ থেকে ৭ জন অধ্যাপক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ (ডেথ রিভিউ কমিটি) সেই তথ্য নিয়ে মৃত্যুর কারণ যাচাই করার পর ডেঙ্গুর ব্যাপারে নিশ্চিত হলে কেবল তখনই তা তালিকাভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটিকে তিন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। প্রথমত মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র এবং দ্বিতীয়ত তার রক্তের নমুনা হাসপাতালে থাকলে তা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া রোগীর ইতিহাস বা বিস্তারিত তথ্য অনেক সময় থাকে না। সেই রোগীর একাধিক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নেয়া হয়। এই তিন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করার পরই ডেথ রিভিউ কমিটি সেগুলো বিশ্লেষণ করেন। এরপরই তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, মৃত্যুটা ডেঙ্গুর কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, মৃত্যুর তথ্য নিয়ে এখানে এলে লুকোচুরি করার কিছু নেই। ২০১৯ সালে যখন ডেঙ্গুর ব্যাপকতা দেখা দিয়েছিল; তখন আইইডিসিআরে ৬/৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে ডেথ রিভিউ কমিটি নামে একটি কমিটি করা হয়েছিল। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাঠানো মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই করে নিশ্চিত হলে তবেই সেই মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে ঘোষণা করা হতো। তখন কিটসহ নানা সংকট থাকায় অনেকেই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে পারতেন না। ফলে সেটির জন্য আইইডিসিআরের কাছে তথ্য পাঠানো হতো।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরীক্ষার সুবিধা এখন অনেক হাসপাতালেই আছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা এন্টিজেন পরীক্ষা করে যখন রোগীর দেহে ডেঙ্গুর উপস্থিতি নিশ্চিত হতে পারছেন তখন সেই তথ্য আইইডিসিআরে পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা একজন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক যখন পরীক্ষায় নিশ্চিত হচ্ছেন এবং ঘোষণা দিচ্ছেন- রোগীর মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে; তখন সেই তথ্যটিই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে। এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকা উচিত নয়। ডা. এস এম আলমগীর জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলেছেন। আশা করা হচ্ছে আগামী দুই একদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০০ সালে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুজ¦র দেখা দেয়। সেই বছরে ৯৩ জন মারা গেছে ডেঙ্গুতে। এরপর মৃতের সংখ্যা ধীরে ধীরে প্রায় শূন্যে নেমে আসে। ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামুলকভাবে কম ছিল। ২০১৫ সাল থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ২০১৭ সালে ৮ জন, ২০১৮ সালে ২৬ জন ডেঙ্গুতে মারা যায়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে পৌঁছায়। ওই বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১৫৬ জনের। তবে আইইডিসিআরের কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ২৬৬টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়। ২০২০ সালে ডেঙ্গুর বিস্তার অনেকটাই কম ছিল। সে বছর ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন। তবে আইইডিসিআরের কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ১২টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App