×

সারাদেশ

হিল্লা বিয়ে না করায় চার মাস ধরে একঘরে এক দম্পতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২১, ১০:২১ এএম

হিল্লা বিয়ে না করায় চার মাস ধরে একঘরে এক দম্পতি

ছবি: সংগৃহীত

মৌখিক তিন তালাকের জেরে পঞ্চগড়ে এক দম্পতিকে চার মাস ধরে একঘরে করে রেখেছেন সমাজপতিরা। হিল্লা বিয়ে না করায় ওই দম্পতিকে সমাজচ্যুত করে একঘরে রাখেন তারা। জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছলিমনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছলিমনগর গ্রামের ওই দম্পতি প্রায় ৩৫ বছর ধরে সংসার করে আসছেন। তাদের চার সন্তান ও নাতি-নাতনি আছে। দরিদ্র ওই পরিবারের টানাটানির সংসার। চার মাস আগে ঝগড়া-বিবাদের সময় স্ত্রীকে তিন তালাক দেন স্বামী।

বিষয়টি জানাজানি হলে ছলিমনগর জামে মসজিদের সভাপতি নাসিরউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর ইসলাম, সদস্য শাহজাহান আলী, ঈমান আলী, হাফেজ মোস্তফা কামাল, জুলহাস, গফুর আজাদ, সুরমান মেম্বার, আমির চাঁদ, আব্দুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন সমাজপতি বৈঠক করেন। বৈঠকে সমাজপতিরা অন্য গ্রাম থেকে মুফতি আনোয়ার হোসাইন ও হাফেজ মোস্তফাকে আনেন। তারা ফতোয়া দেন, স্ত্রীকে হিল্লা বিয়ে দেওয়ার পর আবার বিয়ে করে সংসার করার। হিল্লা বিয়ে দেওয়ার আগে সংসার এবং একসঙ্গে বসবাস করতে পারবেন না ওই দম্পতি।

এদিকে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত না মেনে খানসামা উপজেলার এক মাওলানার বাসায় গিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন দম্পতি। এতে সমাজপতিরা ক্ষুব্ধ হন। পরে ছলিমনগর জামে মসজিদের সব সদস্যকে ওই দম্পতি ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেন সমাজপতিরা। সেই সঙ্গে তাদের বাড়িতে সমাজের অন্যদের যাতায়াত, জিনিসপত্র আদান-প্রদান ও হাটবাজারে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। এ অবস্থায় গ্রামের দোকানিরা ওই দম্পতির পরিবারের সদস্যদের কাছে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেন। সমাজপতিদের চাপে চার মাস ধরে ঘরবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

সমাজপতিরা ওই দম্পতির সঙ্গে তাদের ভাইবোন, ছেলেমেয়ে এমনকি পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনের দেখা ও কথা বলা নিষিদ্ধ করেছেন। তাদের সঙ্গে যারা যোগাযোগ করবে তাদেরও একঘরে করা হবে এবং ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে বলে হুমকি দেন।

এ ঘটনায় ওই দম্পতি সোমবার দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ১০ জন সমাজপতির নামে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লক্ষ্মণ চন্দ্র রায় বলেন, ওই দম্পতির সংসারে ঝগড়া বিবাদ হয়ে আসছিল। চার মাস আগে স্ত্রীকে তালাক দেন স্বামী। এরপর দম্পতি আবার বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। কিন্তু, হিল্লা বিয়ে না করায় দুই মাস ধরে তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। পরে নাসিরউদ্দিন, মোমিনুর রহমান, ঈমান আলী, গফুর আজাদ, আমির চাঁদ, শাহজাহান, আব্দুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন সমাজপতিকে নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু ইসলামি আইনের কথা বলে তারা হিল্লা বিয়ের পক্ষে মতামত দেন। অনুরোধ করলেও বিষয়টি সমাধান করেননি তারা। এ জন্য কোনও পদক্ষেপ নিতে পারিনি।

ছলিমনগর জামে মসজিদের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান জানান, মসজিদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সমাজের লোকজনের উপস্থিতিতে মুফতি আনোয়ার হোসাইন, হাফেজ মোস্তফা কামাল ওই দম্পতিকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে সমাজের লোকজনের সঙ্গে তাদের চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়।

তারা বলেন, বৈঠকে মুফতি আনোয়ার হোসাইন ও হাফেজ মোস্তফা কামাল এই বলে ফতোয়া দিয়েছেন, যেহেতু মুখ থেকে তালাকের কথা বলেছে, তার মানে তালাক হয়ে গেছে। কাজেই ওই নারীকে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। তার মুখ দেখা যাবে না। বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে কিংবা সমাজচ্যুত করতে হবে। সমাজের লোকজন তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতে পারবে না।

ওই দম্পতি জানান, বিষয়টি নিয়ে সমাজপতিরা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ বৈঠকে সমাজপতিরা তাদের আলাদা করেন। ছেলেমেয়ের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেয়নি। ছেলেমেয়েকে বলা হয়েছিল, মা-বাবার সঙ্গে দেখা কিংবা কথা বললে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। পুরো পরিবারকে বিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত করে ফেলেছেন সমাজপতিরা।

দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. প্রত্যয় হাসান বলেন, ওই দম্পতির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেছি। বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিয়ে ওই গ্রামে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আমি বৈঠকে উপস্থিত থাকবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App