আদালতে যা বললেন পরী মনির আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২১, ০৫:২১ পিএম
রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার দ্বিতীয় দফার দুই দিনের রিমান্ড শেষে আলোচিত চিত্রনায়িকা পরী মণি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুর জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডলের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, আসামির বাসা থেকে ভয়ঙ্কর এলএসডি, আইস মাদকসহ প্রচুর দেশী-বিদেশী মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তার বাসায় যে খালি বোতল ছিল সেগুলোতে মদ ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসায় পৌঁছানোর পর আধা ঘন্টা পর তিনি দরজা খুলেছেন। সেই সময়ের মধ্যেই তিনি মদগুলো ঢেলে ফেলে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নায়িকা তো আরও আছে। কই তাদের তো পুলিশ ধরেনি। তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তিনি আসলে নায়িকার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের অনেক শিল্পপতি কোটিপতি ও তরুণ সমাজকে ডিজে পার্টির মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন জামিন দিলে আসামি পলায়ন করতে পারেন। তদন্ত বিঘ্নিত হতে পারে। তাই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করছি।
অপরদিকে এদিন পরী মনির পক্ষে আইনজীবী মজিবুর রহমান, নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে মজিবুর রহমান বলেন, র্যাব আইনগতভাবে অপারেশন করেন নাই। তারা আসামিকে গ্রেপ্তার করে উত্তরাতে তাদের অফিসে নিয়ে গেছেন। তাকে থানায় হস্তান্তর না করে নিজেদের কাছে প্রায় ২৪ ঘন্টা রাখার পর তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়। অথচ এতো ঘন্টা আটক না করে থানায় বা কোর্টে প্রেরণ করতে পারতেন। এটি দ্যা আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ এর ৬ এবং ৬ এ ধারায় লঙ্ঘন করে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
জামিনের আবেদন করে এসময় তিনি বলেন, পরী মনি কোনো খুনের আসামি নয়। কোন মাদকের ডিলারও নয়। তাহলে তাকে কেনো এতঘন্টা আটক রাখা হলো? এছাড়া তিনি একজন প্যানিক অ্যাটাকের রোগী। দীর্ঘ সময় পুলিশ কাস্টডিতে থেকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তার জামিন প্রয়োজন।
পলায়নের অভিযোগে এ আইনজীবী বলেন, দরকার হলে পরী মনির পাসপোর্ট জমা নিন। তবুও জামিন দিন। প্রীতিলতা সিনেমার জন্য পরীমণি চুক্তিবদ্ধ। এ সিনেমা সরকারী অনুদানে নির্মীত হচ্ছে। সামনে তার সুটিং আছে।তাই তার জামিন প্রয়োজন। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পরীমণি ও দীপুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় প্রথম দফায় চারদিন ও ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় পরী মনি ও দিপুর দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের পর পরীমণি আদালত থেকে বেরোনোর সময় চিৎকার করে সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, 'আমাকে ইচ্ছা করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আর মিডিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা তদন্ত করেন।'
উল্লেখ্য, বনানী থানায় পরীমণি ও তার সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮- এর ৩৬ (১) এর সারণি ২৪(খ)/৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক)/৪২(১)/৪১ ধারায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে র্যাব।